মাদক মামলায় গ্রেফতার হওয়া মুক্তিযোদ্ধার পুত্র বাবলু সরদারের সাতক্ষীরার গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা জুড়েন সরদারের ছেলে বাবলু সরদারকে গোয়েন্দা পুলিশের লোকজন পিটিয়ে হত্যা করেছে। তবে পুলিশের দাবি, বাবুল সরদার (৫৬) গোয়েন্দা পুলিশের লকআপের মধ্যে আত্মহত্যা করেছে। তার বিরুদ্ধে আরও ৪ টি মাদক মামলা রয়েছে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন আলম চৌধুরী জানান, বাবুল সরদার নামের ওই ব্যক্তিকে শনিবার সকালে তার গ্রামের বাড়ি দেবহাটা উপজেলার বসন্তপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে ৫০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, গ্রেফতার হওয়া বাবুল সরদারকে গোয়েন্দা পুলিশের লকআপে রেখে দেওয়া হয়। আজ রবিবার তাকে আদালতে নিয়ে যাবার কথা ছিল। শনিবার দিবাগত রাতের কোন এক সময় সে গলায় নিজের কোমরে ব্যবহৃত নাইলনের মোটা সুতা দিয়ে লকআপের গেটের গ্রীলের সাথে ফাঁস লাগিয়ছ আত্মহত্যা করে। পরে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়।
বাবুল সরদারের মেয়ে সুলতানা মুন্নি জানান, শনিবার সকালে বোরকা পরা এক নারী আকস্মিকভাবে তাদের বাড়িতে ঢুকে তার বাবার ঘরে যেয়ে ফেন্সিডিল রেখে গোয়েন্দা পুলিশকে ইশারা করে। সঙ্গে সঙ্গে তার বাবাকে ওই ফেন্সিডিলসহ গ্রেফতার দেখানো হয়। এসময় ঘরে তল্লাশি চালিয়ে ৩৫ হাজার টাকাও নিয়ে যায় তারা। মুন্নি বলেন, আমার বাবা কোমরে কখনও সুতালি (রশি) ব্যবহার করতেন না। তাহলে তিনি কিভাবে লকআপের মধ্যে আত্মহত্যা করলেন প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, গেটের গ্রীলের সাথে নিজেকে সুতালিতে ঝুলিয়ে কি কখনও আত্মহত্যা করা সম্ভব? পুলিশ তাকে হত্যা করেছে। আমরা এর বিচার চাই।
এদিকে, বাবুল সরদারের ছেলে আলমগীর হোসএন জানান, তার বাবাকে ষড়যন্রমূলক ভাবে ফেন্সিডিলসহ আটক করা হয়। এসময় বাড়িতে থাকা ৩৫ হাজার টাকাও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা নিয়ে যায়। তিনি বলেন, পুলিশ আমার বাবাকে মারধর করেছে এবং এক পর্যায়ে তিনি মারা গেছেন। এখন পুলিশ বলেছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। আলমগীর হোসেন আরও বলেন, পুলিশ আমাদের বাড়িতে ফোন করএ জানিয়েছে, আপনাদের লোক আত্মহত্যা করেছে। লাশ নিয়ে যান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ফেন্সিডিলসহ গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি নিজের কোমর থাকা নাইলনের সুতা পেচিয় লকআপের গেটের গ্রীলে ঝুলে রাত ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে যে কোন এক সময়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে ম্যাজিস্ট্রেট আকতার হোসেন ও মেডিকেল অফিসার ডা. জয়ন্ত কুমারের উপস্থিতিতে লাশ নামিয়ে ময়নাতদন্ত করার জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সুপার আরও জানান, এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহএলা ও গাফিলতির কারনে পুলিশের এএসআই সোহেল শেখ ও কনস্টেবল শরিফুলসহ দুই সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।