রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:১১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
হ্যাচারি পরিচালনায় দক্ষতা বৃদ্ধি ও মানসম্মত পোনা উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জন বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনা শ্রিম্প হ্যাচারি এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সেব এর উদ্যোগে সাতক্ষীরায় মতবিনিময় সভা সাতক্ষীরায় সাংবাদিকদের সাথে নবাগত পুলিশ সুপার মোঃ আরেফিন জুয়েলের মতবিনিময় তালায় আইন সেবিকাদের নিয়ে ওরিয়েন্টেশ অনুষ্ঠিত নানা আয়োজনে সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস উদযাপন ট্রলারসহ সুন্দরবন থেকে ৭ জে লে আ ট ক জমকালো আয়োজনে সাতক্ষীরা নিউ মার্কেট ক্লাবের আত্মপ্রকাশ গৌরবোজ্জ্বল ‘কলারোয়া মুক্ত’ দিবস পালিত  আমার সময়ে যে উন্নয়ন করেছি বিগত ৫৪ বছরেও সে উন্নয়ন হয়নি – কাজী আলাউদ্দিন  ৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস

খালেদা জিয়া: অটলতার আলোকশিখা, ইতিহাসের নীরব সম্রাজ্ঞী

✍️হেলাল উদ্দিন✅
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৯৬ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের রাজনীতিকে যদি এক বিশাল নদী ধরা হয়- যে নদী বহুবার দিক বদলায়, কখনো উত্তাল, কখনো শান্ত- তাহলে সেই নদীর গতিপথে সবচেয়ে দূর পর্যন্ত প্রতিফলন ফেলেছেন যেসব ব্যক্তিত্ব, তাদের একজন নিঃসন্দেহে খালেদা জিয়া। তিনি রাজনীতির কাঠামোয় জন্ম নেননি, তিনি জন্ম নিয়েছেন এক দুর্যোগের ভেতর থেকে- এ কারণেই তাঁর দৃঢ়তা ছিল স্বাভাবিক নয়, ছিল অনিবার্য।

১. ইতিহাস তাঁকে ডাকছিল- আর তিনি সাড়া দিয়েছিলেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক মঞ্চ তখন অস্থির, অস্পষ্ট, অনিশ্চিত। এমন এক মুহূর্তে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন- যেন ইতিহাস নিজেই তাঁকে আহ্বান করছে। তিনি রাজনীতির পথে পা রেখেছিলেন কোনো কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে নয়। বরং তিনি এসেছিলেন এক ধরনের দায়বোধ থেকে- জাতির প্রতি, মানুষের প্রতি, এবং তাঁর ব্যক্তিগত ক্ষতির ভেতর জন্ম নেওয়া দায়িত্বের প্রতি। তাই তাঁর নেতৃত্ব জন্মগত নয়- জন্মানো নেতৃত্ব। জন্ম নেওয়া বাস্তবতার ক্রুশিবাট্টিতে।

২. “আপোষহীনতা”- যা তাঁর পরিচয়ের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে বাংলাদেশের রাজনীতি বহু শব্দ সৃষ্টি করেছে, কিন্তু “আপোষহীন” শব্দটি যেন খালেদা জিয়ার নামের সঙ্গেই সবচেয়ে নিবিড়ভাবে যুক্ত। তাঁর দৃঢ়তা ছিল অচঞ্চল, চাপের সামনে অপরিবর্তিত, অপমানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অপ্রতিরোধ্য। এই দৃঢ়তা তাঁকে কখনো কড়া মনে করিয়েছে, কখনো অনুপ্রেরণা- কিন্তু যা-ই বলা হোক, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে তাঁর শক্ত অবস্থান ছিল এক নতুন মানদণ্ড। তাঁর চোখে ছিল আত্মমর্যাদার ভাষা; তাঁর নীরবতায় ছিল এক দৃঢ় সতর্কতা। তিনি যে ভেতরের শক্তি ধারণ করতেন, তা প্রকাশের জন্য কখনো উচ্চস্বরে কথা বলার প্রয়োজন পড়েনি- কারণ তাঁর নীরবতাই ছিল রাজনৈতিক বাস্তবতাকে কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো বক্তব্য।

৩. রাজনীতিতে নারী উপস্থিতির এক মাইলফলক বাংলাদেশে নারী নেতৃত্বের যে স্বীকৃতি আজ অনেকটাই স্বাভাবিক- তার অন্যতম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন তিনি।

