সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিষাখালির এক হাজার ৩২০ বিঘা জমি হাইকোর্ট খাস করার আদেশের প্রেক্ষিতে ওই জমি ভূমিহীনদের স্থায়ী বন্দোবস্ত সম্পর্কিত আবেদন দু’ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে। গত পহেলা নভেম্বর পারুলিয়া ইউনিয়নের নোড়া গ্রামের ইসাদ আলীর ছেলে ভূমিহীন নেতা আনারুল ইসলামের দায়েরকৃত রিট পিটিশন শুনানী শেষে মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম ও মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানর সমম্বয় গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
মুজিবনগর খলিষাখালি ভূমিহীন আবাসন কেন্দ্রের সভাপতি আনারুল ইসলামের দায়েরকৃত জেলা প্রশাসকসহ আটজন বিবাদীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ৯৫৩৯ নং রিট পিটিশন থেকে জানা যায়, দেবহাটার পারুলিয়া ইউনিয়নের খলিষাখালি মৌজায় এক হাজার ৩২০ বিঘা জমি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ফেলে রেখে ভারতে চলে যায়। ওই জমি বিনিময় দলিল সূত্র দাবি করে সখীপুরের নজরুল ডাক্তার, আনারুল ইসলাম, কাজী গোলাম ওয়ারেশ, আতিকুর, সালাম, আহসানউল্লাহ ও রেজাউলসহ ১৮০জন অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে দখল করে আসছিল। এ ছাড়া তারা খলিষাখালির ১২ দশমিক ৫৫ একর সরকারি খাস খাল বন্দোতাবস্ত ছাড়াই স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দখল করে আসছিল। দেবহাটা সহকারি জজ আদালত ও জজ আদালতে দায়েরকৃত ভূমির মালিক দাবিদারদের দায়েরকৃত মামলার রায় ২০১২ সালে সরকার পক্ষে চলে যায়। পরাজিত জমির মালিকরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে সিভিল রল নং-৪৭ (এফএম) ২০১২ তৎসহ এফএমএ ২০১৬/২০১২ মোকদ্দামা দায়ের করেন। ২০১৬ সালের ১০ আগষ্ট মহামান্য হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের একাংশ ওই জমি খাস শ্রেণীভুক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ্য গ্রহণের জন্য ভূমি মম্ত্রণালয়ের সচীব ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২৫৬৮/১৭ নং লিভ টু আপিল শুনানী শেষে সুপ্রিম কোর্ট চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি এক আদেশ ওই জমি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে নিয়ন্রণ ও দেখভালের নির্দেশনা দেন। এ আদেশেও জমির মালিক দাবিদারদের বিপক্ষ যাওয়ায় তারা চলতি বছরের ৮ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট ১৬৮/২০২১ নং সিভিল রিভিশন দাখিল করেন। রিট পিটিশন শুনানীর জন্য নির্ধারিত কোন আদালতে তালিকাভুক্ত হয়নি।
আনারুল ইসলামের ৯৫৩৯ নং রিট পিটিশন ও ১০৬ জন ভূমিহীনের পক্ষে এফিডেফিড থেকে জানা যায়, ১৫ বছর ধর ভূমিহীনরা ওই জমিতে বসবাস শুরু করে স্থায়ী বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, দেবহাটা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও ভূমি সচীবের কাছে কয়েক দফায় আবেদন করেন। মহামান্য হাইকোর্ট ওই জমি খাস করার নির্দেশ দেওয়ার পরও ভূমি সচীব ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনার যথাযথ কাজ না করায় ভূমিহীনরা হতাশ হয়। সুপ্রিম কোর্টের লিভ টু আপীর আদেশে জমির মালিক দাবিদারদের বিপক্ষে যাওয়ার পরও তারা একই আদালতে সিভিল রিভিশান করে (নাম মাত্র কাগজপত্র জমা দিয়ে) জমি দখলে রাখতে চায়। তাদের এ চালাকি বুঝতে পেরে সাপমারা খালের খলিষাখালির অংশ দু’ পাশে বসবাসরত উচ্ছেদ হওয়া পাঁচ শতাধিক ভূমিহীন গত ১১ সেপ্টেম্বর ওই জমির তিন চতুর্থাংশ স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। ব্যারিষ্টার ইমরুল হায়দার গত পহেলা নভেম্বর এর আদেশটি নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, বিনিময় দলিল বন্ধ না হলেও জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে জমির একাংশর নামপত্তন, বাংলা ১৪১৮ সাল পর্যন্ত জমির খাজনা দিয়ে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তর প্রভাবে খাটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন নজরুল ডাক্তারও তার সহযোগি জমির মালিক দাবিদাররা। ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করতে এ পর্যন্ত জমির মালিক দাবিদাররা ভাঙচুর, লুটপাট ও মারপিটের নয়টি মামলা দিয়েছেন। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিশেষ আলোচনা সভা শেষে নীচের তলায় আসার পরপরই ওইসব জমির কয়েকজন মালিকরা সুণীল ম্বর্ণকার, গোলাপ ঢালীসহ তিনজনকে মারপিট করে বলে অভিযোগ রয়েছে।