শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বরাবর দেবহাটার শিক্ষার্থীদের সংগঠন দরদির স্মারকলিপি প্রদান তালায় অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে অবৈধভাবে ভারতে পাচারকালে ২ বাংলাদেশী আটক সাতক্ষীরার মানুষের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির কোন ঘাটতি নেই: ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জেলা হিসেবে সাতক্ষীরা অনেক ক্রীড়াবিদ উৎপাদন করে-ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ  সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধানের রমনা কালী মন্দির পরিদর্শন কালিগঞ্জে বিভিন্ন পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেন জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার নেতৃবৃন্দ সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব চেয়ারম্যান আব্দুল আলীমের বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন  যেভাবে কারামুক্তি হলো বেসরকারি নারী উন্নয়ন সংগঠন “প্রেরণা’র” শম্পা গোস্বামী হিন্দু ধর্মালম্বীদের উপর আঘাত আসলে সামনে থেকে তা প্রতিহত করবো-সাবেক এমপি হাবিব

বেতনা-মরিচ্চাপ নদী খনন প্রকল্পে টিআরএম অন্তর্ভুক্তি করলে ১৫ লাখ মানুষ মুক্তি পাবে

সেলিম হায়দার, তালা প্রতিবেদক:
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২০
  • ২৫৯ বার পড়া হয়েছে

বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর মৃত্যু ও জনদুর্ভোগ কমাতে সরকার ৪ বছর মেয়াদী ৪৭৫ কোটি ২৬ লাখ ১৪ হাজার টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সরকারের নেয়া সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং ১, ২, ৬-৮, ৬-৮ (সম্প্রসারণ)-এর নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সাতক্ষীরা সদর, তালা, কলারোয়া, দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলা এলাকার প্রায় ১৫ লাখ মানুষ জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে।

তবে প্রকল্পটিতে সরকারের প্রত্যাশা কতটুকু অর্জন হবে এবং নদীর ভবিষ্যত কি হবে তা নিয়ে ইতোমধ্যে নদী বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন। এই প্রকল্প জরিপে আইডব্লিউএম- দু’টি নদীর অববাহিকায় টিআরএম বাস্তবায়নের প্রস্তাব রাখলেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় টিআরএম প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। মূলত টিআরএম প্রকল্প নদীর নাব্য রক্ষা এবং পলির বিকল্প অবক্ষেপণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জলাবদ্ধতা সমস্যাটি প্রায় চার দশক ধরে চলে আসছে। সমস্যাটি সমাধান করার জন্য সরকার বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বেশিরভাগ সময়ই পলি অপসারণ, বাঁধ নির্মাণ, স্লুইসগেট স্থাপন, খাল পুনর্খনন ইত্যাদিকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনা নেয়া হয়। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেও আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায়নি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। উপরন্তু জলাবদ্ধ এলাকার পরিমাণ বেড়েছে। জনগণ মনে করে, সরকারের এসব কার্যক্রমে জলাবদ্ধতা তো নিরসন হচ্ছেই না, বরং এই অঞ্চলের নদীগুলো যেমন ধ্বংস হয়েছে, তেমনি প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অধিবাসী জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। মূলত সমস্যা সমাধানে সরকার ও জনগণের দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্যের কারণে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হচ্ছেনা বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত ।

বাংলাদেশে পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার শতবর্ষব্যাপী বিডিপি-২১০০ পরিকল্পনা করেছে; যার বাস্তবায়নও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বর্তমান সরকার গৃহীত সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং ১, ২, ৬-৮, ৬-৮ (সম্প্রসারণ)-এর নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটিও সরকারের শতবর্ষী পরিকল্পনা বাংলাদেশ ডেল্টা ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট বা বিডিপি-২১০০’র অংশ। সেখানে নদী থেকে পলি অপসারণসহ নদীর পাশে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য, পরিবেশবান্ধব, প্রযুক্তিগতভাবে সমাধানযোগ্য এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক জোয়ারাধার পদ্ধতি (টিআরএম) বাস্তবায়নের মাধ্যমে নদীর নাব্য বজায় রাখার সুপারিশও করা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এ অঞ্চলের বেতনা, মরিচ্চাপ, কপোতাক্ষ, হরি-তেলিগাতী, ভদ্রা, ঘ্যাংরাইল ও হামকুড়া এই ৭টি নদীতে টিআরএম পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে নদীর নাব্য ও অববাহিকার উন্নয়ন করা হবে বলে পরিকল্পনায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার ১, ২, ৬-৮, ৬-৮ (এক্সটেনশন) নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থা মূলত বেতনা, মরিচ্চাপ, খোলপেটুয়া, সাপমারা ও দেশের সীমানা বিভাজিত নদী ইছামতিসহ অন্য ছোট বড় অসংখ্য খালের ওপর নির্ভরশীল। ইছামতির শাখা নদী কাকশিয়ালী, সাপমারা ও লাবণ্যবতী নদী। মরিচ্চাপ লাবণ্যবতী থেকে উৎপত্তি হয়ে বালিথার ত্রিমোহনা হয়ে আশাশুনি সদরে বেতনার সঙ্গে মিলিত হয়ে খোলপেটুয়া নাম ধারণ করে প্রবাহিত হয়েছে। অন্যদিকে, প্রায় ১৫০ কিমি দীর্ঘ বেতনা নদীটিও আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা বাজার থেকে চাপড়া মোহনা পর্যন্ত মাত্র ৬ থেকে ৭ কি.মি কোন রকমে বেঁচে আছে। উজান হতে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ কমে যাওয়া ও সমুদ্র হতে আগত জোয়ার বাহিত উচ্চমাত্রায় পলির জমার কারণে সাতক্ষীরা জেলার সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, আশাশুনি ও তালা উপজেলাভুক্ত ১, ২, ৬-৮ ও ৬-৮ (সম্প্রসারিত) পোল্ডারের এবং পার্শ্ববর্তী নদীসমূহ জোয়ারবাহিত পলি ভরাটের কারণে নদীগুলো মৃতপ্রায়। এ অবস্থায় ভাটার দিকে বেতনা ও মরিচ্চাপের মিলিত অংশ খোলপেটুয়া নদীও পলিভরাটে মরতে বসেছে।

