“চা ও চুম্বনের আষাঢ়”
আষাঢ়ের বৃষ্টি নামছে নিঃশব্দে,
মোবারকগঞ্জ স্টেশনে ভীষণ একা আমি
দাঁড়িয়ে আছি নিস্তব্ধ মহাকালের মতো,
বৃষ্টির ফোঁটায় দুলছে কিছু মৃত ঘাস,
তোমার খোলা চুলের মতো।চায়ের কাপে ধোঁয়া ওঠে ধীর ছন্দে,
ঠিক যেমন নীল আকাশে মেঘেরা
একটু একটু করে হারিয়ে যায়—
তোমার ঠোঁটের লালচে বাঁক
চায়ের ধোঁয়ার ভেতর কুয়াশার মতো ঝাপসা হয়,
তবু হৃৎপিণ্ডে টুকে থাকে এক চুম্বনের প্রতীক্ষা।তুমি সেদিন হেসে বলেছিলে,
“চা না ঠোঁট—কোনটা বেশি লাল?”
আমি তখন লজ্জায় মাথা নামিয়ে
জবাব খুঁজে ফিরছিলাম বৃষ্টিভেজা রেললাইনে—
এখন বুঝি,
তোমার প্রশ্নটা ছিল একধরনের কবিতা,
যা ঠোঁটের বদলে হৃদয়ে পড়া হয়।আজকের এই আকাশ
নীল হলেও কেমন ফাঁকা লাগে—
তুমি নেই বলে তার রঙেও নেই উত্তাপ,
বাতাসে নেই তোমার চুলের সুগন্ধ,
স্টেশনের প্রতিটি ইট যেন মুখ ফিরিয়ে বসে আছে,
একটা অনুপস্থিতির বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদে।মায়া,
তুমি কি জানো?
তোমার নাম উচ্চারণ করলেই
চায়ের কাপের ধোঁয়া বদলে যায় গন্ধে,
তার ভেতর মিশে যায়
তোমার চুম্বনের আলতা ছোঁয়া।একটা ট্রেন আসে না,
যেমন তুমি আসো না আর কোনো বিকেলে—
কিন্তু সেই প্ল্যাটফর্ম,
সেই বেঞ্চ, সেই চা, সেই আষাঢ়—
সবই ঠিক আগের মতো তোমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে।আমি আর চা খাই না,
চুমুও চাই না,
তোমার অনুপস্থিতির মাঝেও
তোমাকে ছুঁয়ে থাকি প্রতিটি নিঃশ্বাসে,
যেমন হেলাল লিখতেন,
“ভালোবাসা কারো জন্য অপেক্ষা নয়,
ভালোবাসা নিজেই অপেক্ষা হয়ে ওঠে।”আর সুনীলের মত বলতে পারি,
এই বৃষ্টির মাঝে,
যে প্রেমিক কখনো চা আর চুমুর ফারাক বোঝেনি,
সে-ই জানে
তোমার ঠোঁট না ছুঁয়ে প্রেম করা যায়—
কিন্তু ভুলে থাকা যায় না,
একবার মায়া হয়ে যিনি এসেছিলেন আষাঢ়ের দিনে।তুমি আজও আসো না,
আর ট্রেনটাও না।
তবু আমি দাঁড়িয়ে থাকি—
এক কাপ চায়ের ধোঁয়া আর
নীল আকাশের চোখে রেখে দেই
একটি চুম্বনের মত নামহীন অপেক্ষা।মোবারকগঞ্জ
২৫ জুন, ২০২৫