সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানাধীন দাতপুর গ্রামের আজাহারুল ইসলামকে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী পদে চাকরি পাইয়ে দিতে ব্যর্থ হওয়ায় টাকা ফেরতের পরিবর্তে দেওয়া ১০ লাখ টাকা চেক ডিজঅনারের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী ১৬৭ নং ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইষ্টম দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে তালা থানার পুলিশ তাকে ফতেপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃত ইষ্টম দাস তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের নগেন্দ্রনাথ দাসের ছেলে।
সরেজমিনে বুধবার দুপুরে পাটকেলঘাটা থানাধীন দাতপুর গ্রামে গেলে রফিকুল ইসলামের ছেলে আজাহারুল ইসলাম জানান, পার্শ্ববর্তী সেনপুর গ্রামের চাচা রহিমের সঙ্গে পরিচয় সূত্রে ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তাদের বাড়িতে আসেন ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৎকালিন সহকারি শিক্ষক ইষ্টম কুমার দাস। একপর্যায়ে পরবর্তীতে কয়েকবার মোবাইল ফোনে কথা হয় ইষ্টম দাসের। কথা বলার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। দাতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী পদে চাকুরি পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিয়ে তার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি। তিন মাসের মধ্যে ওই পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার শর্তে ২০ মার্চ তাদের বাড়িতে এসে কয়েকজনের উপস্থিতিতে ১০ লাখ টাকা নিয়ে যান ইষ্টম দাস। তিন মাস হয়ে যাওয়ার পর চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরৎ চান তিনি(আজাহারুল)। একপর্যায়ে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি নাগাদ ইষ্টম দাস তাকে সোনালী ব্যাংকের তালা শাখার ১০ লাখ টাকার একটি চেক দেন। হিসাব নম্বরে টাকা না থাকায় তিনি বাদি হয়ে ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর সাতক্ষীরার আমলী আদালত -৩ এ একটি চেক ডিজঅনারের মামলা করে ইষ্টম দাসের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে জামিন পেয়েও ২০২৩ সালের শেষের দিকে আদালতে না আসায় আদালত ইষ্টম দাসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। বেগতিক দেখে ইষ্টম দাস, তার রুপবতী স্ত্রী অঞ্জলী দাস, একই গ্রামের প্রদীপ দাসের ছেলে তাদের সহযোগী আকাশ দাস ডাঙা নলতা গ্রামের তার শ্বশুর আব্দুর রউফের কাছে যান। সেখানে টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আকাশ দাস মামলা তুলে নিতে জামাতা আজাহারুলকে বলার জন্য তাকে সুপারিশ করেন। একপর্যায়ে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি আদালতের কাঠগড়ায় অনুপস্থিত থাকাকালিন জেলা যুগ্ম জজ প্রথম আদালতের বিচারক বেলাল হোসেন তাকে ওই টাকা ফেরৎ দেওয়ার নির্দেশসহ দুই মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন। এরপর থেকে ইষ্টম দাস গ্রেপ্তারি এড়াতে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপান করতেন। আর তাদের বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতারণার টাকা পরিশোধের নামে কান্নাকাটি করতে আকাশ দাস মটর সাইকেলে করে অঞ্জলীকে বহন করে বেড়াতেন। তবে মঙ্গলবার রাতে ইষ্টম দাস গ্রেপ্তার হওয়ার পর আকাশ দাসের মা নবিতা দাস থানায় গেলেও মক্ষীরানী অঞ্জলী স্বামীকে দেখতে যাননি। তবে আকাশ দাসের ভাই টেকনাফ থানার আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশে কর্মরত প্রকাশ দাস তালা থানা ও চয়ারম্যান প্রণব ঘোষকে ফোন করে ইষ্টম দাসকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
অপরদিকে সেনপুর গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, ২০২০ সালে ব্যাংকে লেনদেন করার সময় তার সঙ্গে ইষ্টমের পরিচয় ঘটে। একপর্যায়ে তার প্রতিবেশি আপিল হোসেনের ছেলে ইমদাদুলকে পরিসংখ্যান বিভাগে চাকরি পাইয়ের দেওয়ার কথা বলে ২০২১ সালের প্রথম দিকে সাড়ে আট লাখ টাকা নেন ইষ্টম দাস। চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরৎ চাইলে আট লাখ চেক দেন ইষ্টম দাস। হিসাব নম্বরে টাকা না থাকায় ২০২১ সালের আগষ্ট মাসে আদালতে ইষ্টম দাসের বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের মামলা করেন। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করায় অঞ্জলী দাস ও তার সহযোগী একই গ্রাম ফতেপুরের আকাশ দাস তাদের সাত লাখ টাকা পরিশোধ করে হাতে ও পায়ে ধরে মামলা প্রত্যাহার কারিয়ে নেন।