আজ ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস।প্রবীণ শব্দের অর্থ -বৃদ্ধ, বিজ্ঞ। ইংরেজিতে old, wise।আমার মনে হয়, প্রবীণ জনগোষ্ঠী পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রে কোথায় কী অবস্থায় রয়েছে, তার খবর কেউ রাখে না। অথচ প্রবীণরাই এই দেশ, সমাজ তথা পরিবারের জন্য একসময় বিরাট অবদান রেখেছেন। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী অতিক্রান্ত হবে। যারা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন, এ দেশটাকে স্বাধীন করেছিলেন, তাদেরও অনেকে আজ কমবেশি বার্ধক্যের দ্বারপ্রান্তে উপনীত।বার্ধক্যের স্বাদ সবাইকে গ্রহণ করতে হবে।
জন্মিলে যেমন মৃত্যু অনিবার্য, তেমনি বেঁচে থাকলে প্রত্যেক মানুষকেই বার্ধক্যের স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। এটা থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব নয়। বর্তমান সমাজে পরিবারের প্রবীণদের বোঝা মনে করা হয়। তাদের সম্মান, মর্যাদা কিংবা কষ্টের কথা কেউ ভাবেন বলে মনে হয় না। অথচ প্রবীণদের মেধা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আগামী দিনগুলো তাদের সঙ্গে নিয়ে চলতে পারলে পরিবার, সমাজ, সর্বোপরি দেশ অনেক বেশি উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি।প্রবীণরা যৌবনে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। পরিবারের সদস্যদের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, আরাম আয়েশের দিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করেছেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে তারা অবহেলিত হবেন, এটা মেনে নেয়া যায় না। তাছাড়া বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শারীরিক ও মানসিক বৈকল্য সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় পরিবারে তার অস্তিত্ব বোঝার মতো, আর তার বেঁচে থাকাটা অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায়। সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক ক্রমেই শিথিল হতে থাকে। অনেকটা অবহেলা অযত্নের মধ্যেই অনেকের মৃত্যুর প্রহর গুনতে হয়। এ অবস্থাটা বড়ই মর্মান্তিক।আমি কবির নেওয়াজ রাজ আমার ব্যক্তিগত মতে প্রবীণরা অভিজ্ঞতার সম্পদ, আমার কাছে উজ্জীবনী শক্তি ও চলমান ইতিহাস এবং ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক। প্রবীণ শব্দ উচ্চারণ মাত্রই আমাদের কাছে বুড়ো/ বুড়ি আর ক’দিন বাঁচবে? তার জন্য সময় নষ্ট করার দরকার কী? এটা কখনও আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বা মূল্যবোধ হওয়া উচিত নয়।জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই কারণে যে, তাহারা সঠিকভাবেই বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করিতে সক্ষম হইয়াছিল।
তাহারই ফলশ্রুতি হিসাবে ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পহেলা অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস হিসাবে পালিত হইয়া আসিতেছে। আন্তর্জাতিক প্রবীণ বর্ষও পালিত হইয়াছে ১৯৯৯ সালে। উদ্দেশ্য একটাই, প্রবীণদের অধিকার ও মর্যাদা বিষয়ে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সচেতন করা।বয়স যত বাড়িতে থাকে বয়স্ক মানুষের নানাবিধ নির্ভরতাও তত বৃদ্ধি পায়। বৃদ্ধি পায় নিঃসঙ্গতা। এই কঠিন সময়ে তাহাদের আশ্রয়, খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা যেমন দরকার, তেমনি জরুরি হইয়া পড়ে মায়া-মমতা ও সঙ্গ। প্রত্যেক সন্তানের জন্য বাধ্যতামূলক করা হোক পিতা-মাতার ভরণপোষণ। বিশ্বের সকল প্রবীণরা ভালো থাকুক।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটি, আদর্শ ছাত্রবন্ধু ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।