সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দেশজুড়ে ভিক্ষুক পুনর্বাসনে প্রচলিত বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা’র সুচিন্তিত দিকনির্দেশনায়, কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মাহফুজুর রহমানের উদ্যোগে ও সরকারি অর্থায়নে সদ্য বাস্তবায়িত “অবলম্বন” প্যাকেজিং ফ্যাক্টরীতে কোটালীপাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৪৩ জন পেশাদার ভিক্ষুককে ভিক্ষা বৃত্তি থেকে নিবৃত করে হাতে-কলমে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে সেই ফ্যাক্টরীতে তিন হাজার টাকা মাসিক বেতনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী বাজারজাত করে প্রতিষ্ঠানটি লাভবান হলে সেখান থেকে লাভের একটি অংশ সেই ৪৩ জন শ্রমিকের মাঝে বন্টন করা হবে। ভিক্ষুক মুক্ত গোপালগঞ্জ গড়তে জেলা প্রশাসনের ব্যতিক্রমধর্মী এ উদ্যোগকে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সহ সকল মহল সাধুবাদ জানিয়েছেন।
এ লক্ষ্যে আজ শনিবার (১লা মে) বেলা সাড়ে ১১ টায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কুশলা ইউনিয়নের চৌরখুলী গ্রামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ফিতা কেটে সদ্য নির্মিত “অবলম্বন” প্যাকেজিং ফ্যাক্টরীর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং (সদ্য ভিক্ষা বৃত্তি ছাড়া) প্রশিক্ষিত সেই ৪৩ জন শ্রমিকের হাতে চাকুরীর নিয়োগ পত্র তুলে দেন।
এ সময় কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পৌর মেয়র হাজী মো.কামাল হোসেন শেখ, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মহসীন উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ, উপজেলা প্রকৌশলী দেবাশীষ বাগচী, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রাকিবুল হাসান শুভ, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শ্রীময়ী বাগচী, কুশলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম বাদল, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
জানাগেছে, গত ডিসেম্বর মাস থেকে কোটালীপাড়া উপজেলার কুশলা ইউনিয়নের চৌরখুলী গ্রামে কোটালীপাড়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও সরকারি অর্থায়ণে এ প্যাকেজিং ফ্যাক্টারীর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চলতি মাসের শুরুর দিকে এ ফ্যাক্টারীর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এই ৪৩ জন ভিক্ষুক এখন থেকে এই ফ্যাক্টারীতে কাজ করবেন। ভিক্ষুকের হাত এখন থেকে হয়ে উঠবে কর্মজীবীর হাত। এটিই মনে করছেন এলাকাবাসী।
কুশলা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম বাদল বলেন, কুশলা ইউনিয়নের চৌরখুলী গ্রামের ৪৩ নারী-পুরুষ জন্ম-জন্মান্তরে ভিক্ষাবৃত্তি পেশার সাথে জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে এ পেশা থেকে উত্তরণের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। কিন্তু কখনোই তাদেরকে এ পেশা থেকে নিবৃত করা যায়নি। তাদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকারি অর্থায়নে ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যেগে চৌরখুলী গ্রামে এ প্যাকেজিং ফ্যাক্টরী নির্মাণ করা হয়।
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম মাহফুজুর রহমান বলেন, কোটালীপাড়ায় প্যাকেজিং ফ্যাক্টারীতে উৎপাদিত কাগজের প্যাকেটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ কারণে সরকারি অর্থায়নে ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এ ফ্যাক্টারীর নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে যারা কাজ করবেন তাদেরকে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এই ফ্যাক্টারীতে যে ৪৩ জন ভিক্ষুক কাজ করবেন তাদের প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকা করে বেতন দেওয়া হবে । এছাড়াও এই ফ্যাক্টারীতে উৎপাদিত কাগজের তৈরী প্যাকেট বিক্রির লভ্যাংশের একটি অংশ তারা পাবেন। ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের এ উদ্যোগ সফল হলে পরিবর্তন হবে চৌরখুলীর, পরিবর্তন হবে কোটালীপাড়ার। এভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবর্তনের মধ্যে দিয়েই আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। একদিনেই হয়তো এটা হবে না, তবে একদিন হবেই নিঃসন্দেহে।
চৌরখুলী গ্রামের ভিক্ষুক সোনামতি বেগম, রেখা বেগম, ডালিম বেগম বলেন, আমরা আর ভিক্ষা করতে চাই না। আমরা কাজ করে খেতে চাই। ভিক্ষায় কোন সম্মান নেই। এতদিন কোন কাজ পাইনি। তাই ভিক্ষা করেছি। এখন উপজেলা প্রশাসন ফ্যাক্টরী নির্মাণ করে আমাদের চাকরি দিয়েছেন। আমরা এখন এখানে চাকরি করে সম্মানের সাথে বাঁচতে পারবো।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, যে ব্যাগে এতো দিনের ভিক্ষা বৃত্তি” সে ব্যাগ তৈরীতেই হবে মুক্তি” অবলম্বন ভিক্ষা নয়, কর্মময়। আর ভিক্ষা নয়, কর্মময় হবে ৪৩ জন ভিক্ষুকের জীবন। এরা এখন কাজ করে সংসার চালাতে পারবে। “
এ ধরনের উদ্যোগ দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে। আমাদের দেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত ও উন্নত সমৃদ্ধ হবে। এ ক্ষুদ্র উদ্যোগটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেশকে ভিক্ষুক মুক্ত করতে সহায়তা করবে বলে আমার বিশ্বাস।