ক্লান্ত শ্রান্ত আমি যখন বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছি
তখনই মনে পড়লাে আজ মাসের তের তারিখ
গত মাসের বাসা ভাড়া বাকি।
বাসায় গেলেই বাড়িওয়ালা ঠিক কথা শােনাবে।
সকালে মা ফোন করেছিল বাবার ওষুধ ফুরিয়েছে
ছােট বােনটার বিয়ের বয়স পার হওয়ার পথে।
ভালাে পাত্র আর ভালাে পরিমাণের অর্থের
অভাবে বিয়েটা কিছুতেই হচ্ছে না।
মা-বাবা যে ঘরে থাকে তার টিন
কয়েক বছরের পুরনাে, আসছে ঝড় বাদলে
টিকবে কিনা ব্যাপক সন্দেহ।
বড় বােনটার ছেলে হয়েছে, টাকার অভাবে
দেখতে যাওয়া হয় নি, এখুনি না গেলে
বােনটা শ্বশুর শাশুড়ির গালমন্দ খাবে নিশ্চিত।
নিজের স্ত্রী সন্তান বাধ্য হয়ে গ্রামে রেখেছি।
শহরে দুই কামরা ঘর নেয়ার সাধ্য এখনাে হয় নি।
প্রতিবার বাড়ি থেকে আসার সময় স্ত্রীর করুণ চোখ
অশ্রু ছল ছল করে চেয়ে থাকে
আমি অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত।
এসব ভাবতে ভাবতে রাত গভীর হয়
আশেপাশের পরিবেশ নিঃশব্দে ভরে যায়।
আর আমি ভাবতে থাকি, কি হবে বেঁচে থেকে?
এতাে এতাে সমস্যা মিটাবাে কীভাবে?
কী আশায় বাঁচবাে? কী ভাবে ভাগ্য ফিরবে?
রাতের অন্ধকার আশার আলাে চুষে নেয়
সাথে সাথে বাড়ে অসীম হতাশা।
রাস্তার কুকুরগুলাের সাথে ডুকরে
কেঁদে ওঠে মনের ভেতরের কষ্টগুলাে।
অভাব, হতাশা, অবসন্নতা, বিষাদ
একেকটা মৃত্যুদূতের মতাে ঘিরে ধরে।
চারিদিক থেকে কে যেন বলে উঠে,
মরে যা, পালিয়ে যা, হারিয়ে যা…
মাথার দুই পাশের পেশি দপ দপ করে উঠে
দূরে ডেকে ওঠে নিশাচর পাখি।
আর আমি বাঁচার ইচ্ছা আর মরার
আকাঙ্ক্ষার দোটানায় ছটফট করতে থাকি।
রাত শেষ হয়ে আসে, জেগে উঠে ভােরের পাখি
একটু একটু করে রাতের আঁধার আর
মনের ঘাের কাটতে থাকে।
নববধূর মতাে লাল সূর্য সলাজ হাসি দেয়
পুব আকাশে, হালকা বাতাসে অচেনা ফুলের গন্ধ
কী সুন্দর দিনের শুরু! কি মনােরম পরিবেশ!
এই সূর্যোদয় যেন আশার সূর্যোদয়।
একে একে সব নিরাশার আঁধার কেটে যাচ্ছে
রাতের হতাশা রূপান্তরিত হচ্ছে দিনের আশায়
খুব ইচ্ছে করছে বাঁচতে, নতুন উদ্যোমে ভাবতে
আমি পারবাে, আমাকে পারতে হবে।
নতুন একটি দিন দেখার জন্য
এই আমাকে বাঁচতে হবে।
বাঁচতে যে হবেই।
লেখক ও কবি: শেখ মফিজুর রহমান,সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, সাতক্ষীরা।