হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের মুল্যবৃদ্ধিতে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে প্রভাব পড়েছে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরসহ আন্তঃজেলা পরিবহন যাত্রীসেবায়। শনিবার দুপুর দেড়টার পর পুন:নির্ধারিত অস্থায়ী ভাড়ায় ভোমরা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ট্রাক ছেড়ে গেছে। দূরপাল্লা ও জেলার অভ্যন্তরীণ রুটের বাসে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে, বাস স্বল্পতা ও বেশি ভাড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০টি ট্রাক ভোমরা বন্দর থেকে ভারতীয় আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এছাড়া ঢাকা, বগুড়া ও চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্য নিয়ে কিছু ট্রাক ভোমরা স্থলবন্দরে আসে। তবে শুক্রবার রাতে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় শনিবার দুপুর পর্যন্ত কোন ট্রাক ভোমরা স্থলবন্দরে আসেনি। একইভাবে কোন ট্রাক পণ্য নিয়ে ভোমরা স্থলবন্দর ছেড়ে যায়নি। দুপুরের পরে দূরত্ব অনুযায়ি বাড়তি ভাড়ায় ট্রাক চলাচল শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে ভোমরা স্থলবন্দর ট্রান্সপোট সমবায় সমিতির সভাপতি ফিরোজ হোসেন বলেন,ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে আগের ভাড়ার সাথে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা যোগ করে ট্রাকের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। বিকেলে সরকারি হার জানলে সেই অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করা হবে।
ভোমরা স্থলবন্দরের পণ্য পরিবহনের সঙ্গে জড়িত ট্রাকচালক আব্দুর রহিম জানান, ভোমরা থেকে ঢাকায় গড়পড়তায় ট্রাক ভাড়া ছিল ২০ হাজার টাকা। জ¦ালানী তেলের মুল্যবৃদ্ধির পর শনিবার সেই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২২ হাজার টাকা। অন্যদিকে ভোমরা থেকে সিলেটে ট্রাক ভাড়া ছিল ৩০ হাজার টাকা। শনিবার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩৩ হাজার টাকা।
এদিকে, অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নিয়ে গণপরিবহন চলছে। এনিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা গেছে।
সাতক্ষীরা থেকে খুলনার যাত্রী শহরের কাটিয়ার আবু মুছা বলেন, ১০০ টাকার ভাড়া ১৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। একই ভাবে সাতক্ষীরা থেকে কালিগঞ্জে যাতায়াতকারি শহরের পলাশপোলের সাকিবার রহমান জানান, ৬০ টাকার ভাড়া শনিবার নেওয়া হয়েছে ৮০ টাকা।
শহরের মেহেদীবাড়ের সিরাজুল ইসলাম বলেন, শনিবার সকালে আরিচা হয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য তার শ্যালক ও ছেলেসহ চার জনের জন্য টিকিট প্রতি ৫৫০ টাকা নিয়ে শুক্রবার সকালে টিকিট নেওয়া হয়েছিল রোজিনা পরিবহনের কাউন্টার থেকে। শনিবার সকালে কাউন্টার খোলার পরপরই যাত্রী নেই বলে তাদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাধ্য হয়ে অন্য একটি পরিবহনে টিকিট প্রতি ১৫০ টাকা বেশি দিয়ে তাদেরকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এসপি গোল্ডেন লাইনের সুপারভাইজার সম্রাট হোসেন শনিবার সকালে ঢাকায় যাওয়ার প্রাক্কাকালে সাংবাদিকদের জানান, তেলের দাম বাড়লেও আগে থেকে টিকিট দেওয়ায় পূর্বের দামেই তাদেরকে যেতে হচ্ছে। তবে রবিবার থেকে ভাড়া নতুন করে নির্ধারণ করা হবে বলে তিনি জেনেছেন।
শহরের লাবনী মোড় এলাকাকার এ বি খান প্রেট্রোল পাম্পের ব্যবস্থাপর আব্দুর রউফ জানান, শুক্রবার রাতে তেলের দাম বাড়ার খবর পেয়ে পাম্পের মজুতকৃত সকল তেল বিক্রি হয়ে যায়। শনিবার সকালে নতুন তেল আসার পর নতুন বর্ধিত দামে তারা তেল বিক্রি করছেন।
সাতক্ষীরা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি ছাইফুল করিম সাবু বলেন, সাতক্ষীরা-খুলনা ও সাতক্ষীরা-যশোর রুটসহ জেলার সকল রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে সকালের দিকে ভাড়া নিয়ে দ্বিধা দ্বন্ধে গণপরিবহনের কিছুটা স্বল্পতা ছিল।
ভাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যশোর ও খুলনায় ২০/৩০ টাকা বাড়তি ভাড়া নিয়ে বাস চলাচল করেছে। ঢাকাগামী পরিবহন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি ভাড়ায় চলাচল করছে বলে পরিবহন সূত্রে জানা গেছে।