
শিক্ষার মান উন্নয়নে নবাগত সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে প্রধান শিক্ষকগণের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর ২০১৫) সাতক্ষীরা সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির আয়োজনে সাতক্ষীরা নবারুণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ওই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার আলমগীর কবীর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ আবুল খায়ের, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আবুল হোসেন, জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল মালেক গাজী, জেলা শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সচিব মোঃ মিজানুর রহমান।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ মোমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল্যা’র সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহজাহান, মমিনুর রহমান মুকুল, এমাজউদ্দীন, হাবিবুর রহমান, আব্দুস সালাম, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, নাসরিন খান লিপি, আব্দুল জব্বার, মনিরুজ্জামান, আশরাফুর রহমান, এসএম শহীদুল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম, দীনেশ চন্দ্র রায় প্রমুখ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান শিক্ষক মোঃ এমাদুল ইসলাম, মোঃ লিয়াকত আলী, মোঃ হাফিজুর রহমান, গাজী শাহজাহান সিরাজ, কৃষ্ণবন্ধু ঘোষ, মোঃ হাসানুর রহমান, মোঃ আমিনুর রহমানসহ জেলা সদরের ৬০টি মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
মতবিনিময় সভায় শিক্ষা অফিসারগণ প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে নানা সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন।
এসময় প্রধান শিক্ষকগণ বেশ কয়েকটি সমস্যার কথা জোরালোভাবে তুলে ধরে প্রতিকারের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে-বারবার প্রজ্ঞাপন জারি করে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের চলমান প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি, নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় হয়রানি, একেক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পরিচালনায় সময় ও কর্মঘণ্টার সমন্বয়হীনতা, ঝরেপড়া রোধ, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, শিশুশ্রম প্রতিরোধ, জলবায়ু উদ্বাস্তু, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব, অনিয়ম-ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ নানা বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন শিক্ষকরা।
শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতে জেলা শিক্ষা অফিসার আলমগীর কবীর বলেন, ছাত্র/শিক্ষক/অভিভাবকদের নিকট থেকে প্রাপ্ত মতামতের প্রাধান্য দিতে হবে। শ্রেণি শিক্ষক সকল শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সাথে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগাযোগ রাখতে হবে। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের অভিভাবককে প্রতিদিন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ম্যাসেজসহ স্কুলের সকল নোটিশ জানাতে হবে। পরপর তিন দিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকলে অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। শ্রেণি শিক্ষক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে ঐ ক্লাসের অভিভাবকদের সাথে শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি বিষয়ে মতবিনিময় এবং সাপ্তাহিক মূল্যায়নের ফলাফল জানাতে হবে। মোবাইলে ফোন করে ছুটি নেয়া যাবেনা। রুটিনে নির্ধারিত ক্লাস অন্য শিক্ষকের উপর দায়িত্ব দিয়ে ছুটি অনুমোদন করতে হবে।একেকটি ক্লাসের সার্বিক দায়িত্ব একজন শিক্ষকের উপর প্রদান করতে হবে।
প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সার্বিক কর্মকান্ডের রিপোর্ট কার্ড তৈরি করতে হবে। স্কুল চলাকালীন সময়ে কোন শিক্ষক/শিক্ষিকা স্কুল ক্যাম্পাস ত্যাগ করবে না। বিশেষ প্রয়োজনে স্কুল ত্যাগ করতে হলে মুভমেন্ট রেজিস্টার অনুসরণ করতে হবে। ক্লাসের ঘণ্টা পড়ার পর একজন শিক্ষক সর্বোচ্চ ৫ মিনিটের মধ্যে রুটিন অনুযায়ী পরের ক্লাসে প্রবেশ করবে। শ্রেণীতে পাঠদানে একটি অধ্যায় শেষ হওয়ার পর ওই অধ্যায়ের উপর মূল্যায়ন করতে হবে। এরূপ সমন্বয় রেখে প্রতিদিন কোন না কোন বিষয়ের উপর মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখতে হবে। মাসের শেষে সকল মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করতে হবে। এই পুরস্কার দেয়া হবে সমাবেশে।
এতে অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও অনুপ্রাণিত হবে। বিদ্যালয়ের ফলাফল অনলাইনে প্রকাশ করতে হবে। ইংরেজি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে এবং প্রতিদিন ৫ (পাঁচ) টি নতুন শব্দ ছাত্র-ছাত্রীদের শেখানোর উপর জোর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। প্রধান শিক্ষক বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া স্কুল চলাকালীন সময়ে বাইরে যাবেন না। এতে স্কুলের প্রশাসনিক ও শ্রেণি কার্যক্রম ব্যাহত হয়। শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের বাড়ির কাজ আদায় করার ব্যবস্থা করতে হবে। যারা বাড়ির কাজ করে আসেনি প্রয়োজনে টিফিন পিরিয়ডে বা ছুটির পরে বিষয় শিক্ষকের নিকট পড়া দিয়ে যাবে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। অতিরিক্ত ক্লাসের নামে শিক্ষার্থীর প্রতি অবিচার, স্বজনপ্রীতি করে মূল ক্লাসের প্রতি শিক্ষকদের অনীহা সৃষ্টি করা যাবে না। শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার বৃদ্ধি করতে হবে। যারা দেরি করে স্কুলে আসে, তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। এতে স্কুলের পরিবেশ ভালো হবে এবং স্কুল নিয়ম শৃঙ্খলার আওতায় আসবে। ক্লাস চলাকালীন সময়ে কোন ছাত্র/ছাত্রী ক্লাসের বাইরে ঘোরাঘুরি করতে পারবে না। লেখাপড়ার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ইত্যাদির আয়োজন করতে হবে। স্কাউট, গালর্স গাইড বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ওয়াশ ব্লক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আছে কিনা সেগুলো তদারকি করতে হবে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। রমজানের পরে যেহেতু এস.এস. সি পরীক্ষা, যাদের পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে, সে ক্ষেত্রে রটিন অনুযায়ী এস. এস. সি পরীক্ষার পরে ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রম চালানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। ছুটির দিন ব্যতীত যে দিন এস.এস.সি পরীক্ষা নেই, সেই দিন সকাল ৯টা হতে দুপুর ১টা পর্যন্ত শ্রেণী কার্যক্রম চালানো যায়। শিক্ষকদের যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষকদের ইন হাউজ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতি শাখায় ৫৫ জনের বেশি ভর্তি করা যাবে না। সকল স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় একই সময়ে দিনের কর্মসূচি সমাবেশের মাধ্যমে শুরু হবে এবং ৬ঘন্টা কর্মঘণ্টা শেষ হলে একই সময়ে ছুটি হবে। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছাচারী হিসেবে দেরীতে শুরু এবং আগে ছুটি দিতে পারবে না। প্রতিষ্ঠান প্রধানরা ছুটির আগে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে পারবেন না। ভর্তির ক্ষেত্রে কম্বাইন্ড স্কুলগুলো আগে ছাত্র ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করবেন যাতে পার্শ্ববর্তী গার্লস স্কুলে কোন প্রভাব না পড়ে। শিক্ষার মানোন্নয়নে জেলা শিক্ষা অফিসার আলমগীর কবীর সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।