সাতক্ষীরা শহর ও শহরতলীর ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দূরীকরণ স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা জেলা শাখা বৃহষ্পতিবার দুপুর একটায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বরাবরে এ স্মারকলিপি পেশ করে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা শাখার সভাপতি মহিবুল্লাহ মোড়ল, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য মঈনুল হাসান, প্রকৌশলী আবদুর রহমান, স্বপন কুমার শীল ও জেলা কমিটির সদস্য নির্মল কুমার সরকার।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা জেলা শহরসহ নিমাঞ্চল ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কারণে জনজীবন মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। অতিবৃষ্টি ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হতে না পেরে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গেছে। ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ, সুপেয় পানি ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। খাদ্যের অভাবে গৃহপালিত পশু সস্তায় বিক্রি করতে হচ্ছে। সংকট দেখা দিয়েছে এবং জ্বালানির। জলাবদ্ধতা দীর্ঘমেয়াদী রুপ নেওয়ায় পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। খাদ্য ও কর্মসংস্থানের অভাবে মানুষকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র যেতে হচ্ছে। জনজীবনের এই বিপর্যয় থেকে মানুষকে বাঁচাতে হলে নদী-খাল রক্ষায় টিআরএম পদ্ধতির মাধ্যমে জোয়ার-ভাটা, নদীর নাব্যতা রক্ষা এবং পলির বিকল্প অবক্ষপণের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ইতোমধ্যে কপোতাক্ষ অববাহিকায় পাখিমারা বিলে টিআরএম ব্যবস্থা চালু থাকার ফলে নদীর নাব্যতা রক্ষা ও জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হয়েছে।
বেতনা-মরিচাপ অববাহিকায় নদীর জোয়ার বাহিত পলি দ্বারা নদীর মৃত্যু ও জনদুর্ভোগ প্রশমণের জন্য সরকার কর্তৃক গৃহীত সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং-১, ২, ৬-৮, ৬-৮ সম্প্রসারণ বেতনা অববাহিকায় ‘‘নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প পর্যালোচনা’’ স্থানীয় জনগণের অভিজ্ঞতা এবং উপকূলীয় অঞ্চলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ জনজীবনের নিরাপত্তা ও পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে সাতক্ষীরাকে রক্ষা করার জন্য প্রাণসায়র খাল প্রশস্ত ড্রেনেজ সংযোগ দিতে হবে। বেতনা খনন করে শাল্য ও বেড়াডাঙি স্লুইজ গেটের কার্যকারিতা বাড়াতে হবে। সাতক্ষীরা প্রাণসায়র খালের সাথে বেতনা ও মরিচাপ নদীর পুনঃসংযোগ প্রদান করতে হবে। সে কারণে খেজুরডাঙ্গী স্লুইজগেইট এবং এল্লারচর স্লুইজগেইট অপসারণ করতে হবে। অথবা বিকল্প চ্যানৈল করে পুনঃসংযোগ দিতে হবে। পানি নিষ্কাশন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারি অপরিকল্পিত মাছের ঘের বন্ধ করতে হবে।
দীর্ঘ মেয়াদী পদক্ষেপ হিসেবে সি,এস ও এস,এ রেকর্ড অনুযায়ী সকল নদী খালের সীমানা নির্ধারণ, খনন ও সীমানা পিলার দিতে হবে। নদীর সাথে সকল খালের সংযোগ স্থাপন ও স্লুইস গেইট সংস্কার করতে হবে। নদী ও খাল সংলগ্ন সকল ইজারা বাতিল, অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। ইছামতি নদীর সাথে লাবণ্যবতী ও সাপমারা খালসহ মরিচাপ নদীর সাথে সরাসরি সংযোগ এবং বেতনার সাথেথ শালিখা নদীর সংযোগ দিতে হবে। বেতনা ও মরিচাপ অববাহিকায় নদীবাহিত পলি অবক্ষপণের জন্য বিল চিহ্নিত করে টিআরএম পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে হবে।
সর্বোপরি আমাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পানি নিষ্কাশনের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেভিনিউ সাতক্ষীরাকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা। কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন পৌর মেয়র সাতক্ষীরা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রতিনিধি পুলিশ প্রশাসন, সহকারি ভূমি কমিশনার, প্রতিনিধি পানি উন্নয়ন বোর্ড, প্রতিনিধি প্রেসক্লাব ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রস্তবনা বাস্তবায়ন কমিটি গঠণ করতে হবে।