পুলিশ ও ভূমিদস্যুর হাতে নৃশংসভাবে নিহত কৃষকনেতা সাইফুল্লাহ লস্কারকে হত্যার ঘটনায় দোষীদের শাস্তি ও সাতক্ষীরার সীমান্ত নদী ইছামতীর সঙ্গে সংযোগ খাল ও নদীগুলোর পূণঃসংযোগসহ ১৩ দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি। শনিবার সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা শহরের পাকাপুলের উপর তারা এ কর্মসুচি পালন করে।
মানববন্ধন কর্মসুচি চলাকালে জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আনিসুর রহিমের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সংগঠণের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ, বাসদ নেতা নিত্যানদ সরকার, অ্যাড. আজাদ হোসেন বেলাল, জাসদ নেতা ওবায়দুস সুলতান বাবলু, মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, অ্যাড. আল মাহমুদ পলাশ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ২০০৯ সালের ৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাত তিনটার দিকে বাড়ি থেকে ডেকে বের করে পাশের একটি কাঠের ঘরে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির সহসভাপতি ও ভূমিহীন নেতা সাইফুল্লাহ লস্কারকে। এ ঘটনায় তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার বাদি হয়ে থানায় মামলা করলে মামলাটি পরবর্তীত সিআইডি তদন্তভার পায়। সিআইডি ওই মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করলে কয়েক মাস পর মামলাটি হিমাগারে চলে যায়। অভিযোগ ওঠে তৎকালিন পুলিশ সুপার এসএম মনিরজ্জামান নিজেকে বাঁচাত প্রভাব খাটিয়ে ওই মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করিয়েছেন। তারা দাবি করেন সাধারণ মানুষের জন্য সাইফুল্লাহ লস্কার হত্যা মামলা সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে পূণঃবিচার শুরু করতে হবে।
একইভাবে বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি সাতক্ষীরার বিভিন্ন নদ নদীর নাব্যতা সৃষ্টির লক্ষ্য ৪৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। ওই টাকার যথাযথ ব্যবহারের জন্য সীমান্ত নদী ইছামতী নদীর সঙ্গে বিভিন্ন সংযোগ খাল ও নদীর পূণঃসংযোগ করতে হবে। ভরাট হয়ে যাওয়া নদীর চর থেকে ইটভাটাসহ অবৈধ স্থাপনা অপসারন করতে হবে। ওইসব চরের জমির ইজারা বাতিল করতে হবে। নদ ও নদীর সঙ্গে সংযোগ খালগুলো সাবেক ম্যাপ অনুযায়ি খনন করতে হবে। খাল ও নদী খনন কাজ যথাযথ হচ্ছে কিনা তা দেখে নেওয়ার জন্য জনগন, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠণ করতে হবে।
এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ এ মানববন্ধনে পৃথক ব্যানার দিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর অপসারনের হুমকি, নারী বিদ্বেষী প্রচারনা, মুক্তিযুদ্ধ- সংবিধান-ইতিহাস- ঐতিহ্য- সংস্কৃতি – সভ্যতা বিরোধী কর্মকান্ড দমানোর দাবি জানান।
এদিক শনিবার সকালে কৃষকনেতা সাইফুললাহ লস্কারের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার মাজার এলাকায় এক স্মরনসভার আয়োজন করা হয়। কৃষক সংগ্রাম সমিতি, জাতীয় গনতান্ত্রিক ফ্রোন্ট এর উদ্যোগে আয়োজিত এই স্মরনসভায় সভাপতিত্ব করেন মোঃ আব্দুল হাকিম। এতে আরও বক্তব্য রাখেন ফ্রোন্টের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল হাই সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
তারা বলেন, ১১ বছর আগে সাইফুল্লাহ লস্কারকে রাতের আঁধারে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বাড়ির পাশেই হত্যা করা হয়। অথচ এখনও পর্যন্ত তার বিচার না হওয়ায় তারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর আগে তারা মাজারে ফুল দিয়ে কৃষকনেতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।