সারা দেশের ন্যায় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে করোনা প্রকোপের শুরু থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেই সকল সম্মুখ যোদ্ধাদের মত কালিগঞ্জ করোনা এক্সপার্ট টিমের একঝাঁক স্বেচ্ছাসেবক নিরলসভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম করে যাচ্ছেন সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য।
তবে করোনা প্রতিরোধের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় অসামান্য ভূমিকা রেখেছিল মথুরেশপুর টিম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহামারী করোনার দুঃসময়ে উপজেলা প্রশাসনের গঠিত স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী কালিগঞ্জ করোনা এক্সপার্ট টিম। একই সময় উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়নে টিম গঠন করা হয়। প্রশাসনের নির্দেশনায় স্ব স্ব ইউপি চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে করোনা এক্সপার্ট টিমের স্বেচ্ছাসেবকরা প্রতিদিনই আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে মানবতার কল্যানে নিজের দ্বায়বদ্ধতা থেকে রাস্তায় নেমে আসে সাধারণ মানুষদের সেবা করতে। ২৫ মার্চের লকডাউন থেকে শুরু করে প্রশাসনের আহবানে যুবকরা আজ অবধি সেই স্বেচ্ছাসেবা দিয়ে যাচ্ছে।
তবে করোনার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগে মথুরেশপুর করোনা এক্সপার্ট টিমের অবদান রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের দিক নির্দেশনায় সর্বোচ্চ ভদ্রতা ও সামাজিকতা মেনে করোনা প্রতিরোধে সাধারণ মানুষদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে, মাস্ক পরিধান করতে, সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে, সর্বোপরি গনজমায়েত এড়িয়ে চলার পরামর্শসহ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে টিমের ২৬ জন যুব স্বেচ্ছাসেবক। তাছাড়া করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্পানে মানুষদের নিরাপদে থাকতে ও আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসতে, দূর্যোগকালীন সময়ে তাদের পাশে থেকে খোঁজ খবর নিতে, দূর্যোগে নদীর বেড়ী বাঁধ মেরামত সহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজে অংশগ্রহন করে মথুরেশপুর করোনা এক্সপার্ট টিমের সদস্যরা। এখন সাধারণ মানুষ বলছে – কেন তোমরা বাড়ির খেয়ে বনের মহিষ তাড়াচ্ছো? যদিও তাদের স্বার্থহীন কাজ, তবুও অনেকটা বাড়ির খেয়ে বনে মহিষ তাড়ানোর মতো। করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি নিয়ে আজকে যারা নিজেদের, পরিবারের কথা চিন্তানা করে মৃত্যুর ভয় না করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, তারা অবশ্যই সমাজের কল্যানকামী মানুষ। কিন্তু বিনা স্বার্থের পরিশ্রমের এই মহান মানুষগুলোর খবর কেউ নিচ্ছে কি? স্বেচ্ছাসেবী যুবকরা কি পাচ্ছে? তারাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারাই করোনা যোদ্ধা, তাদের মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। একদিন যুদ্ধটা থেমে যাবে, করোনার বিপক্ষে আমরা জিতে যাবো এটাই সকলের কাম্য। মথুরেশপুর করোনা এক্সপার্ট টিমের লিডার ইমরান আলী জানান, করোনা ভাইরাসের মহামারী শুরুর পর থেকে উপজেলা প্রশাসনের দিক নির্দেশনায় করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে টিমের সদস্যদের নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করছি। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে লকডাউনের মধ্যে মানুষকে ঘরে রাখা, বিদেশ থেকে ফেরা মানুষদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিন নিচ্ছিত, সামাজিক দূরত্ব বজায়, গনজমায়েত থেকে বিরত রাখতে পরামর্শ প্রদান করেছি। বর্তমানে করোনা বিস্তার রোধে সকলকে মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্হ্যবিধি মেনে চলতে প্রতিনিয়ত টিমের সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত আছে। প্রশাসনের নির্দেশে করোনা সনাক্তের বাড়ি লকডাউনে অংশ নিচ্ছি। যতটুকু সাধ্যমত চেষ্টা করছি সঠিকভাবে করোনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। মথুরেশপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গাইন বলেন, করোনাকালীন সময় যারা মানুষের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে লড়াই করে যাচ্ছেন তারা করোনা যোদ্ধা। উপজেলা প্রশাসনের আহবানে যুবকরা স্বেচ্ছাসেবা দিয়েছে, এখনও দিয়ে যাচ্ছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ইউনিয়নে তাদের ভূমিকা প্রসংসিত। টিমের স্বেচ্ছসেবকরা আপনাকে-আমাকে সকলকে করোনা ভাইরাস ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা করতে কাজ করছে। তারা আগামী দিনের কান্ডারী যুবসমাজ। আপনারা তাদের কার্যক্রমকে উৎসাহিত করুন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক রাসেলের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনাকালীন সময় মথুরেশপুর করোনা এক্সপার্ট টিম খুবই একটিভ। ফেসবুক, মেসেঞ্জার গ্রুপসহ স্থানীয় পত্রিকায় তাদের কার্যক্রম সব সময় আমি দেখি। সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক ব্যবহার, লকডাউন সহ বিভিন্ন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা উচ্চ মাপের। আমি তাদের প্রতি খুবই খুশি। সামাজিক দায়িত্ববোধ ও দায়বদ্ধতায় নিঃস্বার্থ ভাবে দেশের জন্য, দেশের মানুষের সেবায় কাজ করায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। আরো বলতে চাই, তাদের দেখে বাকিরা যদি করোনা প্রতিরোধে কাজ করে তাহলে দেশে দ্রুত করোনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাদের কার্যক্রমের ধারা অব্যাহত থাকুক এই কামনা করছি।