ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন।শীতের রিক্ততা মুছে প্রকৃতিজুড়ে আজ যেন কিসের শিহরিত স্পর্শ, গোলাপের সুবাস আজ না ছড়াক/কুসুমকলি আজ না হোক জীবন, তবু আজ বসন্ত…।’
বসন্তে নৈসর্গিক প্রকৃতি বর্ণচ্ছটায় বাঙ্ময় হয়ে ওঠে। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতই বাঙালি তরুণ মনে লাগে দোলা। হূদয় হয় উচাটন। ফুল ফুটবার পুলকিত দিন বসন্ত। বন-বনান্তে, কাননে কাননে-পারিজাতের রঙের কোলাহল, আর বর্ণাঢ্য সমারোহ। আবহমান বাংলার নৈসর্গিক প্রকৃতিতে এখন সাজ সাজ রব। হিমেল পরশে বিবর্ণ প্রকৃতিতে জেগে উঠছে নবীন জীবনের প্রাণোল্লাস। নীল আকাশে সোনা ঝরা আলোকের মতই হূদয় আন্দোলিত-আলোড়িত-আপ্লুত। ‘আহা আজি এ বসন্তে/ এত ফুল ফোটে এত বাঁশি বাজে এত পাখি গায়…।’ প্রকৃতির দিকে তাকালে শীত বরষার মত বসন্তকেও সহজে চেনা যায়। বাঙালির জীবনে বসন্তের উপস্থিতি সেই অনাদিকাল থেকেই। সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনেও বসন্ত ঠাঁই পেয়েছে নানা অনুপ্রাস, উপমা, প্রক্ষায় নানাভাবে। আমাদের ঋতুরাজ বসন্তের আবাহন আর পশ্চিমের ভ্যালেন্টাইন-ডে যেন এক বৃন্তের দুটি কুসুম। এ যেন এক সুতোয় গাঁথা দুই সংস্কৃতির এক দ্যোতনা। মানুষের মতই এ সময় পাখিরাও প্রণয়ী খোঁজে। বাসা বাঁধে। রচনা করে নতুন পৃথিবী।বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। কচিপাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালির মনেও লাগবে দোলা। বিপুল তরঙ্গ প্রাণে আন্দোলিত হবে বাঙালি মন। বাঙালি জীবনে বসন্তের আগমন বার্তা নিয়ে আসে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র। এ বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। বসন্তেই বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল। তাই কেবল প্রকৃতি আর মনে নয়, বাঙালির জাতীয় ইতিহাসেও বসন্ত আসে এক বিশেষ মাহাত্ম্য নিয়ে। বসন্ত হয়ে উঠে এক অনন্য উৎসব।