সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:২৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কাশিয়ানী উপজেলার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র সরেজমিন পরিদর্শনে নবাগত ডিসি আরিফ -উজ-জামান শ্যামনগরের গাবুরাতে অভিযোজন কৃষি চর্চা বাড়াতে কৃষি ফসল ও সবজি চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেবহাটায় প্রেসক্লাবের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নকে মডেল ইউনিয়ন উপহার দেবো: কাজী আলাউদ্দীন দ্বীন প্রতিষ্ঠায় নারীদেরকে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করতে হবে- মুহাঃ আব্দুল খালেক মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা মু ক্তি প ণে র দা বি তে সুন্দরবনের ৭ জে লে কে অ প হ র ণ তালায় অর্ধবার্ষিক লবি সভা অনুষ্ঠিত হ্যাচারি পরিচালনায় দক্ষতা বৃদ্ধি ও মানসম্মত পোনা উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জন বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনা শ্রিম্প হ্যাচারি এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সেব এর উদ্যোগে সাতক্ষীরায় মতবিনিময় সভা সাতক্ষীরায় সাংবাদিকদের সাথে নবাগত পুলিশ সুপার মোঃ আরেফিন জুয়েলের মতবিনিময়

মুসলিমা খাতুন: গৃহিণী থেকে স্বাবলম্বী মাছচাষি

✍️সেলিম হায়দার📝তালা প্রতিবেদক✅
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৯৮ বার পড়া হয়েছে

খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মাদারবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মুসলিমা খাতুন (৩৫)। এক সময় সংসারের আর্থিক সংকটে তাকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হতো। তার স্বামী ছিলেন একজন প্রান্তিক জেলে ও সনাতনী পদ্ধতির ক্ষুদ্র মাছচাষি। নিয়মিত আয় না থাকায় পরিবার চালানো ছিল খুবই কঠিন। স্বামীর অনুপস্থিতিতে অনেক সময় মুসলিমাকেই ঘের দেখাশোনা করতে হতো। কিন্তু সঠিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতি না জানার কারণে উৎপাদন ও লাভ উভয়ই ছিল খুবই সামান্য।

এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে শুরু করে যখন তিনি সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস) কর্তৃক বাস্তবায়িত এবং পিকেএসএফ, ইফাদ ও ড্যানিডা-এর সহযোগিতায় আরএমটিপি প্রকল্পের ‘নিরাপদ মৎস্য ও মৎস্য পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ’ ভ্যালু চেইন উপ-প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি হাতে-কলমে আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে মাছচাষ, ঘের ব্যবস্থাপনা, সঠিক খাদ্য প্রয়োগ, পানি-মাটি পরীক্ষা, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ লাভ করেন।

প্রশিক্ষণ শেষে মুসলিমা খাতুন তার ৬৬ শতকের ঘেরে রুই, কাতলা, গলদা ও বাগদা চিংড়ি চাষ শুরু করেন। তিনি প্রকল্পের মৎস্য সেবা ও পরামর্শ কেন্দ্র থেকে এ্যারেটর স্থাপন, ব্লু নেট ব্যবহার, নিয়মিত চুন প্রয়োগ এবং ঘেরের পানি-মাটির পরীক্ষার সুবিধা নেন। এসব প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও নিয়মিত মনিটরিংয়ের ফলে তার ঘেরে রোগবালাই কমে যায় এবং উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। মোট খরচ: প্রায় ১,১৭,০০০ টাকা।

মোট বিক্রয়: প্রায় ৩,৮০,০০০ টাকা। প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় তার আয় ও লাভ উল্লেখযোগ্যভাবেবৃদ্ধি পেয়েছে।

মুসলিমা খাতুন বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি, ব্লু নেট ও এ্যারেটর ব্যবহারের ফলেই তার ঘেরের উৎপাদন বেড়েছে। এখন তিনি শুধু নিজেই স্বাবলম্বী হননি, বরং এলাকার অন্যান্য মাছচাষিরাও তার সাফল্য দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। সামনে তিনি আরও বড় পরিসরে মাছচাষ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছেন।

স্বল্প শিক্ষিত একজন গৃহিণী থেকে আজ একজন সফল নারী উদ্যোক্তা মুসলিমা খাতুন এখন স্থানীয়ভাবে অনুকরণীয় এক দৃষ্টান্ত।

সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা সাস এর নির্বাহী পরিচালক শেখ ইমান আলীর বলেন,

মুসলিমা খাতুনের গল্পটা দেখলে পরিষ্কার বোঝা যায় সুযোগ, সঠিক দিকনির্দেশনা আর নিজের পরিশ্রম একসাথে কাজ করলে পরিবর্তন হবেই। তিনি শুরু করেছিলেন শূন্য থেকে। পরিবার চালাতে যেখানে কষ্ট হতো, আজ সেখানেই তিনি নিজ ঘেরের আধুনিক ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তি ব্যবহার আর নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে চোখে পড়ার মতো সাফল্য দেখিয়েছেন।

আরএমটিপি প্রকল্পের প্রশিক্ষণ, ব্লু নেট, এ্যারেটর, পানি-মাটির পরীক্ষা—এসব জিনিস তিনি শুধু ব্যবহারই করেননি, নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে প্রতিদিন আরও ভালো করার চেষ্টা করেছেন। এই মনোভাবটাই তাকে এগিয়ে দিয়েছে।

মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, মুসলিমা খাতুনের সাফল্য আমাদের ইউনিয়নের জন্য সত্যিই গর্বের বিষয়। একসময় যিনি সংসারের টানাপোড়েন সামলাতে হিমশিম খেতেন, আজ তিনি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘেরে নিয়মিত উৎপাদন বাড়াচ্ছেন এটা আমাদের উপকূলীয় এলাকার বাস্তব পরিবর্তনেরই উদাহরণ। সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা সাস ও আরএমটিপি প্রকল্পের সহায়তা এখানে বড় ভূমিকা রেখেছে। প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, নিয়মিত পরামর্শ এসব সুবিধা কাজে লাগিয়ে মুসলিমা নিজের ঘেরকে যেমন উন্নত করেছেন, তেমনই আশপাশের মানুষকেও নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছেন।

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2020 All rights reserved
Design by: SHAMIR IT
themesba-lates1749691102
error: Content is protected !!