বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
শিশু প্রভা ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত, বাঁচাতে চায়! সাতক্ষীরায় প্রতিবাদী প্রতিকী প্রচারাভিযান অনুষ্ঠিত বাইপাস সড়কে সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত-১ উপজেলা নির্বাচনে আলোচনায় তালার আমিনুল ইসলাম দেবহাটায় নাগরিক প্লাটফর্মের সাথে যুব ফোরামের তথ্য বিনিময় ডাক্তার ফয়সাল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক সাংবাদিকদের মোবাইল, ক্যামেরা ছিনিয়ে বেধড়ক মারপিট নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বাংলালিংক ও হুয়াওয়ের চুক্তি   উপকূল গবেষণায় লিডার্স কর্তৃক বৃত্তিপ্রদান তালার প্রতিবন্ধী এক নারীর যাতায়াতের রাস্তা আটকানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন তালায় সাংবাদিকদের সাথে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবলুর রশিদের মতবিনিময়

সাতক্ষীরার মৌবাড়ি, একসাথে মানুষ ও মৌমাছির বসবাস

রঘুনাথ খাঁ, জেষ্ঠ প্রতিবেদক:
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ১১ জুন, ২০২১
  • ৩৩০ বার পড়া হয়েছে

বাড়ির নাম ‘মৌবাড়ি’। সবাই ডাকে ‘মৌবাড়ি’ বলে। আর ডাকবেই বা না কেন। দোতলা ভবনটির কক্ষে কক্ষে, ব্যালকনিতে, কিচেনের পাশে চিলেকোঠায় সবখানেই মৌচাক। এই মৌচাক দেখতে প্রতিদিনেই আসে কৌতুহলী মানুষ। আবু সাঈদের বাড়ি যেন এখন আর নিজের নয়। এ তো মৌমাছিদের বাড়ি।

মৌমাছির দল ২৬টি মৌচাক বেঁধছে আবু সাঈদের দ্বিতল বাড়িতে। সারাদিন মৌমাছির গুঞ্জনে আর বাতাসে মৌ মৌ গন্ধে এ এক অভূতপূর্ব আকর্ষন সবার কাছে। কয়েক লাখ মৌমাছিও যেন আবু সাঈদ পরিবারের সদস্য হয়ে গেছে। বাড়ির লোকজন মৌমাছিদের দেখাশোনা কর। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

সাতক্ষীরা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে দেবহাটা উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের কোড়া গ্রামের শেখ আবু সাঈদ। পেশায় তিনি একজন চিংড়ি ঘের ব্যবসায়ী। তিনি মৌমাছি পালন করেননি। মৌমাছিই তার বাড়ি দখল করে এসব চাক গড়ে তুলেছে। ৭-৮ বছর আগের কথা। একদিন সকালে উঠেই আবু সাঈদ পরিবারের লোকজন দেখতে পান রাতারাতি তাদের বাড়িঘরের এখানে ওখানে অনেকগুলি মৌচাক। এরপর সেখানে পর্যায়ক্রমে মৌমাছি আসতেই থাকে। প্রথম দফায় ভীত হয়ে পড়েছিলেন আবু সাঈদ ও তার পরিবারের সদস্যরা। মৌমাছির কামড়ের কথা মাথায় রেখে এই চাক ভাংতেও পারেননি আবার রাখতেও ভয় পাচ্ছিলেন। আবু সাঈদ বলেন ‘আস্তে আস্তে দেখলাম তারা কারো ক্ষতি করছে না। আমরা আঘাত না করলে মৌমাছিরা কামড়ায় না। এই সতর্কতা অবলম্বন করেই মৌমাছির পালক পালন করতে শুর করি’। তিনি বলেন, বছরের সাত থেকে আট ষ মাস তার বাড়িতে চাকগুলি থাকে। এখন তার বাড়িতে রয়েছে ২৬টি চাক। কার্তিক মাস থেকে জোষ্ট্য মাস এই সময় ধরে তারা তার বাড়িতে বাস করে। এরপর একদিন দেখা গেল হঠাৎ সব মৌমাছি উধাও। কোথায় চলে যায় সে খবর আমরাও জানি না। কয়েক মাস বাদে ফেরে সরষা ফুলের সময় চলে আসে শত শত মৌমাছি। এখন ফুলের মৌওসুম নয়। ওরা সরিষা, আমের মুকুল, ছফেদা ও লিচুর ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। ফুলের মধুর সংস্থান কমে গেলে ওরা যে কোনো মূহুর্তে উড়াল দেবে ঝাঁকে ঝাঁকে। এদের কোন খাবার দিতে হয় না। প্রকৃতিগতভাবে তারা ফুলের মধু সংগ্রহ করে চাক মধু ভান্ডার গড়ে তোলে। ১০০ ভাগ মধুর মধ্য সংগ্রহ করা হয় ৭৫ ভাগ। বাকি ২৫ ভাগ মৌমাছিদের খাওয়ার জন্য রেখে দেওয়া হয়। আবু সাঈদ প্রতিবছর ৫০ হাজার টাকার মধু বিক্রি করে থাকেন। আর এই খাঁটি মধুর খবর শুনে তার বাড়িতে যেমন মৌচাক দেখতে আসা দূর দূরার মানুষ ভিড় করে, তেমনি তারা মধু কিনেও নেয়। প্রতি কেজি মধু বিক্রি হয় ৫০০ টাকা কেজি দরে।

