সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার বর্তমান গাজীপুর র্যাব ট্রেনিং সেন্টার এর ডিরেক্টর, এডিশনাল ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জরুল কবির এর ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস। তার এই আবেগঘন স্ট্যাটাসটি দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল “দেশটাইমস” deshtimes24 এর পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলেধরা হলো।
বিগত এক যুগ ধরে প্রতি শুক্রবার কিছু সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য আমাদের ক্ষুদ্র সামর্থ্য অনুযায়ী মোহাম্মদপুর টাউন হলের সরকারি বাসভবনে দুটো ডাল-ভাতের আয়োজন করে থাকি, যা নেটিজেনবৃন্দ অনেকেই অবগত আছেন।
এখানে সাধারণত শিশুরাই বেশি এসে থাকে। সাথে কিছু প্রতিবন্ধী আর অনেক বয়ষ্ক নারী-পুরুষও থাকে। করোনার কারণে গাজীপুরস্থ র্যাব ট্রেনিং স্কুলে নিজেদের ঘাটি স্থাপন করেছি। সেখান থেকে প্রতি শুক্রবার রান্না-বান্না করে পাঠিয়ে দেই। কিন্তু অনেকদিন ধরে নিজের আসা হয়ে ওঠেনি। আজকে সুযোগ পেয়ে চলে আসলাম। এসে দেখলাম মেহমানদের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। শিশুদের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। পূরোনো মেহমান অনেকেই আজকে গরহাজির। আবার অনেক নতুন মেহমানের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করলাম।
গেট দিয়ে অন্য সবার সাথে একজোড়া মানব-মানবী প্রবেশ করলো। দুইজন না বলে একজোড়া বললাম এ কারণে যে মেহমানদ্বয় সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। স্বামী হুইল চেয়ারে আর স্ত্রী হুইল চেয়ার ঠেলছে। এটা খুবই স্বাভাবিক। তাই ঢোকার সময় আলাদাভাবে দৃস্টি সেদিকে নিবদ্ধ হয়নি। তবে খেয়াল করলাম যে আমি এদেরকে আগে আমাদের এই নগণ্য অতিথিশালায় দেখিনি। সবার খাওয়া শুরু হলে পূর্বাপরের মতোই খাবার দেওয়ার সার্বিক ব্যবস্থাপনা তদারক করতে যেয়ে এই হংস মিথুনের (হংস মিথুন কখনো জোড়া পাল্টায় না) দিকে নজর আটকে গেলো। তাই তাদের অনুমতি নিয়ে কয়েক সেকেন্ডের একটা ভিডিও করে ফেললাম। সেই ভিডিওটা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
স্ত্রী পরম মমতায় মায়ের মতো করে স্বামীকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরে তার স্বামী প্যারালাইজড। স্বামীর খাওয়া-দাওয়া থেকে বাথরুম পর্যন্ত স্ত্রীর সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয়। স্কুল জীবনে পবিত্র কোরআন আর বাইবেলে আইয়ুব নবী ও তাঁর স্ত্রী রহীমার কাহিনী পড়েছিলাম (আপনারা যারা পড়েননি, তারা চাইলে পড়তে পারেন)। মনে হলো এ যেনো সাক্ষাত আইয়ুব-রহীমা।
এই স্বামী বেচারা কতোটা ভাগ্যবান! এই মহীয়সী নারী না হয়ে আমাদের অনেকের স্ত্রীর মতো একজন মানবিক হৃদয়া সমাজসেবিকা (?) স্ত্রী যদি তার কপালে জুটতো, তবে অনেক আগেই তার কেল্লা ফতে হয়ে যেতো।
আজকে এদের দেখে আমার মনে হলো, জীবনে প্রাচুর্যের চেয়ে ভালবাসায় পূর্ণ একটা সম্পর্ক অনেক মূল্যবান।