এ যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া। দীর্ঘ ১৫ বছর পর মা ও সন্তানের মহামিলনের এই দৃশ্য দেখে চোখের পানি মুছলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চাঁদনীমুখা গ্রামের মানুষ।
গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম জানালেন খানিকটা অসহায় অবস্থায় চাঁদনীমুখা বাজারের একটি টিনের চালাঘরে একাকী বসে থাকতেন বৃদ্ধা আবেদা বেগম (৬৯)। তার নাম পরিচয় কারও জানা ছিল না। তবে তিনি নিয়মিত নামাজ পড়তেন। পথচারীরা তাকে খাবার দিতো। এই মাকে এখন খুঁজে পেয়েছৈ তার সন্তান বাগেরহাটের আল আমিন।
বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার ঘরখোল গ্রামের আল আমিন জানান, তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা এতোদিন মার জন্য চোখের পানি ফেলেছেন। এখন তার মাকে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন। তিনি জানান ১৫ বছর আগে এক ঝড়ের রাতে তার মা আবেদা বেগম (৬৯) নিখোঁজ হন। এর আগে থেকে তার মস্তিষ্কে বিকৃতি দেখা দয়। নিখোঁজ হবার পর থেকে দীর্ঘদিন যাবত তাকে খোঁজাখুঁজি করা হচ্ছিল। মাইকিং করা, থানায় জিডি, সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ সহ নানাভাবে চেষ্টা করেও তিনি তার মাকে খুঁজে পারছিলেন না। তবে তার বিশ্বাস ছিল তার মা বেঁচে রয়েছেন। তিনি যেখানে যেতেন সেখানেই তার মা সম্পর্ক চারদিকে খোঁজখবর নিতেন। কিন্তু কোথাও কোনো সন্ধান পাচ্ছিলেন না।
আল আমিন জানান শুক্রবার তিনি বাগেরহাট থেকে একটি বিয়ের দাওয়াতে শ্যামনগর উপজেলার গাবুরায় আসেন। সেখানেও তিনি তার মায়ের খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। বিয়ের আনন্দে সবাই যেখেনে মাতোয়ারা তখন আল আমিন জানতে পারেন চাঁদনীমুখা বাজারে এক বৃদ্ধা থাকেন। তিনি কথা বলতে পারেন না। সবাই তাকে পাগলী বলে ডাকে, তাকে খাবার দেয়। আল আমিন জানান, খবর পেয়েই তিনি বিয়ে বাড়ি থেকে চলে যান ওই বাজারে। সেখানেই দেখতে পান তার ‘পাগলী’ মা বসে আছেন। ১৫ বছর পর মাকে সামনে পেয়ে তিনি তাকে জড়িয়ে ধরেন। মাও অস্ফট স্বরে কি যেন বিড়বিড় করে বলতে থাকেন। উভয়ের চোখেই তখন অঝোরে পানি ঝরছে। গ্রামবাসী তা প্রত্যক্ষ করলেন। তাদের এই আনন্দঘন পরিবেশ প্রত্যকের চোখেই ফুটে উঠলো অশ্রকণা। ১৫ বছর পর মা ও সন্তানের মহামিলনের এই দৃশ্যটি দেখে সবাই বললেন তারা সত্যিই ভাগ্যবান।
আল আমিন বলেন ‘মাকে হারিয়ে আমরা চার ভাই ও দুই বোন খুব হতাশ হয়েছিলাম’। এখন সেই হতাশা কাটিয়ে উঠে তিনি তার মাকে নিয়ে মহানন্দা ফিরে যান গ্রামের বাড়ি মংলা উপজেলার ঘরখোলা।
ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম আরও জানান ‘আমি উপস্থিত থেকে তাদেরকে বাড়িতে রওনা করে দিয়েছি’।