রাজনৈতিক ক্ষমতার কঠিন বলয়ে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এমনভাবে, যা নারী-পুরুষ পার্থক্য মুছে দিয়ে নেতৃত্বের মৌলিক সত্তাকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। তিনি শুধু দেখাননি যে একজন নারী নেতৃত্ব দিতে পারেন- তিনি দেখিয়েছেন যে একজন নারী অসাধারণ নেতৃত্ব দিতে পারেন। এটা তাঁর ব্যক্তিগত অর্জন নয়- এটা জাতির মানসিক মানচিত্রের পরিবর্তন।

৪. প্রতিকূলতা ছিল তাঁর ছায়া- আর তিনি ছায়াকে আলোর পথে নিয়ে গেছেন একজন নেতার জীবনে ব্যক্তিগত বিপর্যয় খুব সাধারণ ঘটনা নয়; কিন্তু তাঁর জীবনে ঝড় এসেছে বারবার- প্রিয়জন হারানোর দুঃখ, পরিবারে দূরত্ব, সন্তান হারানোর শোক, স্বাস্থ্যভঙ্গ, রাজনৈতিক চাপ এবং অব্যাহত সমালোচনা। কিন্তু বিস্ময়কর হলো- এই সবকিছুর পরও তিনি রয়ে গেছেন স্থিতধী, দৃঢ়চেতা, অপরিবর্তিত। অনেক মানুষ প্রতিকূলতায় ভেঙে পড়ে, অনেক নেতা প্রতিকূলতায় বদলে যায়- কিন্তু খালেদা জিয়া প্রতিকূলতাকে রূপান্তর করেছেন সহনশীলতায়, আর সহনশীলতাকে রূপান্তর করেছেন অভিজ্ঞতায়।

৫. দল তাঁর নেতৃত্বে যেভাবে আকার পেল তিনি ছিলেন দলের চেয়ারপারসন- কিন্তু তাঁর ভূমিকা ছিল তার চেয়েও বড়। একটি দলকে সংগঠিত করা, বিপর্যয় থেকে ওঠানো, পরপর একাধিক পর্বে জনগণের আস্থা অর্জন করা- এগুলো তাঁর দীর্ঘদিনের প্রজ্ঞার ফল। রাজনীতিতে ক্যারিশমা অনেকের থাকে, কিন্তু টেকসই নেতৃত্বের ক্ষমতা থাকে অল্প কয়েকজনের হাতে। খালেদা জিয়া সেই অল্প কয়েকজনের একজন। তাঁর দূরদৃষ্টি এবং বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত দলকে জাতীয় পরিসরে বারবার শক্ত অবস্থানে নিয়ে এসেছে।

৬. তাঁর নাম একদিন ইতিহাসের পাতায় নয়- ঐতিহ্যে লেখা হবে তিনি শুধুমাত্র একজন নেতা নন; তিনি এক যুগের চিহ্ন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতাকে গঠন, প্রভাব ও পুনর্গঠনের যে প্রক্রিয়া- তার কেন্দ্রে ছিল তাঁর উপস্থিতি। তিনি দেশকে শাসন করেছেন, বিরোধী রাজনীতিকে সংগঠিত করেছেন, জাতীয় আলোচনাকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু তার চেয়েও বড় অর্জন হলো- তিনি লক্ষ-কোটি মানুষের হৃদয়ে সাহস, দৃঢ়তা এবং স্থিতির প্রতীক হয়ে উঠেছেন। যেদিন তিনি রাজনীতির মঞ্চ থেকে চূড়ান্তভাবে সরে যাবেন, সেই দিনটা শুধু একটি ব্যক্তির বিদায় হবে না- সেদিন শেষ হবে এক ঐতিহাসিক অধ্যায়, যার আলো নিভে গেলেও যার দীপ্তি থাকবে দীর্ঘস্থায়ী।

শেষ কথা খালেদা জিয়া হলেন এক নীরব শক্তি, যার উপস্থিতি কথা বলে না- তবে ইতিহাসকে রূপ দেয়। তিনি দেখিয়েছেন কেমন করে প্রতিকূলতার ঝড় পেরিয়ে এক নারী পুরো জাতিকে নেতৃত্ব দিতে পারে। আর এই কারণেই তিনি শুধু একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন; তিনি একটি প্রতীক- দৃঢ়তার প্রতীক, সাহসের প্রতীক, অমিত আলোয় দীপ্ত নক্ষত্রের প্রতীক।

লেখক: লায়ন ড. এ জেড এম মাইনুল ইসলাম পলাশ, সাংবাদিক কলামিস্ট ও মানবাধিকার কর্মী

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2020 All rights reserved
Design by: SHAMIR IT
themesba-lates1749691102
error: Content is protected !!