সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় বৃুহষ্পতিবার বিএনপি নেতা অ্যাড. রুহুল কবীর রিজভির সাফাই সাক্ষী গ্রহণ ও যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম মোঃ হুমায়ুন কবীর বুধবার তিনজন সাফাই সাক্ষী গ্রহণ শেষে এ আদেশ দেন।
সাফাই সাক্ষী দাতারা হলেন কলারোয়া উপজেলার গদখালি গ্রামের রহিম বক্স মোড়লের ছেলে মোবারক আলী মোড়ল, সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া মাষ্টারপাড়ার শাহজাহান কবীরের ছেলে সিটি কলেজের প্রভাষক মনিরুজ্জামান মনি ও তালা মেলাবাজারের শেখ তয়জদ্দিনের ছেলে ও তালা মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষক শেখ শফিকুল ইসলাম। তারা যথাক্রমে আসামী গোলাম রসুল, তামিম আজাদ মেরিন ও রকিব মোল্লার পক্ষে সাক্ষী দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন বাংলাদেশের অতিরিক্ত এটর্ণি জেনারেল এসএম মুনীর, ডেপুটি এটর্ণি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জী, সহকারি এটর্ণি জেনারেল শাহীন মৃধা ও সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ, সাবেক পিপি ও বর্ষীয়ান আইনজীবী অ্যাড. এসএম হায়দার আলী, সাবেক পিপি অ্যাড. তপন কুমার দাস, সাবেক পিপি অ্যাড. ওসমান গনি, অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, অ্যাড. সাবেক অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. আজাহার হোসেন অ্যাড. শহীদুল ইসলাম পিন্টু, অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. সৈয়দ জিয়ুর রহমান, অ্যাড. রেজাউদ দৌলা সবুজ, অ্যাড. মোসস্তাফিজুর রহমান শাহনাজ প্রমুখ।
আসামীপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন বাংলাদেশ হাইকোর্টের অ্যাড.শাহানারা আক্তার বকুল, অ্যাড. আব্দুল মজিদ(২), অ্যাড. মিজানুর রহমান পিন্টু, অ্যাড কামরুজ্জামান ভুট্টো প্রমুখ।
মামলার কার্যক্রম শুরুতেই আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. আব্দুল মজিদ (২) আসামী সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবের পক্ষে অ্যাড. রুহুল কবীর রিজভি কয়াশা জনিত কারণে বিমান দেরীর কারণে সাফাই সাক্ষী দিতে আসতে পারেননি। তাই তাকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সময়ের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে বাংলাদেশেরে অতিরিক্ত এটর্ণি জেনারেল এসএম মুনীর, ডেপুটি এটর্ণি জেনারেল সুজিত কুমার চ্যাটার্জী বলেন, কুয়াশার কারণে অ্যাড. রুহুল কবীর রিজভি সাক্ষ্য দিতে আসতে পারেনি এটা ঠিক নয়।
তাছাড়া মঙ্গলবার আদালতে সাফাই সাক্ষীর আবেদনে রুহুল কবীর রিজভীর ঢাকার বাসার যে ঠিকানা আসামীপক্ষ দেখিয়েছিলেন বাস্তবে তা ঠিক নয়। কারণ তিনি থাকেন ঢাকা বিএনপি অফিসে। এ ছাড়া যাদেরকে সাতক্ষীরা ও আশপাশের সাক্ষী মেনেছিলেন আসামীপক্ষ তা দের বড় অংশই আসেননি। সুতরাং ঢাকা থেকে রুহুল কবীর রজিভির সাক্ষীর জন্য নতুন দিন ধার্য করা কালক্ষেপন করা ছাড়া কিছু নয়। আদালত উভয়পক্ষের শুনানী শেষে আসামীপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করে বৃহষ্পতিবার রুহুল কবীর রিজভির সাক্ষী গ্রহণ ও একইসাখে যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য করেন।
অতিরিক্ত এটর্ণি জেনারেল এসএম মুনীর বলেন, আসামীপক্ষের আবেদনকৃত ১৪ জনের মধ্যে আদালত অনুমোদিত ১১জনের সাফাই সাক্ষীর মধ্যে সিটি কলেজের অংকের শিক্ষক প্রভাষক প্রভাষ চদ্র্রু বৈরাগী হত্যা মামলাসহ কয়েকটি নাশকতা মামলার আসামী সিটি কলেজের প্রভাষক মনিরুজ্জামান মনিসহ তিনজন বুধবার সাক্ষী দিয়েছেন। আদালত সাাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবের পক্ষে অ্যাড. রুহুল কবীর রিজভীর সাফাই সাক্ষী ও একইসাথে যুক্তিতর্কের জন্য বৃহষ্পতিবার দিন দার্য করেছেন। বুধবার ৩৪ জন আসামী আদালতে হাজির ছিলো।
আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. আব্দুল মজিদ বলেন, রুহুল কবীর রিজভির সাফাই সাক্ষীর জন্য আদালত তাদের আবেদন মঞ্জুর করেছেন। সবমিলিয়ে আদালতে তারা ন্যয় বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদি।
প্রসঙ্গত,২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট সকাল ১০টার দিকে তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে দেখে মাগুরায় ফিরে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার উপর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও তৎকালিন সাংসদ হাবিবুল ইসলামের হাবিবের নির্দেশে বিএনপি ও যুবদলের নেতা কর্মীরা দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহি বাস রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালায়। হামলায় তৎকালিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান ও সাংবাদিকসহ কমপক্ষে এক ডজন দলীয় নেতা কর্মী আহত হয়।
এ ঘটনায় থানা মামলা না নেওয়ায় ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার মোসলেমউদ্দিন বাদি হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে আসামী করে সাতক্ষীরা নালিশী আদালত ‘ক’ অঞ্চলে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বিভিন্ন আদালত ঘুরে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করা হয়। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শফিকুর রহমান ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে এসটিসি ২০৭/১৫, এসটিসি ২০৮/১৫ দু’টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে বিচারাধীন।
২০১৭ সালের ৯ ও ২৩ আগষ্ট আসামীপক্ষ মামলা তিনটির কার্যক্রম হাইকোর্টে স্থগিত করেন। দীর্ঘ তিন বছর পর আসামী পক্ষের মিসকেস খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট পেনালকোর্ডের মামলাটি(টিআর-১৫১/১৫) ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেন। বিষ্ফোরক দ্রব্য আইন ও অস্ত্র আইনের মামলা দু’টি গত ১৭ ডিসেম্বর বিচারপতি মোস্তফাজামান ইসলাম ও বিচারপতি কামরুল ইসলাম মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আসামীপক্ষের স্থগিতাদেশ ও আপিল খারিজ করে দেয়। মামলায় ২০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ৪৯ জন আসামীর মধ্যে ১৬ জনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।