বর্তমানে এসব এলাকায় প্রায় প্রতিবছরই ৬ থেকে ৮ মাস জলাবদ্ধতা হয়ে থাকে। চলতি বছরেও জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় ইতোমধ্যে জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। খাবার পানির সঙ্কট চলছে। অন্যদিকে, কর্মসংস্থানের অভাবে কাজের সন্ধানে এলাকার মানুষ স্থায়ী-অস্থায়ীভাবে এলাকা ত্যাগ (অভিবাসিত) করছে। যোগাযোগ ও খাদ্যাভাবে ছেলে মেয়েদের শিক্ষা জীবনও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সে কারণে এখানে নারী নির্যাতন ও দারিদ্র্যের হারও বেশি। বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী দু’টি জোয়ার-ভাটার নদী। সে কারণে জোয়ার-ভাটার নদীর নাব্য রক্ষার জন্য টিআরএম গুরুত্বপূর্ণ। প্রকল্পে আইডব্লিউএম-এর সমীক্ষা ও সুপারিশকে শেষ মুহূর্তে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আইডব্লিউএম সমীক্ষায় এটি স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, টিআরএম বাস্তবায়ন ছাড়া প্রকল্পটি টেকসই হবে না।

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে বেতনা এবং মরিচ্চাপ নদী অববাহিকায় একইভাবে ব্লু-গোল্ডের অর্থায়নে বাঁধ-বন্দী ও খাল খনন বা সংস্কার করা হয়েছে। এতে জলাবদ্ধতা দূর হয়নি। বরং নদী বেশি ভরাট হয়েছে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে নদী বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় জনগণ দাবি তুলেছেন। আইডব্লিউএম এর সুপারিশ এবং বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্তি অনুযায়ী বেতনা ও মরিচ্চাপ অববাহিকার চিহ্নিত বিলগুলোর মধ্যে উপযুক্ত বিলে টিআরএম বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ, ইছামতি নদীর সঙ্গে লাবণ্যবতী ও সাপমারা নদীর পুনঃসংযোগ প্রদান, সামাজিক ও পরিবেশগত বিষয় যুক্ত করা এবং জনগণের অংশগ্রহণ ও সংশ্লিষ্ট মহলের সমন্বয়ে নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে। জনগণের দাবি, আইডব্লিউএম এর সুপারিশ এবং বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্তি অনুযায়ী বেতনা ও মরিচ্চাপ অববাহিকার চিহ্নিত বিলগুলোর মধ্যে উপযুক্ত বিলে টিআরএম বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রকল্পের শতভাগ সফলতা বাস্তবায়ন করা হোক। বিশেষজ্ঞদের অভিমত নদীই এই অঞ্চলের জীবন। নদীর জোয়ার-ভাটার ব্যবধানকে ব্যবহার করে এখানকার সভ্যতা গড়ে উঠেছে। নদী না থাকলে এখানকার সভ্যতা টিকে থাকবে না। এ কারণে পরিকল্পিতভাবে জোয়ার-ভাটার মাধ্যমে প্লাবনভূমিতে পলি অবক্ষেপণের ব্যবস্থা করার কোন বিকল্প নেই। যার মাধ্যমে নদীর নাব্য যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি ভূমি গঠনপ্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। সরকারের নেয়া এই নদী খনন প্রকল্পে ৪৪ কি.মি. ড্রেজিং ও পুনর্খননের মাধ্যমে বেতনা নদীর পলি অপসারণ, ৩৭ কি.মি. ড্রেজিং ও পুনর্খননের মাধ্যমে মরিচ্চাপ নদীর পলি অপসারণ, পোল্ডারের মধ্যে বেতনা-মরিচ্চাপ নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ৩৪৪.২২ কি.মি. বিভিন্ন খাল সংস্কার ও পুনর্খনন করা ,পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা রক্ষার্থে বিভিন্ন পোল্ডারে বিভিন্ন লোকেশনে ৬টি রেগুলেটর/ স্লুইসগেট পুনর্গঠন করা, বিদ্যমান রেগুলেটর/ স্লুইস গেটের মেরামত/পুনরাকৃতিকরণ ২১টি, বন্যার ঝুঁকি থেকে এলাকাকে রক্ষার জন্য বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কারের পরিকল্পনা ১১৩.১২ কিলোমিটার এবং বেতনা নদীর ডান তীরের ২নং পোল্ডারে ১.৭০ কি.মি ঢাল প্রতিরক্ষামূলক কাজ ও ৪টি আরসিসি ঘাটলা নির্মাণ কাজ পরিকল্পনায় রাখা হয়েছে।

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের নামাজের সময়সুচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ
  • ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ
  • ১৫:৫৯ অপরাহ্ণ
  • ১৭:৪১ অপরাহ্ণ
  • ১৮:৫৪ অপরাহ্ণ
  • ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ
©2020 All rights reserved
Design by: SHAMIR IT
themesba-lates1749691102
error: Content is protected !!