
নানা আয়োজনে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে গৌরবোজ্জ্বল সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় সাতক্ষীরা জেলা। দিবসটি স্মরণে সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, নীরবতা পালন, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ কর্মসূচি গ্রহণ করে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাতক্ষীরা জেলা ইউনিট।
জেলা ইউনিটের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে অংশ নেন জেলার মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের স্বজনেরা। শোভাযাত্রা শেষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুজ্জামান খোকন, মিজানুর রহমান, কাজী রিয়াজ, অ্যাডভোকেট মোস্তফা নুরুল আলম, জিল্লুর করিম, মইনুল ইসলাম মইন, সন্তোষ কুমার দাস প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিক আহমেদ মোল্লা।
বক্তারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা আজও প্রাপ্য সম্মান ও সেবা থেকে বঞ্চিত হন। সরকারি হাসপাতালে তাঁদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও ওষুধ–চিকিৎসা মেলে না, এমনকি বসার জায়গাও পান না—এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তাঁরা আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় পরও মুক্তিযোদ্ধারা অবহেলার শিকার—এ ক্ষোভও ব্যক্ত করেন বক্তারা।
আলোচনা সভায় আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম সাতক্ষীরার মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনার স্মৃতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২ মার্চ সাতক্ষীরা শহরে পাকিস্তানবিরোধী মিছিলে গুলিতে আবদুর রাজ্জাক নিহত হওয়ার পর জেলায় আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের খরচ জোগাতে মুক্তিযোদ্ধারা ট্রেজারি থেকে অস্ত্র এবং ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে টাকা ও অলংকার সংগ্রহ করেন।
২৭ মে ভোমরা সীমান্তের সম্মুখযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনার দুই শতাধিক সদস্য নিহত এবং তিনজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পরবর্তী গেরিলা অভিযানে শহীদ হন আরও ৩৩ জন। ৩০ নভেম্বর রাতের টাইম বোমা বিস্ফোরণে সাতক্ষীরার পাওয়ার হাউস উড়িয়ে দিলে পাকিস্তানি বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়ে এবং ৬ ডিসেম্বর রাতে তারা বিভিন্ন সেতু উড়িয়ে পালিয়ে যায়।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও সাতক্ষীরার অনেক বধ্যভূমি ও গণকবর সংরক্ষণের উদ্যোগ হয়নি।