সাতক্ষীরার আশাশুনির বন্যাকবলিত প্রতাপনগরের হাওলাদার বাড়ি সাঁতার কেটে নামাজ আদায় করা সেই মসজিদটি মূল ভূখন্ড থেকে অনেকটা দূরে চলে যাওয়ায় সেখানে নির্মান করা হয়েছে একটি ভাসমান মসজিদ। মসজিদটি নির্মান হওয়ায় দূর্গত এলাকার মুসল্লিদের কিছুটা হলেও কষ্ট লাঘব হয়েছে। সেখানে তারা প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছেন।
স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ও ইয়াসের সময় খোলপেটুয়া নদীর কয়েকটি পয়েন্টে বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে প্রতাপ নগর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। জনবসতি এলাকায় চলে জোয়ারভাটা। এরই মধ্যে গত ১০ আগষ্ট থেকে সেখানকার একটি রিংবাধ ভেঙ্গে হাওলাদার বাড়ি বায়তুন নাজাদ জামে মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করে পানি। এরফলে মসজিদটি মূল ভূখন্ড থেকে অনেকটা দূর চলে যাওয়ায় প্রায় সময়ই পানিতে ডুবে থাকে। যেকোন সময় মসজিদটি ভেঙ্গে পড়তে পারে, তলিয়ে যেতে পারে নদীতে। তবু মসজিদটির ইমাম হাফেজ মইনুর রহমান প্রতিদিনেই সাঁতার কেটে ডুবন্ত ওই মসজিদেই আজান ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন। এমনকি রাতেও ঘুমাতেন মসজিদটির ছাদেই। ইমামের এই খবর পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ইমামকে একটি নৌকা প্রদান করেন একটি বেসরকারী সংগঠন। এক পর্যায়ে ইমাম ও মুসল্লিদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে সেখানে সম্প্রতি নির্মান করা হয়েছে একটি ভাসমান মসজিদ। চট্টগ্রামের আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন প্রায় পাঁচ লক্ষ ব্যয় এই মসজিদটি নির্মান করছেন। মসজিদটির নামকরন করা হয়েছে “আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডশন মসজিদ নুহ (আঃ)।” ৫০ ফুট লম্বা (দঘর্য) ও ১৬ ফুট চওড়া (প্রস্ত) নৌকার তৈরী এই ভাসমান মসজিদ একসাথে ৫০-৬০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। মসজিদের সাথে রয়েছে মিনি অজুখানা, টয়লেট, সোলার লাইট, সাউন্ড সিস্টেম, কোরআন শরীফসহ বুক শলফ। এ ছাড়া ভাসমান মসজিদে মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে একটি ছোট নৌকা।
আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন জানান, ভাসমান মসজিদটি পেয়ে সেখানকার মুসল্লিরা খুব খুশী।
মসজিদটির ইমাম হাফেজ মইনুর রহমান বন্যা প্লাবিত হাওলাদারবাড়ি মসজিদটি টিকিয়ে রাখার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, সরকারি ও বেসরকারি ভাবে মসজিদ রক্ষার্থে এখনো কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। মসজিদের পাশের শতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে ভেসে গেছে। মসজিদের ৩ পাশের মাটি ধসে গেছে। মসজিদের বারান্দায়ও ফাটল ধরছে। ভীতের নীচের মাটিও অনেকটা ভেসে গেছে। দ্রুত মসজিদ রক্ষার্থ কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে যে কোন সময় এটি ভেঙ্গে পানিতে প্লাবিত হতে পারে। ধর্মপ্রাণ মানুষসহ উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও জন প্রতিনিধিসহ সকল সহযোগিতা করলে মসজিদটি রক্ষা সম্ভব হতে পারে বলে তিনি জানান।