বাংলাদেশের একটি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাংচুর করেছে উল্লেখ করে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধকালেও এই গোষ্ঠীটি মানবাধিকারের সর্বোচ্চ লঙ্ঘন ঘটিয়েছিল। এ ধরনের মৌলবাদী শক্তি ও ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর ঠাঁই বাংলাদেশে হবে না এমন মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকতে হবে।
সাতক্ষীরার বসন্তপুর ও ভারতের হিঙ্গলগঞ্জ এর মধ্যখানে লুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাচীন বন্দর পুনরায় স্থাপিত হবে এবং খুলনা থেকে সাতক্ষীরা হয়ে সুন্দরবন এলাকার মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত ৪ লেনের রাস্তা নির্মিত হবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে জেলা প্রশাসক বলেন, এগুলি আমাদের অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। এসব অধিকার আদায় করার জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে। আমরা প্রত্যেকেই এক একজন মানবাধিকার কর্মী হতে চাই। মানবাধিকার সুরক্ষায় আমরা কাজ করতে চাই। চলমান মুজিববর্ষে সাতক্ষীরাসহ দেশে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এই উন্নয়ন যাত্রাকে আরও বেগবান করে তুলতে হবে।
১৯ ডিসেম্বর শনিবার সাতক্ষীরার তুফান কনভেনশন সেন্টার (লেকভিউ) সম্মেলন কক্ষে সাতক্ষীরায় ‘মানবাধিকার সুরক্ষাকারীদের এ্যাডভোকেসি, লবিং ও নিগোশিয়েশন’ শীর্ষক ১২দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নিউজ নেটওয়ার্কের সাতক্ষীরা জেলা ককাসের সভাপতি অধ্যাপক মো: আনিসুর রহিমের সভাপতিত্বে এবং সাধারন সম্পাদক এম কামরুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাপনী অধিবেশনে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, সমাজে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। কখনও কখনও এসব লঙ্ঘন অপরাধে পরিনত হয়। সেক্ষেত্রে আইন শৃংখলা বাহিনীর দায়িত্ব অনেকটাই বেড়ে যায়। অন্যান্য ক্ষেত্রে মানুষের মৌলিক অধিকার, অধিকার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে তা নিয়ে লবিং করে অধিকার আদায়ের পথ তৈরী করতে হবে। তিনি বলেন, সংবাদকর্মীরা এক একজন মানবাধিকার কর্মী। তারা অধিকার বঞ্চিত মানুষের পক্ষে কথা বলেন।সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ, নিপীড়িত ও নিষ্পেষিত মানুষ এবং দারিদ্রক্লিষ্ট মানুষের পক্ষে কথা বলেন। বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা মানবাধিকারের পর্যায়ে পড়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন সংবাদকর্মীরা যথাযথভাবে এই দায়িত্ব পালন করলে সমাজ আরও সচেতন হবে এবং মানবাধিকার রক্ষার পথ অনেকটাই সুগম হবে।
তিনি বলেন সমাজে বাল্যবিবাহ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা কেবলমাত্র আইন দিয়ে প্রতিহত করা কঠিন। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। নারীদের জন্য বাজারঘাটে টয়লেট স্থাপন একটি জরুরী কাজ উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন এজন্য আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। চলমান মুজিববর্ষে গৃহহীন মানুষ গৃহ পাচ্ছেন মন্তব্য করে জেলা প্রশাসক অচিরেই ৬৫ হাজার ৭০০ ভূমিহীনকে গৃহ নির্মান করে দেওয়া হবে জানিয়ে বলেন আরও ৭ থেকে ৮ হাজার ঘর বরাদ্দ দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া ১৫ জানুয়ারি থেকে অতিরিক্ত এক হাজার ৩০০ ঘর বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন সাতক্ষীরা পৌর এলাকায় খাবার জন্য বিশুদ্ধ পানির সংকট দীব্র এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা মোটেও ভালো নয়। প্রানসায়ের খালে পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনতে খননকাজ চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন এসব অসংগতি মানুষের নাগরিক অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। সাতক্ষীরা জুড়ে বিশেষ করে দক্ষিনাঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট মারাত্মক উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশেষ করে ফনী, বুলবুল ও আমপান পরবর্তী সময়ে এই দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। সেসব এলাকার মানুষ এখনও স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসতে পারেনি। মৌলিক অধিকার, অধিকার এবং সেই সাথে যুক্ত হয়েছে মানবাধিকার। এসব অধিকার আদায়ে সামাজিকভাবে আমাদের সংগঠিত হতে হবে এবং একযোগে কাজ করতে হবে।
সমাপনী অধিবেশনে তিনি এই কর্মশালায় অংশগ্রহনকারীদের একযোগে পরিকল্পিতভাবে মানবাধিকার সুরক্ষায় কাজ করার আহবান জানিয়ে তাদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেন।
সমাপনী অধিবেশনে আরও বক্তব্য রাখেন ১২ দিনের কর্মশালার প্রশিক্ষক বিশিষ্ট উন্নয়ন ও মানবাধিকারকর্মী বেনজীর আহমেদ, সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরী, কল্যান ব্যানার্জী, আবুল কালাম আজাদ, মমতাজ আহমেদ বাপী, এড. নাজমুন্নাহার ঝুমুর প্রমুখ।
এর আগে কর্মশালায় বাল্যবিবাহ, নারীর মজুরী বৈষম্য, সাতক্ষীরা পৌরসভায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পৌর এলাকায় সুপেয় পানির সংকট, শিশুশ্রম সহ নানা অসঙ্গতির বিষয়ে আলোকপাত করে একেকটি দিক নির্দেশনা নির্ধারন করা হয়। এর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিযোগিতাও।এদিকে, প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী দিনের শুরুতে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার , সাতক্ষীরার কৃতি সন্তান লালন গবেষক মো: আবু বকর সিদ্দিক। তিনি মানবাধিকার রক্ষায় সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান।