গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলার ওরাকান্দি ইউনিয়নের তিলছড়া গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষক পরিবারের লোকদের মারপিট ও বাড়ি-ঘর ভাংচুরের অভিযাগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। ভয় ও সংশয় নিয়ে দিন কাটাচ্ছে ভুক্তভোগীর পরিবার।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তিলছড়া গ্রামের শিক্ষক সরদার হাফিজুর রহমান সহ তাঁর তিন ভাই মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উদ্দিন সরদার, প্রবাসী হারুন-অর-রশিদ সরদার ও আজিজুর রহমান সরদারের পৈতৃক জমির পাশে একই গ্রামের জামাল মিয়ার দুই ছেলে আরমান মিয়া ও জিল্লুর রহমানদের বাড়ি করার সুবাদে হাফিজুর রহমানদের জায়গায় নলকুপ স্থাপন করেন। এ নিয়ে হাফিজুর রহমান প্রতিপক্ষের আরমানদের বলেন, তাদের জমি পরিমাপ করে দিতে এবং জমির সীমানা ছেড়ে কাজ করতে। এই নিয়ে গত ১৬ আগষ্ট সকালে জমি পরিমাপ করার জন্য উভয পক্ষ একত্রিত হয়। জমি পরিমাপের এক পর্যায়ে আরমান মিয়ার লোকজন ওই জমির পরিমাপ বানচাল করার জন্য হাফিজুর রহমানের লোকের ওপর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এনিয়ে হাফিজুর রহমানের ভাইপো রাজিব সরদার প্রতিউত্তর দিলে, পরে হাফিজুর রহমানের লোকজন ভাইপোকে চর-থাবা মেরে, ছোট মানুষ, ভুল করেছে মর্মে আরমান মিয়ার কাছে ভাইপো রাজীব সহ তারা ক্ষমা চান এবং বিষয়টির নিষ্পত্তি ওখানেই করে তারা তাদের বসত বাড়িতে ফিরে আসেন। পরে ওইদিন দুপুরে আরমানের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রবাসী আজিজুর সরদারের বাড়ি-ঘর ভাংচুর করে মালামাল লুট করে, প্রাণ বাঁচাতে প্রবাসী আজিজুরের স্ত্রী তাঁর মেয়েকে নিয়ে পাশে সেজ ভাসুরের বাড়িতে দৌড়ে গিয়ে ঘরে ঢুকে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। পরে আরমানের লোকজন তাদের পিছু ধাওয়া করে শিক্ষক সরদার হাফিজুর রহমানের বাড়িতে নির্বিচারে ভাঙচুর চালায়। এ অবস্থায় ওই বাড়ির ভাগিনা আমিনুর রহমান ও প্রতিবেশী রিপন মোল্লা বাঁধা দিলে আরমানের ছোট ভাই জিল্লুর রহমান তাদের লোকজন নিয়ে তাদেরকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। অবস্থার বেগতিক দেখে ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে ৯৯৯ এ কল করে জরুরী সাহায্য চান। পরে খবর পেয়ে কাশিয়ানী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গুরুতর আহত ওই দুই ব্যক্তিকে প্রথমে কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় এর মধ্যে রিপন মোল্লাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা হলে বীর মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উদ্দিন বলেন, আমার ভাই ও তার ছেলেরা বাড়ি থাকেনা। এজন্য আমাদের জমির কাছে যাওয়া হয়না। তিছছড়া রেল লাইনের পাশে আমাদের একটা পৈতৃক জমি আছে, ওই জমির পাশে আরমান ও তার ভাই বাড়ি করছে কিন্তু তাদের নলকুপ আমাদের জমির মধ্যে দিয়েছে। আমরা তাদের কাছে গিয়ে বলি, আপনারা জমি পরিমাপ করে তারপর কাজ করেন। কিন্ত তারা আমাদের কথা শুনেননি এক পর্যায়ে তারা রাজি হয় জমি পরিমাপ করতে গত ১৬ আগষ্ট যখন জমি পরিমাপ চলছিলো তখন আরমান মিয়াকে আমার এক ভাইপো বলেছিলো আমাদের জমি বুঝে দেন । এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এনিয়ে আমরা ভাইপোকে শাসন করে তার কাছে ক্ষমা চেযেছি, বলেছি ও ছোট মানুষ ওই কথা ঠিক বলেনি। ছোট মানুষ কেন বলবে জমি বুঝে দেওয়ার কথা। তাতে তারা ক্ষ্যন্ত হয়নি, পরে সন্ত্রাসী লোকজন নিয়ে আমাদেরকে মারপিট শুরু করে আমরা একপর্যায়ে ঘরে এসে দরজা বন্ধ করেও বাঁচতে পারিনি, আমাদের ঘর-বাড়ি ভাংচুর করে এবং আমার এক ভাগিনা আমিনুল ইসলাম ও প্রতিবেশী রিপন মোল্লা বাধা দেওয়ায় তারা তাদেরকে বেধরক মারপিট করে। স্থানীয় লোকজন তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে আমরা এবিষয় নিয়ে সেই দিন থেকে কাশিয়ানী থানায় মামলা করার জন্য যাচ্ছি কিন্তু পুলিশ আমাদের মামলা নেয়নি। শুধু একটি অভিযোগ নিয়েছে। পুলিশ বলে আপনার মামলা দিলে ওরা আপনাদের নানা ভাবে হয়রানি করবে। আমরা সব সময়তো আপনাদের কাছে থাকতে পারবো না। তাই স্থানীয় ভাবে মিমাংসা করে ফেলেন।
এবিষয়ে আরমান মিয়া বলেন, একটা ঘটনা হয়েছে তা আমরা স্থানীয় ভাবে মিমাংসা করে ফেলবো। আর ঘর ভাংচুরের বিষয়ে বলেন, যে স্থানে মারামারি হয় সেখানে যদি কোন ঘর-বাড়ি থাকে তাতে একটু ক্ষতি হয়। আর ওদের দুই জন হাসপাতালে আছে এটা সত্য। আমরা দ্রুত একটা তারিখ দিয়ে স্থানীয় ভাবে মিমাংসা করে ফেলবো।
এ ঘটনার পর থেকে ওই মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষক পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ও অজানা শঙ্কায় দিন পার করছে এবং এ বিষয়ে তাদেরকে দ্রুত আইনি সহায়তা প্রদান করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চেয়ে গণমাধ্যমকে জানান ভুক্তভোগীর পরিবার।