সাতক্ষীরায় মানবপাচার প্রতিরোধে বুধবার (১৮ ই নভেম্বর ২০২০) সকাল ১১ টায় অগ্রগতি সংস্থার ট্রেনিং সেন্টারে (পিটিআরসি) সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আশ্বাস প্রকল্পের সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভাটি অগ্রগতি সংস্থা ও সি ডাব্লিউ সি এস এর আয়োজনে সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড কো অপারেশন (এসডিসি) এর অর্থায়নে এবং উইনরক ইন্টারন্যাশনাল এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন অগ্রগতি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সবুর বিশ্বাস।স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে সভা অনুষ্ঠিত হয়।সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস (ডেমো) এর সহকারী পরিচালক মোস্থফা জামান, কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) এর অধ্যক্ষ কে. এম মিজানুর রহমান, সদর থানার শিশু বান্ধব পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, মহিলা আইনজীবী শাহনেওয়াজ পারভীন মিলি।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, লাইট হাউজ, সাজেদা নারী উন্নয়ন পরিষদ, ক্রিমেন্ট, গণমৈত্রী, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স, ইনসিডিন বাংলাদেশ, ব্রাক, স্বদেশ, ঢাকা আহসিনিয়া মিশন, অর্জন ফাউন্ডেশন, ঝাউডাঙ্গা ইউপি এর প্রতিনিধিবৃন্দ ।
এসময় অতিথিরা তাদের বক্তব্যে বলেন, সভ্যতা বিবর্জিত জঘন্য অপকর্ম ‘মানব পাচার’ একটি সামাজিক ব্যাধি। কোনো ব্যক্তিকে তার দেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে বিক্রি বা পাচারের উদ্দেশ্যে লুকিয়ে রাখা, আশ্রয় দেয়া, অন্যকোনভাবে সহায়তা করা হলে মানবপাচার হিসাবে গণ্য হয়। আমাদের দেশে পশ্চাৎপদ এলাকার কিছু মানুষের ধারণা, কোনো রকমে একবার বিদেশে পাড়ি জমাতে পারলেই ভাগ্য বদলে যাবে। এ ধরনের অজ্ঞ মানুষই বিশেষভাবে প্রতারণার শিকার হন।
বক্তারা আরও বলেন, এ অবক্ষয় প্রতিরোধে বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্রের পরিচয় জানা এবং মেয়ের অভিভাবকের ছেলের পারিবারিক অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়া প্রয়োজন। পাচারের পরিণতি সম্পর্কে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং পরিবারের সবাইকে সচেতন করা কর্তব্য। কাজের লোক নিয়োগ করার ক্ষেত্রে ছবি তুলে রাখা এবং প্রাক-পরিচয় যাচাই করে নেয়া আবশ্যক। বাড়ির শিশুকে নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর মুখস্থ করানো, অপরিচিত লোকের দেয়া কোনো খাবার বা জিনিস যাতে গ্রহণ না করে সে বিষয়ে পরিবার থেকেই শিশুকে সচেতন করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে এ বিষয়ে তথ্যকেন্দ্র পরিচালনা করা প্রয়োজন, যাতে পাচার, শোষণ, অবহেলা, নির্যাতন বা অন্য যে কোনো নেতিবাচক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থার অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব হয়। পাশাপাশি মানব পাচার রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে দারিদ্র্যের কারণে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা এবং বেকারদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। বৃদ্ধি করতে হবে তরুণদের দক্ষতা। একইসাথে যারা বিদেশে যেতে আগ্রহী তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। কোনো নাগরিক যাতে অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার নামে আত্মহননের পথ বেছে না নেয় তার দিকে নজর দিতে হবে। সীমান্ত বা জল-স্থল ও আকাশ পথে নজরদারি বাড়াতে হবে।
এছাড়াও সভায় প্রকল্প পরিচিতি, আপডেটকৃত সার্ভিস ডিরেক্টরী উপস্থাপন, আর্থ সামাজিক পুনর্বাসন কার্যক্রমের অগ্রগতি, ভিকটিম সনাক্তকরন এবং সারভাইভারদের আর্থসামাজিক পুনর্বাসনে সার্ভিস প্রোভাইভারদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
আলোচনায় প্রতিনিধিরা আরও বলেন, মানব পাচারে শিকার সারভাইভারদের জন্য যে সকল সেবা আছে তাদের সেটা প্রদান করা হবে।সারভাইভারদের স্বাস্থ্য, আইনী, কাউন্সেলিং, ঋণ সহায়তাসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে সহযোগিতা করা হবে ।
সমগ্র সভাটি পরিচালনা করেন আশ্বাস প্রকল্পের ও অগ্রগতি সংস্থার প্রকল্প সমন্বয়কারীঅসিত ব্যানার্জী।এছাড়াও সিডাব্লিউ সি এস এর প্রকল্প সমন্বয়কারী আরিফুর রহামান ও মটস এর প্রকল্প সমন্বয়কারী শ্যামল কান্তি জোদ্দার, অত্র প্রকল্পের কাউন্সেলর সিরাজুম মনিরা, তামান্না আনজুমান ও মরিয়ম খাতুন এবং সোস্যাল মোবিলাইজার ধনঞ্জয় পরমান্য উপস্থিত ছিলেন।