গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার শেখ বাড়িতে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ (মঙ্গলবার) জন্মগ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর ডাক নাম ছিল ‘খোকা’। শেখ মুজিবুর রহমানের বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়েরা খাতুন। পরবর্তীতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও বাংলাদেশের জাতির জনক হিসেবে পরিচিতি হন বিশ্বব্যাপী। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক সভায় লাখো জনতার সামনে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি ঘোষণা দিয়েছিলেন তোফায়েল আহমেদ।
এ সভায় শেখ মুজিব ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবির পক্ষে তার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা। অন্নদা শঙ্কও রায়ের কবিতায় লেখা হয়েছে, ‘যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরি মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান’। বঙ্গবন্ধু ছোটবেলা থেকেই অন্যায় দেখলে কোনো চিন্তা না করে তার প্রতিবাদ করতেন। এটা ছিল তার সহজাত প্রবৃত্তি। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পড়ে আমরা জানতে পেরেছি, তার চিন্তা-চেতনা ছিল তারুণ্য ভিত্তিক। সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ও আবেগই পরবর্তী সময়ে প্রতিবাদী রূপ ধারণ করে তার মন ও মননে সূচনা ঘটিয়েছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের। বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন, অধিকার পেতে হলে নীরব থাকলে চলবে না; সবাইকে জাগাতে হবে, তাদের মনে গেঁথে দিতে হবে স্বাধীনতার মন্ত্র। তরুণ সমাজের কাছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অনুপ্রেরণার নাম। ১৯৪০-১৯৭৫’র ১৪ আগস্ট দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধুকে তারুণ্যের ঔজ্জ্বল্যে এক ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। তবে ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁর রাজনৈতিক ইতিহাস, সাংগঠনিক কর্মকান্ড এবং চিন্তা-চেতনার পরিধি তরুণ প্রজন্মের সামনে সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে। যাতে এই মহান ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, কর্মময় জীবন ও নীতি-আদর্শ সম্পর্কে তরুণ প্রজন্ম অবহিত হতে পারে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের ১৮ জনকে সেদিন হত্যা করা হয়েছিল। ইতিহাসে বর্বরোচিত এই হত্যাকান্ডে পাষন্ড ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পায়নি শিশু রাসেল, শিশু বাবু, এমনকি অন্তঃসত্ত্বা বধূও। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের পরেই সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামান ছিলেন দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭৫’র শোকাবহ সেই দিনটি আমরা চোখে দেখিনি। তবে এই দিনের ইতিহাস আমাদের বিবেককে জাগ্রত করে তোলে। ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, সেদিন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক। একই সময়ে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে ও যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মণির বাসায় হামলা চালায়। এসময় নিহত হন শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি। একই সময় বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াতের বাসায় হামলা করে সেরনিয়াবাত ও তার কন্য বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় বেন্টু খানকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর অন্য দুই সন্তান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা জার্মানিতে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তরুণদের সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল আন্তরিক সম্পর্ক। তরুণদের সংগ্রামের বাণী দিতেন, রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সক্রিয়তায় উৎসাহিত করতেন, শিক্ষা এবং শিক্ষার আদর্শগুলো নিজেদের জীবনে ধারণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। তরুণদের তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সাহস দিতেন। এই শোকাবহ মাসে বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহিদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। তরুণদের ভাবনায় ‘বঙ্গবন্ধু’র শোক শক্তিতে রুপান্তিত হবে।