খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার শিয়ালী গ্রামের মল্লিকপাড়ায়, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার রাখাইন এলাকায়, সাতক্ষীরার ফতেপুর ও চাকদাহ গ্রামের হিন্দু পাড়ায়, যশোরের অভয়নগর, নাসিরনগর, ক্কসবাজারের রামু, শাল্লার হিন্দু পল্লী ও মৌলভী বাজার কুলাউড়ার আদিবাসীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা ভাংচুর, লুটপাট ও জমি জবর দখলের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখা ও তার অঙ্গ সংগঠণের পক্ষে থেকে এ কর্মসুচি পালন করা হয়।
শনিবার বিকেল চারটায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে আশাশুনি- সাতক্ষীরা সড়কে বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার আহবায়ক সুজন ঘোষের সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ চলাকালে বক্তব্য রাখেন সংগঠণের উপদেষ্টা অ্যাড. পঙ্কজ কুমার মল্লিক, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা ডাঃ সুব্রত ঘোষ, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সাতক্ষীরা শাখার সভাপতি প্রাণনাথ দাস, মানবাধিকার কর্মী রঘুনাথ খাঁ, হিন্দু মহাজোট সাতক্ষীরা শাখার সভাপতি মিলন বিশ্বাস, হিন্দু যুব পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সদস্য সচিব মনদীপ মণ্ডল, বাংলাদেশ হিন্দু ছাত্র পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার আহবায়ক ধীমান সরকার, হিন্দু পরিষদ শ্যামনগর উপজেলা হিন্দু পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক পিযুস বাউলিয়া পিন্টু, হিন্দু পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার যুগ্ম আহবায়ক উত্তম দাস, দলিত পরিষদের নেতা জগবন্ধু দাস, তাপস কুমার ঘোষ, হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সাতক্ষীরা জেলা শাখার উপপ্রচার সম্পাদক অনামিকা সরকার প্রমুখ।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ধর্ম নিরপেক্ষতাকে মুল স্তম্ভ রেখে সংবিধান রচিত হয়। অথচ ১৯৮৫ সালে অষ্টম সংশোধনী এনে সংবিধানকে কাটা ছেঁড়া করে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা দেন তৎকালিন রাষ্ট্রপ্রধান এইচ এম হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও তারা সংবিধান সংশোধন করেননি। এমনকি ২০০৮ সালে ১০ম সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনে ইস্তেহারে ভোটে জয়লাভ করলে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার প্রতিশ্র“তি দিলেও ক্ষমতায় আসার তারা সংখ্যাগুরুদের ভোট হারানোর ভয়ে পূর্বের কথা রাখেননি। তাই বর্তমান সরকারের আমলে সংখ্যালঘুরা তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক ছাড়া কিছু নয়। যেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে হিন্দুদের সমঅধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে সেখানে খুলনার রুপসা উপজেলার শিয়ালী মল্লিকপাড়ায় ৫৬টি হিন্দু বাড়িতে ভাঙচুর লাুটপাট, ৩৫ জনকে পিটিয়ে জখম ও ১০টি মন্দির ও মন্দিরের ভিতর প্রতিভা ভাঙচুর স্বাভাবিক বলে মনে হয়। এক হেফাজত নেতার কথার ব্যাখা দিয়ে কথা বলায় শাল্লার হিন্দু পাড়ায় হেফাজত ইসলামের নামে হামলা চালানো হয়।
ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও মন্দিরে হামলা চালানো হয়। আগে তেকে বিষয়টি জানার পর ও তাৎক্ষণিক কোন ব্যবস্থা নেয়নি আইন প্রয়োগকারি সংস্থা। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ৫৪ জ কে গ্রেপ্তার করা হলেও তারা জামিনে মুক্তি পেয়েছে। অথচ ধর্ম অবমাননার নামে ঠুনকো যুক্তি উপস্থাপন করে গ্রেপ্তার করা ঝুমন দাস গত সাড়ে ৫ মাসেও হাইকোর্ট থেকেও জামিন পাননি। শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জের বাঘ বিধবার মেয়ে রুপালী ধর্ষণ, মুনিসগঞ্জের ফুলতলায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আকবর আলীর নেতৃত্বে হিন্দু বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ , মন্দির ভাঙচুর, কাছড়াহাটিতে উজ্জ্বল মণ্ডল ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর জমি জবরদখলকারিদের হামলা, ভুরুলিয়ায় দেবেন মণ্ডলের ছেলেকে হত্যূা ও পরবতীতে তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় বিচার হয়নি। কালীগঞ্জের ফতেপুর চাকদাহ গ্রামে ১৫টি হিন্দু পরিবারের উপর মেলৈবাদিদের সহিংসতার নাংক দৃষ্টিপাত সম্পাদক জিএম নূর ইসলাম ও তার সহযোগিদের গত ১০ বছরেও কোন বিচার হয়নি।
বিচার হয়নি দেবহাটার টিকেট এ কালী প্রতিমা ভাঙচুর, আশাশুনির প্রতাপননগর, সদরের বাবুলিয়া ও শহরের পুরাতন সাতক্ষীরার সুভাষ ঘোষের বাড়ির দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনার কোন বিচার হয়নি। হিন্দু নাবালিক দের ফুসলিয়ে নিয়ে ধর্মান্তরিত করার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট নোটরী পাবলিকদের কোন শাস্বিত হয়না। ওইসব মেয়েদের বাবা মায়ের জিম্মায় না দেওয়া গেলেও অনেক ক্ষেত্রে কথিম মুসলিম শ্বশুরের জিম্মায় দেওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশিষ্ঠ জনেরা। তাই মাতুভূমি বাংলাদেশে বসবাস করতে হলে সকল হিন্দুদের একতাবদ্ধ হয়ে হিন্দুদের উপর সকল অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।