ভগ্নিপতি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের নীলকণ্ঠপুর গ্রামের আবিদ হোসেন মোল্লা ওরফে বাবুকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত পুলিশ সদস্য আরিফ হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমাণ্ড আবেদন জানানো হয়েছে। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক জিয়ারত আলী শুক্রবার এ আবেদন করলে বিচারক বিলাস কুমার মণ্ডল শুনানীর জন্য আগামি রোববার দিন ধার্য করেছেন।
এদিকে সরেজমিনে শুক্রবার সকালে কালিগঞ্জের নীলকণ্ঠপুর গ্রামে গেলে দেখা গেছে নিহতের বাড়িতে স্বজনদের ভিড়। বাড়িতে জায়গা না থাকায় নানার বাড়িতে মাটি দেওয়া হয়েছে নিহত বাবুর। একটি মাত্র বসত ঘরের তিন পাশে বেড়া থাকলেও সামনের অংশে বেড়া নেই তাদের। বাবুর বাবা আব্দুর রহিম জানালেন তিনি মাটি কাটার কাজ করেন। মা হোসনে আরা খাতুন গৃহীনী। নিহত বাবুর ছোট ভাই আল আমিন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। শুধুমাত্র বসত ভিটা টুকু ছাড়া তাদের কিছু নেই। গত ৩ মার্চ বাড়ির কাউকে না জানিয়ে সাবিনাকে বিয়ে করাটাই কাল হলো বাবুর। সাবিনার পূর্বের স্বামী ফারুক হোসেনের বাড়ি পোড়ানোর কাল্পনিক মামলায় বাবুকে প্রধান সাক্ষী করা হয়।
আদালতে দায়েরকৃত মামলায় সাবিনা তার পরিচয়ে ফারুখ হোসেনের স্ত্রী উল্লেখ করলেও স্বামী হিসেবে বাবুর নাম লেখেনি। পিবিআই এর কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান ঘটনার তদন্তে গেলে বাবু সাক্ষী না দেওয়ায় সাবিনা ও তার ভাই বোনেরা ক্ষুব্ধ ছিল। এ ছাড়া সাবিনার পূর্বের মৃত স্বামী ফারুক হোসেনের ফুফাত ভাই উপজেলার গোবিন্দপুরের লাভলুর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার বিষয়টি নিয়েও বাবু প্রতিবাদ করায় সময়টা ভাল যাচ্ছিল না বাবুর। বাবুকে হত্যার পিছনে সাবিনা ও তার বাপের বাাড়ির লোকেজনদের দায়ী করেন বাবুর পরিবারের সদস্যরা।
তবে দুপুরে বন্দকাটি গ্রামে যেয়ে দেখা গেছে সাবিনার বাবা প্রয়াত আরশাদ আলী মোড়ল পরিবারের শিশু ও নারী ব্যতীত সকল সদস্যই বাড়ি ছাড়া। সাবিনা ও আরিফ হোসেন রয়েছেন কারাগারে। তারা বাবুকে কেন মেরে ফেলতে যাবেন তা নিয়ে নানান প্রশ্ন তুলে ধরেন এ প্রতিবেদকের কাছে। তবে আরশাদ আলী মোড়লের পরিবারের সদস্যরা হত্যা মামলায় আত্মগোপন করায় গোয়ালঘেষিয়া নদীর চরের ১০০ জন ভূমিহীনকে বৃহষ্পতিবার দুপুরে উচ্ছেদ করেছে রিয়াজ- খলিল বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও ভূমিহীন মোসলেম মোড়ল, কুদ্দুস মাঝি, জাহাঙ্গীর মোড়ল, সামাদ মোড়ল, ঝর্ণা খাতুন ও রশিদ মোড়লদের তুলে দিয়ে সেখানে ফিরে যেতে পারেনি বলে জানান নীলকণ্ঠপুরের মুজিবর মোড়ল, বন্দকাটির জহুর মোড়ল. মিলন মণ্ডল, মোসলেম মোড়ল, মনিরুল মোড়লসহ কয়েকজন।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী ও ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিনের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত চারটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ নভেম্বর সকালে কালিগঞ্জ উপজেলার বন্দকাটি গ্রামে শ্বশুর বাড়ির একটি পুকুরের পাশের লেবু গাছের ডালে গলায় ওড়না জড়ানো ঝুলন্ত নীলকণ্ঠপুর গ্রামের ভাটা শ্রমিক আবীদ হোসেন মোল্লা ওরফে বাবুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বাবু’র পায়ের নখ রক্তাক্ত ছিল। ডান পায়ের হাঁটুর উপর ভারী জিনিস দিয়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় মৃতের মা হোসনে আরা বাদি হয়ে সাবিনা ও আরিফ হোসেনসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ৩ নভেম্বর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ ৩ নভেম্বর দুপুরে সাবিনাকে ও রাতে মাগুরা জেলার শালিখা থানাধীন হাজরাহাটি তদন্ত কেন্দ্র থেকে আরিফকে আটক করে। সাবিনা ৪ নভেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ৫ নভেম্বর আরিফকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। ৬ নভেম্বর আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমাণ্ড আবেদন জানানো হয়।