ছোট কাকা রাহুলদেব সাহা ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে। তাকে বাবার চেয়ে বেশি ভালোবাসতো ঠাকুরদাদা দীনবন্ধু সাহা ও ঠাকুর মা স্বপা রানী সাহা। কাকুকে সকল সম্পত্তি দিয়ে দেব বলে আমাদেরকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চেয়েছিল ঠাকুরমা ও ঠাকুর দাদা। বাবা কলেজে গেলে মাকে মারপিট করতেন তারা। আজে বাজে ভাষায় গালিও দিতেন তারা মাকে। গুন্ডা লেলিয়ে দিয়ে আমাদের ঘরে হামলা চালিয়েছেন ঠাকুরমা ও ঠাকুর দাদা। আর কতো সহ্য করবে মা। অবশেষে কাকার ইন্ধনে ঠাকুরমা ও ঠাকুরদাদার শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে আত্মহত্যার পথ ই বেছ নিল মা।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী তমিষ্ঠা সাহা বুধবার পাটকেলঘাটা শ্মশান মায়ের সৎকারের সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব এভাবেই তার মা মৌসুমী সাহার মৃত্যুর বর্ণনা দেয়।
মাকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য দায়ীদের দৃষ্টামূলক শাস্তি দাবি জানিয়ে তমিষ্ঠা বলেন, মা মঙ্গলবার বিকেল তিনটার দিকে নিজ ঘরের সিলিং ফ্যান ঝুলে আত্মহত্যার আগে নিজ হাতে আত্মহত্যার জন্য দায়ীদের নাম লিখে গেছে। পুলিশ এখনো তাদের ধরতে পারেনি। মায়ের অবর্তমানে তার লেখাপড়ার ক্ষতি হবে, তাকে নানান জ্বালায় জ্বলতে হবে এমন সব কথা বলার একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে তমিষ্ঠা। দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ পারুলিয়া গ্রামের স্বপন সাহা জানান, তালা থানাধীন বলরামপুরের দীনবন্ধু সাহার ছেলে উৎপল সাহার সঙ্গে ২০০৬ সাল পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল তার মেয়ে মৌসুমীর। বিয়ের দু’ বছর পর তমিষ্ঠা সাহা নামের একটি মেয়ে হয়। বেহাই বহান ও তাদের ছোট ছেলে রাহুল দেব সাহার শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মৌসুমীকে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করতে হলো। জামাতা উৎপল সাহা জাতপুর টেকনিক্যাল কলেজের প্রভাষক। উৎপল কলেজ যাওয়ার পরপরই নির্যাতনের খাড়া নামতো মৌসুমীর উপর। তাকে অনেকবার জানিয়েছে মৌসুমী। উৎপলকে সে বলেছিল বাড়ি ছেড়ে দিলে যদি বাবা ও মা খুশী হয় তাহলে এখান থেকে আর লাভ কি। কিন্তু উৎপল বাড়ি ছাড়তে চায়নি। পৈতৃক ভিটে ছেড়ে সে যাবেও বা কেন? শেষ পর্যন্ত ছোট্ট মেয়েটির মুখের দিকে না তাকিয়ে মৃত্যুকে বেছে নিল মৌসুমী। পৃথিবীতে এমনভাবে কোন মেয়েকে যেন মৃত্যুকে মেনে নিতে না হয়। মৌসুমীকে আত্মহত্যার জন্য বেহাই, বেহান দায়ী বলে সুইসাইড নোটে লিখে গেছে। নেপথ্য ছোট ছেলে রাহুলদেব সাহা বাবা ও মাকে দিয়ে বড় ভাই ও বউদিকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করতে চেয়েছিল। সে কারণে আত্মহত্যার জন্য তিনজনই দায়ী তাই তিনি মঙ্গলবার রাতে বেহাই, বেহান ও রাহুল দেব এর বিরুদ্ধে পাটকেলঘাটা থানায় মামলা দিয়েছেন। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে বুধবার সন্ধ্যায় মৌসুমীর লাশ পাটকেলঘাটা শ্মশানে সৎকার করা হয়েছে।
পাটকেলঘাটা থানার তদন্ত ওসি জেল্লাল হোসেন বলেন, মৌসুমী সাহার মৃত্যুটা দুর্ভাগ্যজনক। মৃতের বাবার এজাহারটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।