গোপালগঞ্জে ১১টি মোবাইল (সিম সহ) সেট, বিকাশ কোম্পানি কর্তৃক নিবন্ধনকৃত ৫টি সিম ও বিকাশ প্রতারনার সরঞ্জামসহ আন্তঃজেলা বিকাশ প্রতারক চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা পুলিশের একটি চৌকস দল।
পরে গ্রেফতারকৃতদেরকে বিচারিক আদালতে হাজির করলে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট তারা ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। পরে বিজ্ঞ বিচারক তাদেরকে গোপালগঞ্জ জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন পিপিএম (বার) গণমাধ্যমকে জানান, গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সাইদুর রহমান খান পিপিএম (বার) এর দিকনির্দেশনায় আমি, আমার অফিসের (সদর সার্কেল অফিসের) কং সিরাজ, শরিফ, সদর থানার এসআই মিজান, ডিবির এসআই মাসুম, কং সোহাগ ও ইকবালকে নিয়ে ফরিদপুর জেলার সালথা,
নগরকান্দা, ভাংগা, মাদারীপুর জেলার শিবচর ও গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর এলাকা হতে বিকাশ প্রতারনার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রের ৫ সক্রিয় সদস্য মো.শামসুল হক ওরফে হামিম খান (১৯), মো.হুসাইন মীর (২৩), সুশান্ত মন্ডল (২৫), জয়নাল আবেদীন ফকির (৫০) ও গোবিন্দ শীল (২৮) কে ১১টি মোবাইল (সিম সহ) সেট, বিকাশ নিবন্ধনকৃত ৫টি সিম ও বিকাশ প্রতারনার সরঞ্জামসহ আটক ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এ মামলা দায়ের করি।
উল্লেখ্য, উক্ত প্রতারকচক্র চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থানার গোপালপুর গ্রামের মনোরঞ্জন মন্ডলের ছেলে প্রফুল্ল মন্ডলের
নিকট থেকে ৩৬,৩৭৫/ টাকা গোপালগঞ্জ সদর থানার রেজাউল করিমের নিকট থেকে ২২,৭২৬/ টাকা, রহিমা খাতুনের নিকট থেকে ২০,৩২৫/ টাকা, খালেদা বেগমের নিকট থেকে ২২,৯০৫/ টাকা, রকি উদ্দিনের নিকট থেকে ৪,৯০০/ টাকা, তহিদুজ্জামানের নিকট থেকে ২৫,০০০/ টাকা, মাহফুজ মোল্লার নিকট থেকে ৩০,০০০/ টাকা, মাহবুব সিকদারের নিকট থেকে ১৯,০০০/ টাকা, বশির আহমেদের কাছ থেকে ৪৫,৫০০/ টাকা সহ আরো বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা বিভিন্ন কৌশলে বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়। উক্ত প্রতারক চক্র লটারি প্রাপ্তির মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে অথবা দেশের বিভিন্ন জেলায় তাদের সদস্য পাঠায় যারা বিভিন্ন বিকাশ এজেন্টের দোকানে গিয়ে গোপন ভিডিও ক্যামেরা, সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিকাশে টাকা পাঠানোর নামে কিংবা অন্য কৌশলে বিকাশ রেজিস্ট্রার হতে গ্রাহকদের বিকাশ নম্বর সমূহের ছবি তুলে (চুরি /সংগ্রহ করে) ভিন্ন জেলায় অবস্থানরত তাদের টিমের কাছে ইমো/মেসেঞ্জারের মাধ্যমে প্রেরন করে। দূরে অবস্থানরত তাদের নিয়ন্ত্রণকারী সদস্যরা ইমো/মেসেঞ্জারে প্রাপ্ত গ্রাহকের বিকাশ নম্বর সমুহকে বিকাশ সফটওয়্যার ব্যবহার করে হ্যাক করে কিংবা বিকাশ এজেন্ট / বিকাশ হেড অফিসের পরিচয়ে ফোন করে বিভিন্ন কৌশলে প্রতারনার মাধ্যমে বিকাশ পিন কোড সংগ্রহ করে গ্রাহকদের বিকাশ একাউন্ট থেকে টাকা ট্রান্সফার করে। উক্ত চক্র কতিপয় বিকাশ এজেন্টকে তাদের ট্রান্সফার কৃত অর্থের ভাগ দিয়ে তাদের দলভুক্ত করে অবং তাদের মাধ্যমে টাকা ক্যাশআউট করে থাকে। উক্ত চক্র গত কয়েক মাসে প্রায় ৮০ / ৮৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করে। প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের শীঘ্রই আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বিকাশ একাউন্টের সকল গ্রাহকদের উদ্দেশে আরো বলেন, আপনারা কোন অবস্থাতেই অন্য কাউকে বিকাশ নম্বরের গোপন পিন কোড দিবেন না এবং অপরিচিত লোকের মিথ্যা প্রলোভনে পড়ে নিজের সর্বনাশ নিজে ডেকে আনবেন না। মনে রাখবেন বিকাশ অফিস / প্রতিনিধি কখনও আপনাদের নিকট থেকে গোপন পিন কোড চাইবে না। বিকাশ এজেন্টদেরকে প্রতারণার হাত থেকে সাবধানে রাখতে আমরা জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ হতে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি সচেতনতামূলক কর্মশালার আয়োজন সম্পন্ন করেছি। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে জেলার সকল বিকাশ গ্রাহকদেরকে আরো সচেতন করার লক্ষ্যে আমাদের এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে চেষ্টা থাকবে।