ধর্ষণ মামলার চার্জ সিটভুক্ত এক আসামিকে গাজীপুর মহানগর ১০ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এনিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন পর এ বছরের ৩০ জুলাই গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী থানার ৭ থেকে ১২ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটি ঘোষণার দিন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এডভোকেট আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডলসহ সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ওই দিন গাজীপুর মহানগরের ১০নং ওয়ার্ডের ৬৯ সদস্য বিশিষ্ট্য কমিটিসহ কোনাবাড়ি থানাধীন ৬টি ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের পুর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করা হয়।
মোঃ হায়েত আলী মেম্বারকে সভাপতি ও তোফাজ্জল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের কমিটি ঘোষনা করা হয়। ওই কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয় ঝুট ব্যবসায়ী তানভীর হোসেনকে। ভুক্তভোগী এক নারী বাদী হয়ে জিএমপি কোনাবাড়ি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এবছরের ২৮ জানুয়ারী তানভীর হোসেনকে অভিযুক্ত করে ধর্ষণ মামলা (কোনাবাড়ি থানা মামলা নম্বর ১৭) দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেফতার হয়ে একমাসের বেশি সময় জেলহাজতে থাকার পর জামিনে মুক্ত হয়েছে। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায় , ভুক্তভোগী ওই নারী জিএমপি কোনাবাড়ী থানারধীন আমবাগ এলাকায় ১৭ বছর ধরে ভাড়া বাসায় স্বামীর সাথে বসবাস করে আসছিলেন। ভুক্তভোগী ওই নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ২০২০ সালের ৩১ মে ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ করে তানভীর। বিবাহের কিছুদিন পর থেকেই যৌতুকের জন্য মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। পরে ভুক্তভোগী আদালতে যৌতুক বিরোধী মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থেকেই নির্যাতনের মাত্রা বারিয়ে দেয়।
কিছু দিন পর ২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কাজী অফিসের মাধ্যমে ভুক্তভোগীকে তালাক দেয় তানভীর। তালাকের এক বছর পর আবারও ওই নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাদিকবার ধর্ষণ করে। বিয়ের কথা বললে বিভিন্ন ভাবে কালক্ষেপণ করতে থাকতে। এবছরের ২৭ শে জানুয়ারি সকালে সাড়ে ৬ টার দিকে তানভীর হোসেন (৫০) কোননাবাড়ী থানাধীন নীলনগর শাহিন আলমের চারতলা ভাড়া বাসার রুমে এসে আগের মতো বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ওই নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
পরে তাৎক্ষনিভাবে বিয়ের জন্য চাপ দিলে ওই নারীকে মারধর করতে থাকে তানভীর । এঘটনায় স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে তানভীরকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। ২৮ জানুয়ারী এঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগী ওই নারী। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তানভীরকে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ। এক মাসেরও বেশি সময় পর তানভীর শর্ত সাপেক্ষে জামিনে মুক্ত হয়।
পরে এ বছরের ২৬ জুন গাজীপুর আদালতে মামলার চার্জিসিট দাখিল করে গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিএমপি কোনাবাড়ি থানার উপ-পরিদর্শক শাখাওয়াত ইমতিয়াজ জানান, প্রাথমিক ভাবে মামলার সত্যতা মিলেছে। তবে, ফরেনসিক রিপোর্টে আলামত পাওয়া যায়নি। চার্জসিটে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী ওই নারী জানায়, স্বামী নিয়ে তানভীরে পাশের বাসায় ভাড়ায় থেকে বসবাস করছিল ওই নারী। হঠাৎ প্রথম স্ত্রীর মাধ্যমে তানভীর ওই নারীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা ধার নেয়। এরপর থেকেই বিয়ের আগেই ১০ বছরেরও বেশি সময় তার সাথে পরকিয়া সম্পর্ক হয়। ২০২০ সালে ওই নারীকে বিয়ে করে তানভীর। বিয়ের পর ওই নারী কাছে জমানো এবং তার বোনের জন্য জমি কেনার জন্য তার কাছে জমানো ২০ লাখ টাকা নিয়ে নেয় তানভীর। ওই টাকা চাওয়ার পর থেকেই তাদের মধ্যে বিবেধ সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত মামলায় গড়ায়। এখন নানাভাবে ওই নারীকে তানভীর হত্যাসহ হুমকি দিয়ে আসছে। প্রাণভয়ে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে ওই নারীকে।
এ বিষয়ে তানভীর হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ওই নারী তার বিবাহিত স্ত্রী। আওয়ামীলীগের পদ পাওয়ার কারণে একটি মহল শুত্রুতা বসত মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুর রহমান মাস্টার জানান, একটি মামলায় তানভীর জেলে ছিলো শুনেছি তবে, ধর্ষন মামলা কিনা তা জানা নাই। তবে, ধর্ষণ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলে তার বিরোদ্ধ অবশ্যই ব্যবস্থা নিবে।