বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৫৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সাতক্ষীরায় মাদক বিরোধী গণসচেতনতা সৃষ্টিতে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-২০২৫ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন সাতক্ষীরায় নবনির্বাচিত ক্রিকেট আম্পায়ার্স কমিটির কাছে দ্বায়িত্ব হস্তান্তর  বেগম রোকেয়া দিবসে ‘অদম্য নারী’ সম্মাননায় ভূষিত হলেন শিরিনা সুলতানা জলদস্যুদের দুই লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত আট জেলে শ্যামনগরের গাবুরাতে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কমিউনিটি সংলাপ বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে ৫ আগস্ট এর পর কেউ চাঁদাবাজি করে থাকলে সেই টাকা ফেরত দিতে বাধ্য করবো : কাজী আলাউদ্দীন আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন ও আলোচনা সভা ১৬ বছর যারা আন্ডার গ্রাউন্ডে ছিল, ৫ আগস্টের পর তারা যেন আকাশে আলাউদ্দিনের চেরাগ তৈরি করেছে- সাতক্ষীরায় ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান তালায় কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সাথে লবি মিটিং গোপালগঞ্জে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালিত

নাটক সাজিয়ে কালিগঞ্জে গৃহবধু রাবেয়াকে পরিকল্পিতভাবে নির্যা’তনের পর হ’ত্যা

✍️রঘুনাথ খাঁ📝 জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক✅
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ১০৯ বার পড়া হয়েছে

২০২০ সালের মাঝামাঝি নাগাদ সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার দুদলী গ্রামের গাজীপাড়ার গোলাম হোসেনের ছেলে ব্যাটারি চালিত ভ্যানচালক সাইদুলের সাথে মেয়ে রাবেয়া খাতুনকে ৫০ হাজার টাকা কাবিনে বিয়ে দিয়ে ছিলেন শ্যামনগরের বংশীপুর গ্রামের দিনমজুর জয়নাল আবেদীন। জামাতাকে একটি এক ভরি ওজনের সোনার চেইন ও আট আনা ওজনের সোনার আংটি দিয়েছিলেন। মেয়েকে একটি বারআনা ওজনের সোনার চেইন ও আট আনিা ওজনের কানের একজোড়া দুল দিয়েছিলেন। বিয়ের সময় লক্ষাধিক টাকার আসবাবপত্র ছাড়াও পরবর্তীতে চার দফায় লক্ষাধিক টাকা ও রঙিন টেলিভিশনসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র দিলেও দিতে পারেননি ফ্রিজ। এরপরও জামাতা ও তার বাড়ির লোকজন রাবেয়াকে অমানুষিক নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। অথচ রাবেয়ার লাশের গলায় কাপড়ের ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার প্রচার দেওয়া হয়েছে। নিজের মেয়ের মৃত্যুও বিষয়টি বৃহষ্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে প্রতিবেশীর মোবাইল থেকে জানতে হয়েছে। হত্যার ঘটনা আত্মহত্যা বলে প্রচার করতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে হত্যাককারিরা স্থানীয় জনৈক মামুন সাংবাদিকের মাধ্যমে মোবাইল না ব্যবহার করা রাবেয়াকে টিকটক করার গল্প সাজিয়ে গণমাধ্যমে ঢালাও প্রচার দেওয়া হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় একটি আত্মহত্যার মামলা নিয়ে হত্যাকারিদের পক্ষ অবলম্বন করেছে।

রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি ‘২৫) দুপুরে নিজ বাড়িতে বসে এভাবেই মেয়ে রাবেয়ার মৃত্যুর বর্ণনা দিচ্ছিলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বংশীপুর সরকারপাড়ার ফজর আলী গাজীর ছেলে সম্প্রতি হৃদরোগে আক্রান্ত জয়নাল আবেদীন।

