ভারতে পাচারকালে মোটর সাইকেল থেকে লাফিয়ে পড়া এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে উদ্ধার করে পুলিশের সহায়তায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার ভোর চারটার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁকালের আহম্মদ আলী ও সদর থানার উপপরিদর্শক বুলবুল আহম্মেদের সহযোগিতায় তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল চিকিৎসাধীন খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার ধামরাইল গ্রামের ও ঘুঘরাকাটি ফাজিল মাদ্রাসার প্রথম বর্ষের মানবিক বিভাগের এক ছাত্রী জানান, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার মধ্যে চাপড়ার আমিনুল ইসলাম গাজীর ছেলে মাহামুদুল হাসান হৃদয়ের নানার বাড়ি তাদের গ্রাম। দাখিলে পড়াশুনা করার সময় মাদ্রাসায় যাওয়া আসার পথে হৃদয় তাকে উত্যক্ত করতো। কুপ্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় হৃদয়ের বন্ধু ধামরাইল গ্রামের জামালউদ্দিন মোড়লের ছেলে শাহমত তাকে বিভিন্ন ভাবে বোঝাতো। বিষয়টি বাড়িতে জানানোয় বাবা ও মা রাজি না হওয়ায় চলতি বছরের ৮ মার্চ শাহমতের কথা মত হৃদয়ের উদ্দেশ্যে ঘর ছাড়ে সে। হৃদয়ের বন্ধু ভোমরার হালিমের বাড়িত এসে একদিন থাকার পর ১০ মার্চ সাতক্ষীরার এক নিকাহ রেজিষ্টারের মাধ্যমে হৃদয়কে বিয়ে করে সে। বিয়ের পরপরই ঢাকার মীরপুর ১নং এ যেয়ে একটি ভাড়া বাসায় থাকতো তারা। চার মাস পর মা হৃদয়ের মোবাইল ফোন নাম্বার যোগাড় করে দু’জনকে একসাথে বাড়ি ফিরতে বলে। আজ থেকে দেড় মাস আগে দুজন বাড়ি ফিরে দুপুরে খেয়ে বিকালে একাকি চলে যায় হৃদয়। মা তাকে যেতে না দিলে শাহমতের সঙ্গে যোগাযোগ করে গত মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে সে বাড়ি থেকে বের হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ি শাহমতের ছেলে বদিয়ার একটি ইজিবাইক নিয়ে রাস্তায় অপেক্ষা করছিল। সেখান থেকে চাঁদকাটি বাজার পার হয় একটি ফাঁকা জায়গায় যাওয়ার পর শ্বাশুড়ি রাশিদা বেগম ওই ইজিবাইকে ওঠেন। সেখান থেকে বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর একটি ফাঁকা জায়গায় শাহমতকে একটি মাইক্রোবাসের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বদিয়ার ইজিবাইক থামায়। ইজিবাইক থেকে নামতে বলে তোলা হয় মাইক্রোবাসে। গাড়িতে আগে থেকেই বসে ছিল হৃদয়। একপর্যায়ে শাহমত, হৃদয় ও তাকে নিয়ে ছেড়ে যায় মাইক্রোবাসটি। কয়েক মিনিট পর শাহমত তাকে একটি রোমাল দেয়। রোমাল দিয়ে মুখ মোছার পরপরই সে জ্ঞান হারায়। দীর্ঘক্ষণ গাড়ি চলার পর সে একটি বন্ধ ঘরের মধ্যে শাহমত, হৃদয়সহ আরো অপরিচিত দু’জনকে দেখতে পায়। এরপরপরই হৃদয় ও শাহমত তার মুখ বেঁধে ফেলে। অপরিচিত ওই দু’জন হৃদয়ের হাতে বেশ কিছু টাকা দেওয়ার পর তাকে বিক্রি করা হচ্ছে বুঝতে পেরে হৃদয় ও শাহমতের পায় ধরে জীবন ভিক্ষা চায় সে। এ সময় তাকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর এক অপরিচিত বাদে তিনজন ঘরের বাইরে চলে যায়। ওই ব্যক্তি তাকে ধর্ষণের চেষ্টাকালে বাধা দেওয়ার একপর্যায়ে তার মুখ বাঁধা কাপড় খুলে যায়। চিৎকার করায় তার মাথার বাম পাশ একটি ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত করলে সে আবারো জ্ঞান হারায়। জ্ঞান ফেরার পর মুখ বাঁধা অবস্থায় সে দেখতে পায় মাথার বাম পাশের কিছু চুল কেটে সেখানে গাছ গাছড়া বেটে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। পর তাকে অপরিচিত একজনের মোটর সাইকেলে বসিয়ে পিছনে একজন তাকে ধরে বসে। মোটর সাইকলটি চলা অবস্থায় তার খিচুনি শুরু হলে রাস্তার পাশে একটি স্থানে তাকে ফেলে দিয়ে চলে যায় তারা। সেখান থেকে একটি বাড়িতে ঢুকে পড়ার পর সে আর কিছুই বলতে পারে না। বুধবার সকালে সে হাসপাতালে ভর্তি আছে বলে বুঝতে পারে।
সাতক্ষীরা শহরতলীর বাঁকালের তরিকউদ্দিন মোল্লার ছেলে আহম্মেদ মোল্লা বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে একটি মেয়ে তার রিক্সা গ্যারেজে ছুঁটে এসে পড়ে জ্ঞান হারায়। দীর্ঘক্ষণ ইজিবাইকের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার পর সদর থানার উপপরিদর্শক বুলবুল আহম্মদের সহযোগিতায় ওই মেয়েটিকে ভোর চারটার দিকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ধামরাইল গ্রামের মনির হোসেন বলেন, খবর পেয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে এসে ভাইঝি’র সঙ্গে দেখা করেন। হৃদয়, তার মা, শাহমত, শাহমতের ছেলে বদিয়ার রহমান পরিকল্পিতভাবে তার ভাইঝিকে ভারতে পাচার করছিল।
জানতে চাইলে মাহামুদুল হাসান হৃদয় বুধবার বিকালে তার ০১৯৫৪-৬৪৩৬২১ নং মুঠোফোন রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ মনতাজ মজিদ বলেন, মেয়েটির মাথার বাম পাশে ভারী জিনিস দিয়ে আঘাতের ফলে রক্তাক্ত জখম হয়েছে। তবে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা এই মুহুর্ত বলা যাবে না।
সদর থানার উপপরিদর্শক বুলবুল আহম্মেদ বলেন, আহম্মদ আলীর সহায়তায় মেয়েটিকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।