
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের খোলপেটুয়া নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী নদীনির্ভর জীবনযাত্রা মেলা।
মেলায় শামুক-ঝিনুকের প্রদর্শনী ছিল দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। মাছ ধরার ঐতিহ্যবাহী উপকরণ জাল, খোরা, বালতি, হাড়ি-থালা, ঝিনুকসহ নানা সামগ্রীর প্রদর্শনীতে ফুটে ওঠে নদীনির্ভর জীবিকার নানা অনুসঙ্গ।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর ‘২৫) দিনব্যাপী উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি গ্রাম আয়োজিত এই মেলায় উপকূলীয় সংস্কৃতি, জীবিকা ও প্রকৃতির সম্বিত রুপ ফুটে ওঠে। ছিল খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষের নদীর চরে জন্মানো লবণসহনশীল উদ্ভিদ বাইন, কাঁকড়া, গেওয়া, গড়ান, খলিসা, গোলপাতা ও ধানিগাছের প্রদর্শনীও।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক), গ্রীন কোয়ালিশন, কামালকাটি একতা যুব সংঘ, কদবেল নারী উন্নয়ন সংগঠন ও স্থানীয় জনগোষ্ঠী আয়োজিত এ মেলার প্রবেশমুখেই দর্শনার্থীদর স্বাগত জানায় খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষের মাটি, বালি, কাদা ও লোনা জল ভরা প্রতীকী পাত্র।
স্থানীয় প্রবীণদের মতে, নদীর মাটি শুধু চাষাবাদ নয়, ঘরবাড়ি নির্মাণ, বাঁধ মেরামত ও উপকূলীয় সংস্কৃতিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
প্রবীণ জেলেরা জানান, নাব্যতা সংকট ও লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে মাছের পরিমাণ কমে গেলেও নদীই তাঁদের জীবন-জীবিকার প্রধান ভরসা।
পদ্মপুকুর ইউনিয়ন গ্রীন কোয়ালিশনের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ আশরাফ হোসেন মেলায় সভাপতিত্বে মেলার উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, বারসিক এর সহযোগী আঞ্চলিক সমম্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার, পদ্মপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ইউপি সদস্যা সুক্রী রাণী, গ্রীন কোয়ালিশনের সদস্য বিকাশ কুমার মন্ডল, বারসিক এর কর্মসূচি কর্মকর্তা মফিজুর রহমান, সহযোগী কর্মসূচী কর্মকর্তা মনিকা পাইক, ক্যাম্পেইন এন্ড নেটওয়ার্ক ফ্যাসিলিটটের স.ম ওসমান গনী প্রমুখ।
কামালকাটি একতা যুব সংঘের স্বেচ্ছাসেবক গৌরাঙ্গ মন্ডল বলেন, চরের গাছপালা শুধু প্রকৃতির অংশ নয়, এগুলো উপকূলকে ঝড়-জলোছ্বাস থেকে রক্ষা করে।
তিনি আরও বলেন, নদী দূষণ, নাব্যতা সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনৈর চাপ উপকূল আজ সংকটাপন্ন। নদী রক্ষা করা মানে আমাদের জীবনকে রক্ষা করা।
নওয়াঁবকী ছফিরুনেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অনন্যা মন্ডল বলেন, নদীর চর, গাছপালা আর মাছ ধরার সরঞ্জাম দেখে খুব ভালো লেগেছে। বইয়ের বাইরে হাতে-কলমে শেখার সুযোগ এটি। এখন থেকে নদী রক্ষার সামাজিক উদ্যোগে অংশ নেব।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা বলেন, কামালকাটি গ্রামের এ আয়োজন শুধু প্রদর্শনী নয়, উপকূলের বাস্তব জীবনচিত্রের এক জীবন্ত পাঠশালা। নদী কীভাবে মানুষের জীবনকে ধারণ করে এবং মানুষ কীভাবে নদীর ওপর নির্ভর করে তারই জীবন্ত নিদের্শন এই নদীনির্ভর জীবনযাত্রা মেলা।