গত ৩০ ডিসেম্বর কলারোয়ার ঝাপাঘাট গ্রামের আবীর হোসেন(৩৪) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হওয়ার পর এলাকায় নীরব আপসোস নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন অনেকেই। তারা আবীরকে শেষবারের মতো একটি বার দেখতে চান।
নিহত আবীর হোসেন (৩৪) উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড ঝাপাঘাট গ্রামের মৃত শেখ আজিজুল হাকিমের ছেলে।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিন বোন পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে নিহত আবির সবার ছোট। সোমবার সকালে সরেজমিনে কলারোয়ার ঝাপাঘাট গৃরামে যেয়ে জানা গেছে, স্থানীয় ঝাপাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পার হন।২০০৫ সালে দমদম মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন তিনি। ২০০৭ সালে সাতক্ষীরা দিবা নৈশ কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স করেন তিনি।২০১৭ সালে ব্যারাক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। স্কলারশিপের আবেদন করে ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে আবীর হোসেন আমেরিকায় পাড়ি জমান। সেখানে তিনি টেক্সাস প্রদেশে থাকতেন ও লামওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা করতেন। পড়াশুনার তিনি কখনো ক্লাসে দ্বিতীয় হননি। পড়াশুনার পাশাপাশি টেক্সাসের ড্রামন শহরে গ্রাজুয়েশন এসিসট্যান্ট ও
একটি শপিংমলে ম্যানেজার হিসাবে পারটাইম কাজ করতেন বলে জানিয়েছেন তার মা আনজুয়ারা বেগম। ২০২০ সালে কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার মজলিসপুর গ্রামের সানজিদা আলম মজুমদারকে বিয়ে করেন আবীর। তার শ্বশুর বাড়ির সকলে আমেরিকার স্থায়ী বাসিন্দা।
আবীরের মেজো ভাই দিনাজপুরে ১১ নং আনছার ব্যাটালিয়নের হিসাবরক্ষক শেখ জাকির হোসেন জানান, আবীর যে দেকানে কাজ করতো সেখানে মদ্যপ অবস্থায় এসে কয়েকজন টাকা না দিয়ে জিনিস নিয়ে যেতে চাইতো। এতে আপত্তি করায় হুমকি দেওয়া হয়। বিষয়টি থানায় অভিযোগ করে আবীর। ৩০ ডিসেম্বর আবীরের সাথে তার মোবাইল ফোনে কথা হয়েছিলো, সে ভালোই ছিলো। হঠাৎ কিছু সময় পর তার শালীকা তাকে ফোন দিয়ে বলেন ভাইয়া, আবীর ভাই আর নেই। একদল সন্ত্রাসী আবীর ভাইয়ের শপিংমলে ডাকাতি করতে ঢোকে। আবীর ভাই বাধা দিতে গেলে তারা আবীর ভাইয়ের মাথায় ২টি ও বুকে ১টি গুলি করে। ঘটনাস্থলে আবীর ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।
নিহত আবীরের স্ত্রী সানজিদা আলম মজুমদার ২ বছরের কন্যা সন্তান শেখ আর লিথাকে নিয়ে নিউওয়ার্কে তার মা বাবার কাছে থাকে।
নিহতের ছোট বোন আবেদা খাতুন বলেন, তার ভাই খুব ভালো ছাত্র ছিলো। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলো। গত বছর ৩০ ডিসেম্বর স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকায় যান, আর শনিবার ছিলো সেই ৩০ ডিসেম্বর। ১ বছর পূর্ণ হলো, ঠিক সেই দিন আমেরিকার সময় আনুমানিক রাত ১০টায় তার ভাইকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। তিনি তার ভাইয়ের হত্যার বিচার চান।
নিহতের বড় বোন মরিয়ম বেগম বলেন,তার ভাইকে তো সন্ত্রাসীরা মেরে ফেলেছে। সরকারের কাছে তারা ভাইয়ের লাশটা তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।
এলাকাবাসী শেখ মনিরুল ইসলাম জানান, আবীর ভাই খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। এলাকার অসহায় মানুষের আপদে বিপদে তিনি সব সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। ভাই যে মারা গেছে এটা তারা মানতে পারছেন না। তারা আবীর ভাই হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
শেখ তানভির হোসেন জানান, আবীর ভাই ছিলেন জাতীয় সম্পদ। আগামি ২৪ মার্চ স্পেনের বার্সিলোনায় বাংলাদেশের অনাথ শিশুদের নিয়ে কথা বলার জন্য বিশেষ প্রোগ্রামে যোগদান করার কথা ছিলো। সেটা আর হলো না। যে দেশ অন্য দেশের মানবাধিকার নিয়ে বড় গলায় কথা বলে সেই দেশ আমেরিকায় সততার সাথে কাজ করতে যেয়ে দুইজন মদ্যপ ব্যক্তির দোকানের মালামাল লুটে বাধা দিতে যেয়ে গুলি করে মারা হলো।
ঝাপাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শিক্ষক শেখ শরিফুল ইসলাম বলেন, আবীর দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ছিল। তার এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।
দমদম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম আব্দুর রহিম জানান,তার কর্মজীবনে আবীরের মত ভালো ছাত্র পাননি। শিক্ষা জীবনে সে অনেক পুরষ্কার পেয়েছে। ভালো রোভার স্কাউট ছিলল সে। তার লাশ দেশে আনার পর স্কুলের পক্ষ থেকে জানাযার আয়োজন করা হবে।