- সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার গদাইপুর গ্রামের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা শরবত মোল্লা হত্যা মামলার প্রধান আসামী খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হয়েছে। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক জহিরুল ইসলাম বুধবার বিকালে এ আবেদন করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ৮ এপ্রিল গদাইপুর বিলে মঞ্জুরল মোল্লার চিংড়ি ঘেরের দু’ কর্মচারিকে বেঁধে রেখে মাছ লুটের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলে ক্ষুব্ধ হন গদাইপুর গ্রামের রাজাকার মোজাহার সরদারের ছেলে শাহানেওয়াজ ডালিম। এরই জের ধরে ডালিমের দু’ ভাই ও তাদের লোকজন ৯ এপ্রিল সববরাতের রাতে গদাইপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরবৎ মোল্লা ও মঞ্জুরল মোল্লার চিংড়ি ঘের লুটপাট চালায়। ১০ এপ্রিল সকালে ওই মাছ চেয়ারম্যান, তার ভাই আহসান হাবিব টগর গদাইপুর মাছের সেটে বিক্রি করতে গেলে শরবত মোল্লার সঙ্গে বচসা বাঁধে। এ সময় সরকারি ১০ টাকার চাল গরীবদের না দিয়ে তার পকেটের লোকজনদের দেওয়া নিয়ে হাতাহাতিও হয়। পরে সকাল নয়টার দিকে পুরাতন কবরস্থানের পাশে শরবৎ মোললা, তার স্ত্রী শরিফা খাতুন, প্রতিবেশি আরিফা খাতুন, তুয়ারডাঙার সুবিমল বিশ্বাসসহ কয়েকজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে ডালিম ও তার সস্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা। ভাঙচুর করা হয় তাদের বাড়িসহ পাঁচটি বাড়ি। ১০ এপ্রিল দিবাগত রাত একটার দিকে শরবৎ খি খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ায় গ্রামের ক্ষুব্ধ মানুষজন ডালিম ও তার কয় সহযোগীদর বাড়ি ভাঙচুর করে। নিহত শরবতের ছেলে সবজু বাবাকে হত্যার অভিযোগে ১১ এপ্রিল শনিবার রাতেই ডালিমকে প্রধান আসামী করে ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করে। এ ছাড়াও টগরকে হত্যার চেষ্টা ও ডালিমের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ভাই ওবায়দুল্লাহ ডাবলু বাদি হয়ে দু’টি ও মুক্তিযোদ্ধা শেখ নুরুল এর বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় তার স্ত্রী জামেলা বেগম বাদি হয়ে আরো একটি মামলা করে।
আওয়ামী লীগের দু’ গ্রুপের সংঘর্ষ শরবৎ হত্যা, উভয়পক্ষের ১০ জন আহত ও কমপক্ষে ১০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় চারটি মামলায় ১৩৮ জন আসামী হলেও এ পর্যন্ত ১৭জন আসামীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরই মধ্যে সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে শরবৎ হত্যা মামলার প্রধান আসামী মোজাহারের ছেলে শাহানেওয়াজ ডালিমকে ঢাকার খিলক্ষেত এলাকার নিজস্ব বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বুধবার সকালে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। তবে হত্যা মামলার আসামী সিরাজুল ইসলাম, আহসান হাবিব টগর, ইউপি সদস্য অনুপ সানা, ইউপি সদস্য রামপদ সানাসহ ছয়জন এখনো পলাতক রয়েছেন। আদালতে আত্মসমর্পন করে জেল হাজতে রয়েছেন মোস্তাকিম(১), মোস্তাকিম (২), আনারুল ইসলাম, সেলিম হোসেন, আব্দুস সালাম, নুরুজ্জামান ওরফে ছোট নুনু।
এদিকে আশাশুনি উপজেলা হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক ফটিকখালি গ্রামের সুজন সানাকে ২০১৯ সালের ২২ মার্চ কুপিয়ে জখম করার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় গত ৩১ আগষ্ট আদালতে চেয়ারম্যান ডালিমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ইয়াছিন আলী চৌধুরী জানান, শাহানেওয়াজ ডালিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়ে বুধবার বিকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে। সেক্ষেত্র বৃহষ্পতিবার রিমান্ড আবেদন শুনানীর জন্য আদালত দিন ধার্য করতে পারে।