সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ভূমিহীনদের ইজারা নেওয়া সম্পত্তি জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করতে ভূমিহীনদের বাড়ি ঘর ভাংচুর এবং যুবলীগ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যেচারের প্রতিবাদ জানিয়েছে ভূমিহীনরা।
রবিবার সন্ধায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের আব্দুল মোতালেব মিলনায়তনে ভবানীপুর ভূমিহীনদের পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবাদ জানান ভূমিহীন নেতা মোঃ আপ্তাব উদ্দীন গাজী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি মোঃ আপ্তাব উদ্দীন গাজী, ইছাক গাজী, ছালেহা খাতুন, মমতাজসহ ৩৮জন অসহায় ভূমিহীন পরিবার শ্যামনগর উপজেলার সৈয়দালীপুর মৌজার খাস সম্পত্তি সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে ভোগদখল করে আসছিলাম। কিন্তু বাদঘাটা এলাকার আব্দুল গফুরের (গুলি গফুর) লোলুপ দৃষ্টি পড়ে আমাদের ইজারা নেওয়া সম্পত্তির উপর। ২০০৪ সালে জোট সরকারের আমলে ভূমিহীনদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে ও ভাংচুর করে উচ্ছেদ করে। এরপর গফুরের নির্দেশে তার ছেলে ভূমিদস্যু আলমগীর ও তার সহযোগী আতাউর হোসেন, আজিবর রহমান, ওজিয়ার রহমান, মাহবুবুর রহমান গং উক্ত সম্পত্তি থেকে অবৈধভাবে আমাদের উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে মারপিট, বাড়ি ঘর ভাংচুর, জ্বালিয়ে দেওয়াসহ নানা অত্যচার করতে থাকে। তিনি বলেন, ২০০৪ সালে উক্ত সম্পত্তি ইজারা নেয়ার পর গুলি গফুর সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আদালতে মিস আপলী ০১/০৪ দায়ের করেন। পরবর্তীতে খুলনা অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আদালতে আপিল করা হয়। আপিলটি না মঞ্জুর হয়। উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে ন্যায় বিচারের জন্য ভূমি আপিল বোর্ড ঢাকা সদস্য ১ এর আদালতে মামলা দাখিল করি। ভূমি আপিল বোর্ডের সদস্য আমাদের আপিল মঞ্জুর করেন এবং গোপনকৃত সমস্ত সম্পত্তি খাস ও এক হাজার টাকা জরিমানা করেন। উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর আপিল করেন। শুনানি শেষে চেয়ারম্যান সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কে জমির ক্রয়েরর দলিল ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র বিবেচনায় নিয়ে আইনানুগ নিস্পত্তির আদেশ দেন। উক্ত আদেশের আলোকে কাগজ পত্র পর্যালোচনা করে বঙ্গনীয় প্রজাসত্ত্ব আইন ১৯৫০ এর ১৫১ (এইচ) ধারা অনুযায়ী হিসাব বিবরণীতে দাখিলকৃত ৮.৫৭ একর সম্পত্তি ব্যতীত সমুদয় সম্পত্তি ২০১৬ সালের ৩ মে খাস করেন। গত ২০১৯ সালের ৫ আগষ্ট খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাসরিন আক্তার তাদের করা আপিল আবেদন না মঞ্জুর করে পূর্বের আদেশ বহাল রাখেন। এদিকে জনৈক মৃত. ডা: রাহাতুল্লাহ, মৃত. জিতুল্লাহ, মৃত. মহেশ্বর গাইন, মৃত. তফেজ উদ্দীন, আবুল হোসেন দিং কিছু সম্পত্তি জাল কোবলা দেখিয়ে বিএস রেকর্ড করে ওই ভূমিদস্যু গুলি গফুর।
আপ্তাব উদ্দীন গাজী অভিযোগ করে বলেন, আদালতের রায় সবগুলো আমাদের পক্ষে আসায় তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং ভূমিদস্যু আলমগীর তার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ভূমিহীনদের বাড়ি ঘরে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া, মারপিট, মাছ লুটপাট এবং খুন জখমের হুমকি ধামকি প্রদর্শন করেন। কিন্তু কোনভাবে তাদের অসৎ উদ্দেশ্যে সফল করতে না পেরে গত ১৭ নভেম্বর একটি কাল্পনিক গল্প সাজিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে আমাদের সহযোগিতাকারী গোলাম মোস্তফা বাংলার ভাগ্নে সাইফুল্লাহ আল মামুন, জাহিদ হোসেন, আল মাহমুদ, ইউনুছ, রফিকুলকে জড়িয়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে একটি মিথ্যে সংবাদ সম্মেলন করে। ওই সময় ও স্থানে কোন ধরনের হামলা বা মারপিটের ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে উল্লেখিত গোলাম মোস্তফা বাংলা এবং সাইফুল্লাহ আল মামুন গং অসহায় ভূমিহীনদের সেখানে বসবাসে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে উল্লেখিত আলমগীর গং আমাদের উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে একাধিক মিথ্যো মামলা দায়ের করে। এসব মামলার কয়েকটি ইতিমধ্যে মিথ্যে প্রমাণিত হওয়া তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তিনি ওই ভূমিদস্যুদের কবল অসহায় ভূমিহীন পরিবারগুলোর ইজারা নেওয়া সম্পত্তি রক্ষা এবং মিথ্যে মামলা হামলার হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বি: দ্র: প্রতিবেদনটি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের ই-মেল থেকে প্রেরণকৃত।