পারিবারিক চাপে কখনো আমার এ দেশটাতে সেভাবে করে ঘুরে যেতে পারিনি, ঘুরে দেখতে পারিনি আজব শহরটা। ভেবে ছিলাম প্রফোসনাল হয়ে প্রথমে দেশটা ঘুরবো। তারপর নিজের একটা বিজনেস দাঁড় করাবো। তারপর না হয় জীবনের ভার বুঝে বিয়ে করবো। এখন আমি চাইলেও সেব কোনটাই করতে পাচ্ছি না।
বর্তমানে অনেক সময় হেলায় ফেলায় চলে গেল, কিন্তু পেলাম না আমি আমার প্রফোসনাল লাইভ। আর এক করোনা মহামারী জীবনটাকে গ্রাস করে খাওয়ার মত করে রাখলো। এরচেয়ে বড় সামাজিক যে মহামারী জীবনকে দিন দিন বিষিয়ে দিচ্ছে তা হলো তথাকথিত সামাজিক অনুষ্ঠান “বিয়ে”। ভুল বুঝবেন না, বিয়ে নিয়ে আমার বিরোধ নেই, তবে আমাদের সমাজের সংজ্ঞায়িত বিয়ে নিয়েই আমার বিরোধ এবং এই সামাজিক রীতির শেষ চাই।
আমার জন্ম ছোট একটা মহল্লায় এবং মোটামুটি রক্ষণশীল পরিবারে হলেও আমি জীবনে অনেক বড় স্বপ্ন দেখি। আজ মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখাটাই আজন্ম পাপ!এখন মনে হয় স্বপ্ন দেখতে নেই এই সমাজে। যে বয়সে স্বপ্ন দেখতাম পাখির ডানার মত আকাশে উড়বো , সেই সব আজ আর কিছুই হলনা। এখন বুঝতে পারছি এখন এই বয়সে বাবা মায়ের জন্য এতো চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।বেকার হয়ে ঘুরে বেড়ানো দেখলো সমাজের মানুষের মাথায় যত চিন্তা আর আক্ষেপ শুধুই বিয়ে নিয়ে। বিয়ে দিলেই সব সমাধান। আমাদের সমাজের একটা বদ্ধমূল ধারণা হলো ছেলে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়ানো মানে বিয়ে দিলেই সে প্রতিষ্ঠিত লাভ করতে পারে অনেক পিতা মাতার তা ধারণা। এই বিষয় বেশিরভাগ জীবন নির্ধারণ করে আমাদের পরিবারগুলো। তারা কখনো মানতেই চায় না আমাদের নিজস্ব স্বাধীনতা আছে, স্বপ্ন আছে এবং আমাদেরও কেরিয়ার আছে। জীবন নিয়ে ভাবতে গিয়ে অনেক বছর পার করে ফেলেছি, জানিনা এরপরো প্রোফোসনাল জীবন আসবে কিনা । এখন মনে হচ্ছে ২৫ বছর বয়সে বিয়ে করাটা মনে হয় উত্তম সময় ছিলো।বর্তমান সময়ে ছেলে মানুষের প্রতিষ্ঠিত না হওয়া বড় অপরাধ ! তা না হলে এসমাজে চলবে কি করে?
বর্তমান এমন সময় দাঁড়িয়েছে ছেলে চাকুরী না করলে কখনো পরিবারকে জিজ্ঞেস করেনা আপনার ছেলেকে কখন বিয়ে দিবেন। অথচ মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স, মাস্টার্স শেষ করুক, চাকুরী করুক অথবা এইচএসসি ফেল করুক। যাই করুক, মেয়েদের নিয়ে তেমন একটাই চিন্তা নাই , বিয়ে করে ঘর করুক একটা চাকুরী জীবি জামাইয়ের।
প্রচলিত সামাজিক বিয়ে এতো কঠিন ব্যাপার যে এই বিয়েটাই এখন মহামারী রূপ ধারণ করছে। সমাজ আর পরিবারের চোখে বেকার ছেলের জীবন মানেই বিয়ে, একবার বিয়ে হয়ে গেলে পিছনে তাকানোই যেন অপরাধ! আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, দূর্ভাগ্যবশত ভুল রিলেশনশিপে একবার ফেঁসে গেলেন তো জীবন শেষ। ডিভোর্স যেন এক কলঙ্কিত অধ্যায়। পরিবারগুলোও কেমন পর হয়ে যায়। বিয়ের পর বেকার ছেলের জীবন এমন হয়ে দাড়ায় নিজের জীবনটা যেন তালাহীন ঘরের দরজার মত । বেকার ছেলের বিয়ের পর বৌয়ের পছন্দ মত চলতে না পারলে শোশুড় শাশুড়ীর চিন্তা সীমা থাকে না। যেন বড় কোনো অপরাধ।
স্বাবলম্বী হয়ে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল, আমি নিশ্চিত আমার মতো হাজারো বেকার শিক্ষিত ছেলের ইচ্ছে একই। আমার ব্যর্থতা আমি কখনো একটা বিয়েকে জীবনের অবলম্বন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখি নি। এখনো অনেকে যে বয়সে বর সাজার স্বপ্ন দেখে আমি তখন একজন কর্মব্যস্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম।
লড়াই করি নি, তা নয়! সেই ১৮ বছর বয়স থেকেই লড়াই শুরু করেছি ব্যক্তিগত স্বাধীনতা অর্জন করার লক্ষ্যে। এখন অব্দি সেই স্বাধীনতা পেলাম না কোন অপরাধে। কতদিন আসলে এই সমাজের সাথে লড়াই করা যায়? একা একা লড়াই করা কঠিন আর সবচেয়ে বড় কঠিন কাজ হলো আপন মানুষগুলোর সাথে লড়াই করে যাওয়া। লড়াই ও স্যাক্রিফাইস করতে করতে এখন বড্ড ক্লান্ত লাগে, জীবনটা ভারি লাগে!
আমি বিয়ে করতে চাই, নিজের পছন্দের মানুষটাকে, নিজের সময়ে, নিজের জীবনের ভার বুঝে। সমাজের জন্য বিয়েটা আমার প্রতিষ্ঠা হতে পারে কিন্তু আমার কাছে বিয়েটা আমার জীবনের প্রয়োজনবোধে হবে। আমার জীবনসঙ্গীর সাথে আমি হাতে হাত রেখে পাড়ি দিতে চাই অসীম পথ, যেখানে কেউ কারো চেয়ে বড় হওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা না করে দু’জন দু’জনের জীবনের ভার ভাগ করে নেব।