ঠিকমত চলাফেরা করতে পারে না। এমনকি হাত দিয়েও কাজ করতে পারে না। তবুও দমে যায়নি অরিনীতা অর্চি। শ্রুতি লেখকের সাহায্যে এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয় সাতক্ষীরার তালা উপজেলার এই অদম্য শিক্ষার্থী।
জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে অর্চি। অরিনীতা অর্চি তালা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক অচিন্ত্য কুমার সাহা ও মিনাক্ষী মজুমদার দম্পতির মেয়ে। তালা উপজেলা সদরে তাদের বাড়ি। এক সময় গান, আবৃত্তি, ছবি আঁকা, বাই সাইকেল চালানো, খেলাধূলা ছিল তার নিত্য দিনের সঙ্গী। হঠাৎ দূরারোগ্য এক ব্যধি তাকে থামিয়ে দেয়। ফুটফুটে শিশুটির জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল (১ বৈশাখ) ছিল তার কণ্ঠে গাওয়া শেষ গান। এরপর তার কণ্ঠে আর গান ওঠেনি। মাত্র ১১ বছর বয়সে উইলসন ডিজিস তার জীবন সীমিত করে দেয়। তবুও সে থেমে থাকেনি। এক ধরণের পর নির্ভরশীল মানুষ হিসেবে সে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে জীবন সংগ্রাম শুরু করে। তার নিত্যদিনের কাজ মা-বাবার উপর নির্ভরশীল। এভাবেই সে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) সে গোল্ডেন এ প্লাস এবং এসএসসিতে জিপিএ ৪.৩৩ প্রাপ্ত হয়। ২০২২ সালে তালা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয় অর্চি। ‘শ্রুতি লেখক’ ছিল তার প্রতিবেশি ছোট বোন অর্পিতা মন্ডল। অর্চি স্বপ্ন একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার।
মেয়েটির বাবা অচিন্ত্য কুমার সাহা জানান, অর্চি ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় খুব আগ্রহী ছিল। ২০০৪ সালে জন্ম নেওয়া অর্চি অন্য সব শিশুর মতোই স্বাভাবিক ছিল। হঠাৎ করে উইলসন ডিজিস (ডরষংড়হ ফরংবধংব) এর মতো বিরল একটা রোগ তার জীবন ওলটপালট করে দেয়। বর্তমানে সে বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী হিসেবে জীবন নির্বাহ করছে। দেশ-বিদেশে চিকিৎসা করানো হলেও অর্চির স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারেননি চিকিৎসকরা।
তিনি বলেন, চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে অর্চি। এজন্য তিনি শ্রুতি লেখকসহ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও শিক্ষক মন্ডলীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘অর্চির এ সাফল্যে খুশি হলেও তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এ খুশির আড়ালে হতাশা আর চিন্তায় সময় কাটছে আমাদের।’ এ সময় অর্চির জন্য সকলের কাছে দোয়া ও আর্শীবাদ কামনা করেন তিনি।