সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা শরবত মোল্লা হত্যা মামলার প্রধান আসামী খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহানেওয়াজ ডালিমকে রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রবিবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
গত ৮ অক্টোবর আদালতে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে পরদিন শুক্রবার মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক জহিরুল ইসলাম তাকে জেলখানা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ৮ এপ্রিল গদাইপুর বিলে মঞ্জুরল মোল্লার চিংড়ি ঘেরের দু’ কর্মচারিকে বেঁধে রেখে মাছ লুটের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলে ক্ষুব্ধ হন খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিম। এরই জের ধরে ডালিমের দু’ ভাই ও তাদের লোকজন ৯ এপ্রিল সবেবরাতের রাতে গদাইপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরবৎ মোল্লা ও মঞ্জুরুল মোল্লার চিংড়ি ঘেরে লুটপাট চালায়। ১০ এপ্রিল সকালে ওই মাছ চেয়ারম্যান, তার ভাই আহসান হাবিব টগর গদাইপুর মাছের সেটে বিক্রি করতে গেলে শরবত মোল্লার সঙ্গে বচসা বাঁধে। পরে সকাল নয়টার দিকে পুরাতন কবরস্থানের পাশে শরবৎ মোলা, তার স্ত্রী শরিফা খাতুন, প্রতিবেশি আরিফা খাতুন, তুয়ারডাঙার সুবিমল বিশ্বাসসহ কয়েকজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে ডালিম ও তার সস্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা। ভাঙচুর করা হয় তাদের বাড়িসহ পাঁচটি বাড়ি। ১০ এপ্রিল দিবাগত রাত একটার দিকে শরবৎ খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ায় গ্রামের ক্ষুব্ধ মানুষজন পুলিশের উপস্থিতিতে ডালিম ও তার কয়েকজন সহযোগীদের বাড়ি ভাঙচুর করে। নিহত শরবতের ছেলে সবুজ তার বাবাকে হত্যার অভিযোগে ১১ এপ্রিল শনিবার রাতেই ডালিমকে প্রধান আসামী করে ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করে। এ ছাড়াও টগরকে হত্যার চেষ্টা ও ডালিমের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ভাই ওবায়দুল্লাহ ডাবলু বাদি হয়ে দু’টি ও মুক্তিযোদ্ধা শেখ নুরুল এর বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় তার স্ত্রী জামেলা বেগম বাদি হয়ে আরো একটি মামলা করে।
আওয়ামী লীগের দু’ গ্রুপের সংঘর্ষে শরবৎ হত্যা, উভয়পক্ষের ১০ জন আহত ও কমপক্ষে ১০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় চারটি মামলায় ১৩৮ জন আসামী করা হয়।
দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর পহেলা আক্টোবর দিবাগত রাত একটার দিকে শরবৎ হত্যা মামলার প্রধান আসামী মোজাহারের ছেলছ শাহানেওয়াজ ডালিমকে ঢাকার খিলখেত এলাকার নিজস্ব বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২ অক্টোবর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। ৮ অক্টোবর জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম আমলী আদালত -৮ এর বিচারক ইয়াসমিন নাহার তার তির দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে শরবৎ মোল্লা হত্যা মামলার আটককৃত প্রধান আসামী শাহানেওয়াজ ডালিমের ফাঁসির দাবিতে এলাকাবাসী গত ৭ অক্টোবর ও ডালিমকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ৮ অক্টোবর সাতক্ষীরা কালেক্টরেট চত্বরে পৃথক মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করে এলাকাবাসী।
সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক জহিরুল ইসলাম জানান, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রবিবার বিকালে শাহানেওয়াজ ডালিমকছ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে নতুন কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।