তিনি দেশ টাইমসকে বলেন, ছয় মাস আগে গরু কিনতে ৩০ হাজার টাকা নেয় সাইদুল। সম্প্রতি অবারো ৫০ হাজার টাকা চাইলে তিনি দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় সবশেষে গত ১২ ফেব্রুয়ারি পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে গেছে জামাতা সাঈদুল। বিয়ের এক বছর যেতে না যেতেই যৌতুকে দাবিতে রাবেয়াকে মারপিট করতো জামাতা ও তার পরিবারের সদস্যরা। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এক মাত্র সন্তান রাব্বি রোহানকে নিয়ে কয়েকবার তার কাছে চলে এসেছে। দুদলী গ্রামে মেয়ে নির্যাতনের ঘটনায় কয়েকবার শালিস হয়েছে। ফোন না থাকায় জামাতার ফোন দিয়ে বুধবার সকালে দুইবার কথা হয়েছে রাবেয়া ও সাইদুলের সাথে। এরপরও মেয়েকে ওরা পিটিয়ে হত্যা করলো। বৃহষ্পতিবার সকালে দুদলী গ্রামে যেয়ে মেয়ের লাশ ভিতরে থাকা অবস্থায় বাইরের দিক থেকে দরজায় তালা মারা অবস্থায় দেখেন তিনি। মেয়ের লাশ উদ্ধারে কালিগঞ্জ থানায় গেলে তার কাছ থেকে একটি কাগজে সাক্ষর করে নিয়েছে পুলিশ। পরে পুলিশ মেয়ে আত্মহত্যা করেছে মর্মে ইউডি মামলা দেখিয়েছে। পুলিশ বলছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত নতুন কোন মামলা হবে না। গ্রেপ্তার করা যাবে না হত্যার সঙ্গে যুক্ত আসামীদের। অপরদিকে বংশীপুরের পরিবহন শ্রমিক স্টাটার মুনসুর শনিবার তাকে টাকার বিনিময়ে মামলা মিটিয়ে নেওয়ার কথা বলেছে। দাবিকৃত সর্বশেষ ৫০ হাজার যৌতুকের টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় রাবেয়াকে সাইদুল, তার বাবা, মা, বড় ভাই ও তার স্ত্রী পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।

রাবেয়ার লাশ গোসল করানোর দায়িত্ব পালনকারি রাবেয়া বেগম দেশ টাইমসকে বলেন, মৃতের শরীরের পিঠে দুটি লম্বা কালচে রং এর আঘাতের চিহ্ন ছিলো। পাছা থেকে হাঁটু পর্যন্ত রাবেয়ার শরীরে ফুটে যাওয়া ১৪টি ঝাঁটার কাঠি তোলা হয়েছে। শরীরের ওই অংশটুকু রক্তজমা কালো আকার ধারণ করেছিলো।

রবিবার দুপুরে কালিগঞ্জ উপজেলার দুদলী গাজীপাড়ায় যেয়ে দেখা গেছে ভ্যানচালক গোলাম হোসেনের দুই ছেলে সাহিদুল ও শাহীনুরের পরিবারের কেউ নেই। ঘরের মধ্যে রৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বলছে। হত্যার বিষয়টি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ার আগেই বাবা ও দুই ছেলের ব্যাটারি চালিত ভ্যান ছাড়াও ছয়টি গরুসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে চলে গেছে সাহিদেুলের মামা ইউনুস আলী, দুলা ভাই ইমাম হোসেন ও নানা সাজউদ্দিনসহ স্বজনরা। সাহিদুলের ঘরের জানালা খুলে দেখা গেলো খাটের একাংশ ভেঙে গেছে। দরজার পাশে দেয়ালে থাকা ফাঁক দিয়ে ইচ্ছামত হাত ঢুকিয়ে দরজার ভিতরের ছিটকানি লাগানো ও খোলা যায়। ঘরের ভিতরে যে আড়ায় রাবেয়াকে ঝুলতে দেখা গিয়েছিল তা মেঝ থেকে সাত ফুটের বেশি উঁচু।