গৃহকর্তা শেখ আবু সাঈদ জানান, মৌমাছিগুলি তাদের পরিবারের সদস্যর মত। যখন ঝড়বৃষ্টি হয় তখন ওদের নিয়ে চিন্তা হয়। ওদের নিরাপত্তার জন্য জানালা দরজা বন্ধ করে রাখি। তিনি জানান তার স্ত্রী রঞ্জিলা বেগম সবসময় মৌচাকগুলি দেখভাল করে থাকেন। বাড়ির কিচেনের পাশেই রয়েছে মৌচাক। বছর আট মাস মৌমাছি বাড়িতে থাকে। আল্লাহর হুকুমে আসে, আল্লাহর হুকুমে চলে যায়।

গৃহকর্তী রঞ্জিলা বলেন, কোনদিন কোন মৌমাছি তার পরিবারের কাউকে কামড়ায়নি। আবার তারাও মৌমাছিকে কোনভাবে আঘাতও করেননি। বাড়িতে পায়কানা করে নোংরা করে না। তবে আম গাছে কীটনাশক স্প্রে করার সময় একবার বেশ কিছু মৌমাছি মারা যায়। তখন ধারনা হয়েছিল ওরা বুঝি আর আর আসবে না। তা কিন্তু হয়নি। ঝাঁক ঝাঁক মৌমাছিরা আবারও প্রাকৃতিক নিয়মেই আসে প্রতি বছর।

আবু সাঈদ দম্পতির মেয়ে সখীপুর আহছানিয়া ডিগ্রী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী ফতেমা খাতুন বৃষ্টি বলেন, মৌমাছি, তাল, কুল, পেয়ারা, সরিষা, আমসহ বিভিন্ন ফুলের মধু সংগ্রহ করতে মৌমাছিরা নিরিবিলি পরিবেশে তাদের বাড়িতে আসছে আট বছর ধরে। মানুষ ও মৌমাছির নিবিড় মেলবন্ধনে তা তাদের বাড়িতে না আসলে কেউ বুঝতে পারবে না। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ছাড়া এমনটি হওয়া সম্ভব নয়।

আবু সাঈদ দম্পতির শিশু সন্তান শেখ ইসমাইল হোসেন জানায়, ওরা আমাদের পরিবারের সদস্য। প্রতি বছর সব চাকের মৌমাছি চলে গেলেও একটা চাক কিন্তু থেকেই যায়। সহপাঠিরা তাদের বাড়ির মৌচাকের খবর নিলে মোবাইলে দেখিয়ে দেয় ছবি।

বছরের সেই নির্দিষ্ট সময়ে ফিরে আসে রঞ্জিলা বেগমদের বাড়িতে।

প্রতিবেশিরা জানান, এই মৌবাড়ির খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ খবর সত্য কিনা তা জানার জন্য বহু মানুষ প্রতিদিন এখানে আসে। আমরা দেখি। খুব ভালো লাগে।

দেবহাটা উপজেলার সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন রতন বলেন, আমি যখনই কোড়া গ্রামে আসি তখনই মৌচাকগুলি দেখে যাই। প্রকৃতিগতভাবে তারা এখান বাসা বেঁধেছে। মৌমাছিগুলি তাদের খেয়ালখুশি মতো এখানে আসা যাওয়া করে থাকে। মানুষ ও মোমাছি সুন্দরভাবে একসাথে বসবাস করে। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এক চাকের মৌছি অন্য চাকে বসে না। মোমাছি ও মানুষ যেভাবে একসাথে বসবাস করছে তা থেকে সকলের শিক্ষা নেওয়া উচিত। মৌমাছির অভয় আশ্রম তৈরির ব্যাপারে কাজ করে যাবে।

সাতক্ষীরা খামার বাড়ির উপপরিচালক মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, সুস্থ পরিবেশে পাওয়ায় সুন্দরবনের মৌমাছিরা আট মাস যাবৎ কোড়া গ্রামের আবু সাঈদের বাড়িতে অবস্থান করে। একটি চাকের মৌমাছি অপরটিতে যায় না। এপিস ডরসেটা জাতের মৌমাছি এটি। মধু বিক্রি করে আবু সাঈদের বছরে ৫০ হাজারের বেশি টাকা উপার্জন হয়।

এই জাতের মৌমাছি সুন্দরবনে থাকে। বনে থাকাকালীন পরিবেশ ও প্রকৃতিগত আনুকুল্য না পেলে তারা হঠাৎ লোকালয়ে চলে আসে। লোকালয়ে কিছুদিন বসবাসের পর আবারও ফিরে যায় সুন্দরবন। মৌমাছিকে বিরক্ত না করলে তারা কাউকে ক্ষতি করে না।

প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্ব করেই মৌমাছিগুলি আবু সাঈদের বাড়িতে বাসা বেঁধেছে। আবার বৈরী প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে তারা এখানে টিকেও আছে। পরিবেশগত প্রতিকূল অবস্থা সৃষ্টি হলেই তারা নতুন আবাস না খুঁজে পুরনা আবাসেই ফিরে আসে। এটাই মৌমাছির স্বভাব। আবু সাঈদের বাড়িতে এভাবেই মৌমাছির ২৬টি দল চাক বেঁধেছে। আর তাই বাড়িটির নামও হয়ে উঠেছে মৌবাড়ি।

মৌমাছি ও মানুষের ভালবাসার দৃষ্টান্ত গড়ে উঠুক প্রতি ঘরে ঘরে এমনটি প্রত্যাশা সাতক্ষীরার সাধারণ মানুষের।

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের নামাজের সময়সুচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:১৩ পূর্বাহ্ণ
  • ১২:০০ অপরাহ্ণ
  • ১৬:৩১ অপরাহ্ণ
  • ১৮:২৮ অপরাহ্ণ
  • ১৯:৪৭ অপরাহ্ণ
  • ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ
©2020 All rights reserved
Design by: SHAMIR IT
themesba-lates1749691102
error: Content is protected !!