কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে বাস্তবায়িত জোয়ার-ভাটা তথা টিআরএম কার্যক্রমের বকেয়া ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর ‘২৫) সকালে পাখিমারা টিআরএম বিলের ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকদের পক্ষে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। একইদিনে তারা সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, কপোতাক্ষ অববাহিকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে টিআরএম তথা জোয়ারাধার কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা উক্ত বিলের জমি অধিগ্রহণকৃত ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক। বিলে টিআরএম বাস্তবায়নের দ্বারা বিশাল কপোতাক্ষ অববাহিকাকে জলাবদ্ধ মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে কিন্তু ব্যাপক ভোগান্তি হয়েছে পাখিমারা বিল অধিবাসীদের। ২০১১-১২ অর্থবছরে টিআরএম কার্যক্রমের আওতায় পাখিমারা বিলের চারিধারে পেরিফেরিয়াল বাঁধ নির্মাণ এবং বিলের সাথে জোয়ার-ভাটা যুক্ত করার জন্য সংযোগ খাল খনন করা হয়। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৬ বৎসর এ বিলের ১৫৬২ একর জমিতে জোয়ার-ভাটা কার্যক্রম চালু রাখা হয়। বিলে জোয়ার-ভাটা চালু রাখার মেয়াদ পর্যন্ত জমির মালিকদের ফসলের ক্ষতিপূরণ প্রদানে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিলে ৬ বৎসর টিআরএম বাস্তবায়িত হয়েছে কিন্তু জমির মালিকদের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে মাত্র ২ বৎসরের। অনুমোদিত অর্থ এবং ৪ বৎসর বরাদ্দ না পাওয়া টাকা সব মিলিয়ে সরকারের কাছে জনগণের পাওনা টাকার পরিমাণ প্রায় ৪৮ কোটি টাকা।
কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আগে বিশাল কপোতাক্ষ অববাহিকার অধিকাংশ এলাকা দীর্ঘদিন যাবত ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত ছিল। প্লাবিত হতো ফসলী জমি, মৎস্য ঘের, বসতি এলাকা, স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন সেক্টর। এলাকা থেকে ভুক্তভোগী মানুষ স্থায়ী অস্থায়ী ভাবে চলে যেতো অন্য জায়গায়। মানুষের সীমাহীন এই দুঃখ কষ্টের কথা বিবেচনা করে আমরা পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছিলাম। টিআরএম বাস্তবায়ন দ্বারা কপোতাক্ষ অববাহিকার প্রায় ১৫ লক্ষ অধিবাসী প্রত্যক্ষভাবে এবং প্রায় ৪০ লক্ষ অধিবাসী পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে। এলাকার নদী কপোতাক্ষ তার জীবন ফিরে পেয়েছে এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কিন্তু সীমাহীন দুঃখ কষ্টের মধ্যে পড়েছি আমরা পাখিমারা বিল অধিবাসীরা। ৬ বৎসর যাবৎ এলাকার জনগণ ফসল উৎপাদন করতে পারেনি, এলাকায় কর্মসংস্থানের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে, অর্থাভাবে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে, মানুষ সব ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছে এবং অভাব অনটনের মধ্যে অর্ধাহার অনাহারে মানুষ তার জীবন অতিবাহিত করছে। যদি সরকারের নিকট থেকে বকেয়া ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায় তাহলে এলাকার অভাব অনটনে জর্জরিত মানুষ এ সমস্যা থেকে কাটিয়ে উঠতে অনেকটা সক্ষম হবে।
স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, পাখিমারা বিলে বকেয়া ক্ষতিপূরণ পরিশোধ না করার কারণে উক্ত বিলে টিআরএম বন্ধ হয়ে গেছে এবং পলি দ্বারা কপোতাক্ষ নদ ভরাট হয়ে এলাকা আবারও জলাবদ্ধ কবলিত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির অনিশ্চয়তার কারণে পাখিমারা বিল ও অন্য এলাকার বিল অধিবাসীরা টিআরএম বাস্তবায়নে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে যার কারণে জলাবদ্ধতা সমস্যার তীব্রতা উত্তরোত্তর এলাকায় আরও বৃদ্ধি পাবে এবং এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
এমতাবস্থায় যাতে তারা বকেয়া ক্ষতিপুরণের অর্থ দ্রুত পেতে পারে এবং নদীর নাব্যতা রক্ষার জন্য বিভিন্ন এলাকায় টিআরএম ব্যবস্থা আবার চালু হয় সেজন্য উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।