মাত্র দুই দিনের বৃষ্টিতেই নিমজ্জিত হয়েছে সাতক্ষীরা পৌরসভাসহ বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ এলাকা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার রাতভর বৃষ্টিপাতে শহরের অলিগলিসহ আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রবল বর্ষণে শহরের অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়ীঘরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ডুবে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন পৌরসভায় বসবাসরত হাজার হাজার মানুষ। এ ব্যাপারে পৌর কর্তৃপক্ষকে বার বার জানানো হলেও প্রতিকার মেলেনি, এমন অভিযোগ ভূক্তভূগীদের।
বৃষ্টিপাতে সবথেকে খারাপ অবস্থা শহরের রসুলপুর, পলাশপোল, কামালনগর, কাটিয়া, মেহেদীবাগ, মধূমল্লারডাঙ্গি, বদ্দীপুর কলনি, কাটিয়া জেলখানার দক্ষিন পার্শ্বের এলাকা, রইচপুর, রাজারবাগান কলেজের আশপাশের এলাকায়। কোথাও হাঁটু সমান তো কোথাও বা কোমর পানি পৌরএলাকার অধিকাংশ রাস্তায়। জলাবদ্ধতার কারণে শহরবাসী ঠিকমত চলাচল করতেও পারছেন না।
প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হওয়া সত্তে¡ও এসব এলাকার জনগন যেন অভিভাবকহীন। জলাবদ্ধতার কথা এ এসব ওয়ার্ডের কমিশনারকে বার বার জানানোর পরও কোন সমাধান না করে তারা এলাকার সাধারণ জনগণকে নানাবিধ মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। সরেজমিনে পরিদর্শন করে জানা যায়, বর্ষা মৌসুম শুরু থেকে এসব এলাকার শতশত পরিবার পানিবন্দি হয়ে থাকে। বর্তমানে পানি দূষিত হয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে এলাকার বৃদ্ধ থেকে শুরু করে শিশুরা।
শহরের রসুলপুর এলাকার আব্দুল্লাহ আল মসুম, শহিদুল ইসলাম, স্কুল শিক্ষক ইমরান হোসেন বলেন, ৯নং ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতা আমাদের নিত্য সঙ্গী। বাসা থেকে বেরহওয়ার সময় সড়কে পানি জমে থাকার কারণে আসা-যাওয়া করতে বিলম্ব হচ্ছে। একটু বৃষ্টি হলেই হাটু পর্যন্ত পানি থাকছে রাস্তার উপর। আমরা পৌর কর্তৃপক্ষকে বারবার বলা সত্বেও তারা কর্ণপাত করেনি।
একাডেমি মসজিদের পিছনের এলাকায় বসবাসকরী গৃহবধুসাকিলা খাতুন বলেন আমাদের এলাকায় পুরো বৃষ্টি মৌসুম পানিতে ডুবে থাকে ,আমাদের রান্নাঘরে, উঠানে, ঘরের ভিতরে, এমন কি টয়লেটেও পানি। আমাদের জীবন দূর্বিসহ হয়ে আছে। আমরা সবসময় নিজেদের ছোট বাচ্চাদের নিয়ে অজানা আতঙ্কে থাকি।
একই এলাকার আল আকসা জামে মসজিদের খতিব ইউনুচ বিন ইমাম বলেন, এই জলাবদ্ধতার মসজিদের মুসল্লিরা ঠিকমত নামাজ পড়তে আসতে পারে না। এমন কি আনেকে বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে।
ভুক্তভোগী মনিরুজ্জামান জানান, আপনারা সাংবাদিকরা এই বিষয়ে নিউজ করে কি লাভ ? বিগত ২০ বছর তো অনেক নিউজ হলো, তাতে কিছু হয়নি। আমাদের সমস্যা রয়েই গেছে।
রথখোলা বিল এলাকার ভুক্তভোগী নিরজ্ঞ কুমার মÐল অভিযোগ করে বলেন,আমরা এই এলাকায় হিন্দুধর্মের লোক বসবাস করি বলে কি এই এলাকার রাস্তহাট ড্্েরন হচ্ছে না। আমাদের মাননীয় ডিসি ও এমপি সাহেব আমাদের রাস্তা ও ড্রেন হবে বলে আশ্বস দিলেও তার কিছুই হয়নি। বর্তমানে আমরা এই দূূষিত পানিতে চলাফেরা করায় আমাদের নানা রকম চর্মরোগ হচ্ছে। জানিনা আগামী ডিসেম্বরের আগে আমাদের এই এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে কি না। কারণ প্রতিবছর জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের এভাবেই চলাফেরা করতে হয়।
জেলা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি এ্যড. ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষের অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ড্রেনেজ স্বল্পতা,প্রাণসায়ের খাল, বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর খনন কাজ না হওয়াই শহরের জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ বলে আমি মনে করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা নিরোসনে একনেকে ৪৭৫ কোটি টাকার বরাদ্ধ দিয়েছে। এই টাকার সঠিক ভাবে ব্যবহার হলে জলাবদ্ধতা নিরসোন হবে।
এদিকে দীর্ঘ দিন জলাবদ্ধ থাকায় এসব এলাকার স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভার অস্তিÍত্ব দেখা যাচ্ছে যা রীতিমত অতঙ্কের কারণ। এক দিকে জেলা প্রশাসন ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করছে আর অন্যদিকে পৌর কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতায় পৌরএলাকায় এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যাবসায়ী জানান, এই দুষিত, কালো ঘোলা জল বারবার পাড়ি দেওয়ার কারনে আমার পায়ে খোস পাঁচড়া দেখা দিয়েছে বলে তিনি তার পায়ের ক্ষতচিহ্ন দেখান। এলাকার শিশুরা এই পানি পার হয়ে স্কুলে যাতায়াতের কারণে অনেক শিশু চুলকানী ও খোঁস পাঁচড়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাছাড়া পঁচা পানির দুর্গন্ধ এতোটাই প্রকট যে অনেকে বমি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এই বিষয়ে সাতক্ষীরা পৌর মেয়রের অফিসিয়াল ফোন নম্বারে ০১৭৬১ ৭০৩৭৩২ তে সন্ধা ৭.৩৯ মিনিটে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।