বিয়ের তিন দিনের মাথায় সাতক্ষীরার তালায় পরিত্রাণ এনজিও’র প্রোগ্রাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঋতুপর্ণা দাস (১৯) নামে এক গৃহবধূকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। গত ৯ আগস্ট সকালে পাটকেলঘাটা থানার পুটিয়াখালি গ্রামে এ অপহরণের ঘটনা ঘটে। এঘটনার প্রায় এক মাস অতিবাহিত হতে চললেও গৃহবধূ ঋতুপর্ণাকে এখনও উদ্ধার করতে পারেনি থানা পুলিশ। দীর্ঘ সময়ও ঋতুপর্ণা দাসের কোন খোঁজ না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন ওই গৃহবধূর পরিবার ও স্বজনরা। এদিকে মামলার আসামীদের হুমকিতে চরম আতঙ্ক দিন কাটাতে হচ্ছে ওই গৃহবধূর পরিবারের সদস্যদেরকে।
স্থানীয় ও মামলা সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিনের সম্পর্কের জের ধরে গত ৫ আগস্ট তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের হরিশচন্দ্রকাটি গ্রামের লক্ষণ দাসের ছেলে লিটন দাস ও পাশ্ববর্তী যশোর জেলার কেশবপুর থানার বড়ঙ্গা এলাকার ভদ্রদাসের মেয়ে ঋতুপর্ণা দাস বিবাহ বন্ধন আবদ্ধ হয়।
তবে ঋতুপর্ণার সহাদর এই বিয়ের বিরোধিতা করে আসছিলেন। একপর্যায়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর লিটন তার স্ত্রী ঋতুপর্ণা দাসকে নিয়ে গত ৮ আগস্ট সকালে তার ভগ্নীপতি পাশ্ববর্তী পাটকেলঘাটা থানার অন্ত:গত পুটিয়াখালি গ্রামের গোপাল দাসের বাড়িতে বেড়াতে যায় এবং সে তার স্ত্রীকে সেখানে রেখে বিকালে চাকুরীর সুবাদে বাগেরহাট কর্মস্ললে চলে যায়।
৯ আগস্ট সকালে পরিত্রাণ এনজিও’র প্রোগ্রাম অফিসার উজ্জ্বল দাস ও পাশ্ববর্তী বড়ঙ্গা গ্রামের ভদ্র দাসের ছেলে ননী গোপাল দাসের নেতৃত্ব, সঞ্জয় দাস, সংকর দাস, তালার গোনালী এলাকার শৈলন দাসের ছেলে শশীবর দাস, পুটিয়াখালি এলাকার মৃত সুরন্দ্র দাসের ছেলে প্রবীর দাস, চন্দ্র শেখর দাস, উদয় দাস, সুজিত দাস গৃহবধূ ঋতুপর্ণাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় ঋতুপর্ণা স্বামীকে রেখে তাদের সাথে যেত রাজি না হওয়ায় পরিত্রাণ এনজিও’র প্রোগ্রাম কর্মকর্তা উজ্জ্বল দাসের সস্ত্রাসী বাহিনীরা গৃহবধূ ঋতুপর্ণাকে মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে ঋতুপর্ণা অচেতন হয়ে পড়লে তারা ঋতুপর্ণাকে নিয়ে চলে যায় পাশাপাশি লিটন দাসের ভগ্নিপতির বাসা থেকে র্স্বণের দুল, রুলি, চেইনসহ মূল্যবান জীনিসপত্র নিয়ে যায়। এসময় স্থানীয়রা তাদের এসব কর্মকান্ডের বাধাঁ দিতে গেলে স্থানীয়দেরও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
এঘটনায় লিটন দাস বাদী হয়ে গৃহবধূর নিজ এলাকা যশোরের কেশবপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ ও পাটকেলঘাটা থানাতে একটি সাধারণ-ডায়রী (ডায়রী নং-৩৮০) দায়ের করেন এবং সর্বশেষ গত ১৫ আগস্ট সাতক্ষীরা জেলা বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রট আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১০০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন লিটন দাস। মামলা দায়েরের পর থেকে পরিত্রাণ এনজিও’র প্রোগ্রাম কর্মকর্তা উজ্জ্বল দাসসহ তার বাহিনী লিটন দাসকে মামলা তুলে নিতে হুমকি ধামকি অব্যাহত রেখেছে।
এবিষয়ে লিটন দাস বলেন, জোরপূর্বক আমার স্ত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে চলে গেছে পরিত্রাণ এনজিও’র প্রোগ্রাম কর্মকর্তা উজ্জ্বল দাসসহ তার সস্ত্রাসী বাহিনী। একারনে আমি আমার স্ত্রীকে ফিরে পেতে সরকারের বিভিন্ন দফতরে লিখিতভাবে অভিযোগ ও মামলা দায়ের করছি। তবে অভিযোগ ও মামলা তুলে নিতে প্রতিনিয়ত উজ্জ্বল দাস ও তার সস্ত্রাসীবাহিনী আমাকে মুঠোফান হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমি যদি মামলা তুলে না নেয় তাহলে তারা আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলা ও আমার পরিবারের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে দিবে বলে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এসময় তিনি নিজের বিবাহিতা স্ত্রী ফেরত ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয় অভিযুক্ত পরিত্রাণ এনজিও’র প্রোগ্রাম কর্মকর্তা উজ্জ্বল দাসকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তাকে মুঠাফোন পাওয়া যায়নি।
এ বিষয় পরিত্রাণ এনজিও’র পরিচালক মিলন দাস বলেন, অভিযুক্ত উজ্জ্বল দাস যদি পরিত্রাণ এনজিও’র নাম ও পদবী ব্যবহার করে এ ঘটনাটি ঘটায় এবং তার এসমস্ত কর্মকান্ড ঘটানার বিষয় কেউ যদি লিখিত ভাবে অভিযোগ করে তাহলে উজ্জ্বল দাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এবিষয়ে পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মোর্শেদ বলেন, বিষয়টি এখনও তদন্তধীন আছে। অপরদিকে কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, অপরণের বিষয়ে অভিযোগ দায়ের সম্পর্কিত বিষয় কিছুই জানেন না তিনি। তবে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।