প্রতিবেশি ঝর্ণা খাতুন, মিজানুর রহমান, রোকেয়া খাতুন, ফাতেমা খাতুন, শফিকুল গাজী, ধুলিয়াপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যায়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র মোঃ নিয়াজসহ কয়েকজন দেশ টাইমসকে জানান, গোলাম হোসেন এক বছর আগে তাদের বাড়ির পাশের বেনু কাজীর কাছ থেকে প্রায় এক বিঘা জমি কিনছেন। রাবেয়াকে নির্যাতনের ঘটনা ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। তাছাড়া নির্যাতন করা হয় বড় ভাই শাহীনুরের স্ত্রী রুবিনাকেও। রাত আটটা থেকে তারা সাইদুলের বাড়িতে চিৎকার ও কান্নার আওয়াজ শুনেছেন। নির্যাতন সহ্য করতে বাচ্চাকে নিয়ে রাবেয়া বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বাপের বাড়িতে যাওয়ার জন্য দুদলী বাসস্টাণ্ডে গেলে তাকে ফিরিয়ে আনে সাইদুল। রাত ১১ টার পর তারা ওই বাড়িতে আর কোন চিৎকার চেঁচামেচি শোনেন নি। বৃহষ্পতিবার ভোরে তারা রাবেয়ার লাশ তার শোবার ঘরের আড়াতে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। গলায় কাপড় বাঁধা থাকলেও তার ফাঁস আকারে ছিল না। আড়া এত উঁচু ছিল যে, সাড়ে ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি লম্বা রাবেয়ার পক্ষে কোন টুল বা চেয়ার ছাঁড়া সেখানে কাপড় বাঁধা সম্ভব ছিল না। তা ছাড়া ঝুলন্ত রাবেয়ার এক পা খাটের উপর ছিল। খাটের একটি অংশের কিছুটা ভেঙে গেছে। তারা আশঙ্কা করছেন যে, খোকন মিস্ত্রীর খেশারী খেতে রাবেয়াকে নির্যাতনের পর ডোবার পাড়ে এনে কাদায় পোতার চেষ্টা হয়েছে। সেখানেই রাবেয়া মারা গেছে। মৃত রাবেয়ার একটি জুতা ডোবার পাশে পড়ে ছিল। তার ই পাশে ছিল সাইদুলের কাদামাখা লুঙ্গি। খোকন মিস্ত্রীর খেশারী খেতে রাবেয়ার একটি জুতা, সাইদুল ও তার মা এর জুতা পড়ে ছিলো। তারা আশঙ্কা কওে বলেন যে, খোকন মিস্ত্রীর ডাল খেতে রাবেয়াকে কয়েকজন মিলে নির্যাতন করেছে। এরপর ডোবার পাড়ে এনে দ্বিতীয় দফায় নির্যাতন করা হয়েছে। একপর্যায়ে সে মারা গেলে কয়েকজন মিলে লাশ ঘরের আড়ায় ঝুলিয়ে দিয়ে আত্মহত্যার প্রচার দেওয়া হয়েছে। আবার নিহতের পরিবারের সদস্যরা খবর পাওয়ার আগেই সাইদুলের মাসহ কয়েকজন থানায় গেছে পুলিশকে ম্যানেজ করতে। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে মায়ের নির্যাতনের ব্যাপাওে যাতে চার বছরের রাব্বি রোহান মুখ খুলতে না পাওে সেজন্য তাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে রাখা হচ্ছে। পুলিশ ইচ্ছা করলেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাব্বি রোহানকে উদ্ধার করে রাবেয়া হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারে বলে জানান গ্রামবাসি। তবে রাবেয়া কোন ফোন ব্যবহার করতো না বা ব্যবহার না করলে কিভাবে সে মোবাইলে টিকটক করতে যেয়ে স্বামী দেখে ফেলে ক্ষুব্ধ হওয়ায় রাবেয়া আত্মহত্যা করেছে এমন কাল্পনিক খবর পত্রিকা ও অনলাইনে প্রকাশ পেলো তা তাদেও বোধগম্য হয়নি।

এদিকে দুদলী মোড়ের চা বিক্রেতা ওহাব আলী জানান, বুধবার রাত সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যে বাপের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে মোড়ে অবস্থান নেওয়া রাবেয়াকে জোর করে ডেকে বাড়িতে নিয়ে যায় সাইদুল।

গেলে মোহাম্মদ আলী গাজীর ছেলে শহীদুল ইসলাম দেশ টাইমসকে বলেন, তিনি রাবেয়ার বিয়ের সময় ঘটকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অথচ নির্যাতন করে এভাবেই হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে দিয়ে রাবেয়া আত্মহত্যা করেছে মর্মে প্রচার দেওয়া হবে এটা কখনো ভাবতে পারেননি তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জালালউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ আশরাফুল ইসলাম দেশ টাইমসকে বলেন, নির্যাতনের ফলে রাবেয়ার মৃত্যু হয়েছে। তবে মেডিকেল রিপোর্ট প্রস্তুত ছাড়া বলা যাবে না।

কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হাফিজুল ইসলাম দেশ টাইমসকে জানান, প্রাথমিক ভাবে এটি একটি আত্মহত্যার মামলা হলেও ময়না তদন্তে হত্যা প্রমাণিত হলে এটি হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হবে।

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2020 All rights reserved
Design by: SHAMIR IT
themesba-lates1749691102
error: Content is protected !!