ভেটকি মাছ চাষে সুদিন ফিরেছে ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় চাষীদের। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ চাষীরা মাছ চাষ করতে হিমশিম খাচ্ছিল। বর্তমানে ভেটকি মাছ চাষ করে ভাগ্য ফিরেছে অনেকের। আয় বৃদ্ধি পেয়েছে চাষীদের, সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।
চরফ্যাশনের প্রায় ৮০-৯০ একর পুকুরে ভেটকি মাছ চাষ হচ্ছে। পল্লী-কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর সমন্বিত কৃষি ইউনিটের (মৎস্যখাত) অর্থায়নে ও কারিগরি সহযোগিতায় ও পরিবার উন্নয়ন সংস্থার নিবিড় সেবা বাস্তবায়নে ভেটকি চাষীদের সচেতনতা তৈরি এই অবস্থার পরিবর্তন এসেছে বলে চাষীরা জানান।
চরফ্যাশন উপজেলার মাছ চাষী মোঃ রাশেদ বলেন, পল্লী-কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় এবং পরিবার উন্নয়ন সংস্থার প্রচেষ্টায় সমন্বিত কৃষি ইউনিটের মৎস্য খাতের মাধ্যমে এ বছর ৭০ একর জমিতে ভেটকি মাছের চাষ হয়। সঠিক চাষ ব্যবস্থাপনায় ভেটকি মাছ চাষে আগের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে আগের অনেক মানুষ ভেটকি মাছ চাষে ঝুঁকছে।
দক্ষিণ আইচা থানার ভেটকি মাছ চাষী মোঃ জামাল জানান, পরিবার উন্নয়ন সংস্থা (এফডিএ) আমাদের মাছ চাষের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আমরা মাছ চাষকালীন ব্যবস্থাপনা জানতে পারি। সঠিক ব্যবস্থাপনায় ভেটকি মাছ চাষ করার কারণে আগের চেয়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ভেটকি মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে তিনি ভেটকির খামারের সম্প্রসারণ করেন। বর্তমানে তিনি তিনটি পুকুরে ভেটকি মাছ চাষ করছেন।
দক্ষিণ আইচা থানার ভেটকি মাছ চাষী মোঃ হারুন বলেন, অনেকদিন ধরে আমরা সনাতন পদ্ধতি মেনে ভেটকি মাছ চাষ করে আসছিলাম, যে কারণে আশানুরুপ ফল পাইনি। তবে আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি মেনে চলার কারণে আমরা লাভবান হচ্ছি। ভেটকি মাছের তেমন কোন রোগ-বালাই হয় না। পুকুর ব্যবস্থাপনা ও খাবার ব্যবস্থাপনা ঠিকঠাক করতে পারলে ভেটকি মাছ চাষে লাভবান হওয়া সম্ভব। চরফ্যাশনে ভেটকি মাছ বাজারজাত করার ভালো ব্যবস্থা বিদ্যমান তাই বিক্রিতে কোন ধরনের সমস্যা হচ্ছে না।
তিনি অরও বলেন, এ বছর আমি প্রায় ২০০ শতক পুকুরে ভেটকি মাছ আবাদ করি। পানির গুণমান ঠিক রাখার কারণে এ বছর প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা লাভ করি। ভেটকি মাছ চাষে নিয়মিত পরিমাণ মত খাবার ব্যবস্থা করতে পারলে ৮-১১ মাসে বাজারজাত করা যায়। তাই এর পাশাপাশি অন্যমাছও চাষ করা লাভজনক।
আরেক মৎস্য চাষী মোঃ সজীব বলেন, আমি আগে থেকেই ভেটকি মাছ চাষ করি। তবে উৎপাদন আশানুরুপ ছিল না। মজুদ ঘনত্ব বেশি হবার কারণে বেশিরভাগ সময়ে খাবার ব্যবস্থাপনা ঠিকঠাক করতে পারতাম না। পরিবার উন্নয়ন সংস্থার সাথে যুক্ত হয়ে প্রশিক্ষণের পর আগের মত সমস্যা আর হয় না। ঠিকঠাক খাবার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পেরে আগের চেয়ে বেশি পরিমাণ মাছ উৎপাদন হচ্ছে। পোনা ব্যবহারের তুলনামূলক উৎপাদন বৃদ্ধি হচ্ছে।
পরিবার উন্নয়ন সংস্থার মৎস্য কর্মকর্তা মেহেদী আজম বলেন, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর সমন্বিত কৃষি ইউনিটের (মৎস্য খাত) অর্থায়নে ও কারিগরি সহযোগিতায় এফডিএ মাঠ পর্যায়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী বাস্তবায়নের মাধ্যমে নতুন নতুন মৎস্য প্রযুক্তির সাথে মাছ চাষীদের পরিচিত করছে। পরামর্শ ও সচেতনতার মাধ্যমে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। এছাড়াও মাঠ দিবস, মৎস্যসেবা ও পরামর্শকেন্দ্র, বিলবোর্ড ও বিভিন্ন প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তির সাথে সাথে আধুনিক মাছ চাষে ঝুঁকছে প্রান্তিক চাষীরা।
চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, অত্র উপজেলায় মোট বদ্ধজলাভূমির পরিমাণ ২৯১০.৪০ হেক্টর। এসব জলাশয়ে মাছ চাষের মাধ্যমে মাছের চাহিদা পূরণের চেষ্টা চলছে। চরফ্যাশনের চাষীরা আধুনিক চাষ পদ্ধতি মেনে ভেটকি মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এ কাজে মৎস্য অধিদপ্তর সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ভেটকি মাছ চাষীদের আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।