গোপালগঞ্জে মা’ কে হত্যা করে লাশ আগুনে পুড়িয়ে গুম করার দায়ে ছেলে আকাশ (১৬) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০) দুপুরে সদর সার্কেল কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন পিপিএম (বার) গণমাধ্যমকে জানান, গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সাইদুর রহমান খান পিপিএম (বার) এর দিক নির্দেশনায় তাঁর নেতৃত্বে কোটালীপাড়া থানার এসআই হাদি আব্দুল্লাহ, এএসআই সালাউদ্দিন, কং /মনির, সদর সার্কেল অফিসের কং /সিরাজ ও রাশেদের অংশগ্রহনে কোটালীপাড়া উপজেলার ভাঙ্গারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ‘২০ খ্রিঃ রাতে হাসি রানী পান্ডে (৩৫), স্বামী~মনোরঞ্জন পান্ডে, সাং~কালিকা বাড়ী, রাধাগঞ্জ, থানাঃ কোটালীপাড়াকে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত কেরোসিনের বোতলসহ একমাত্র হত্যাকারী, নিহতের আপন ছেলে আকাশ পান্ডে (১৬) কে গ্রেফতার পূর্বক বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবীরের আদালতে হাজির করা হয়। পরে বিচারক ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানন্দি রেকর্ড করে আসামীকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
অপরদিকে,গত ২৭/০৬/২০২০ খ্রিঃ রাত অনুমান সাড়ে ১০টায় আকাশ পান্ডে (১৫) তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রণীর ছাত্র, তার মা হাসি রানী পান্ডের (৩৫) (মানসিক রোগী) নিকট রাতের খাবার চাইলে তার মা হঠাৎ খাবারের প্লেট ও বাটি ছুড়ে মারে, ভাত ফেলে দেয়। আকাশ থামাতে গেলে তার মা বটি দিয়ে তাকে কোপ দিতে উদ্যত হয়। এ সময় আকাশ তার কাছে থাকা রান্নার লাকরী দিয়ে মায়ের মাথায় আঘাত করলে তার মায়ের মাথার পেছনে লেগে মাটিতে পড়ে মারা যায়। আকাশ তখন প্রথমে ঘরের বাহিরে গিয়ে চারপাশ লক্ষ্য করে এবং পাশের বাড়ি হতে পাটখড়ি এবং ঘর হতে গ্যাসলাইট ও কেরোসিনের বোতলসহ ঘর হতে ৩০/৪০ ফিট দুরে মায়ের লাশ কোলে করে নৌকাযোগে ৩০০/৪০০ মিটার দুরে নিয়ে যায়। সেখানে পূর্ব হতে জনৈক লোকের স্তুপ করে শুকোতে দেয়া কাঠের লাকরীর ওপর মায়ের লাশ রেখে কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। লাশ পুড়ে ছাই হয়ে গেলে নৌকার পানি সেচের সেচনি দিয়ে উক্ত ছাই পানিতে ফেলে বাড়ি এসে গোসল করে ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন সকালে বাবা জিজ্ঞেস করলে আকাশ জানায় যে তার নানা হয়ত মাকে তাদের নানাবাড়ি নিয়ে গেছে কিংবা মা কোথাও চলে গেছে আবার ফিরে আসবে । উল্লেখ্য, ইতঃপূর্বে আকাশের মা দুই / তিনবার বাড়ি হতে চলে গিয়েছিল এবং ২ /১ দিন পর আবার চলে এসেছিলো।
এরপর আকাশ তার বাবার সাথে বিভিন্ন জায়গায় মাকে খুঁজতে যায় এবং থানায় গিয়ে মা নিখোঁজের বিষয়ে বাবাকে দিয়ে ৪ জনের বিরুদ্ধে প্রথমে অভিযোগ ও পরে সাধারণ ডায়েরী করে। আকাশের বাবা তার নানা জুড়ান বাড়ৈ (৭৫), পিতাঃ মৃত বলরাম বাড়ৈ, সাং কলাগাছিয়া, মাদারীপুর সদর, জেলাঃ মাদারীপুর সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় আকাশের নানা জুড়ান বাড়ৈ (৭৫), ক্ষুব্ধ হয়ে মেয়ের জামাই মনোরঞ্জন পান্ডে (৩৭), সাং কালিকা বাড়ি, রাধাগঞ্জ, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জসহ ৫ জনকে আসামী করে তার মেয়েকে যৌতুকের জন্য মারপিট করে হত্যা (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন- ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ১১(ক) /৩০ ধারায়) মামলা দায়ের করে। সে প্রেক্ষিতে ভিকটিম হাসি রানীর ছেলে আকাশের আচরন সন্দেহজনক মনে হলে পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে তার মা হাসি রানী বাড়ৈ কে হত্যা করে লাশ আগুনে পুড়িয়ে গুম করার দায় স্বীকার করে।
উল্লেখ্য, এর আগেও গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের দিকনির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন পিপিএম (বার) একাধিক ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উন্মোচন করে আসামীদের আইনের আওতায় আনতে সচেষ্ট হন।