শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ১২:৩২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
সাতক্ষীরায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায অনুষ্ঠিত  তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষে কালিগঞ্জে লিফলেট বিতরণ আশাশুনিতে হিন্দু কলেজ ছাত্রীকে অপহরণ: রাতভর ধর্ষণের পর প্রেমিকের কাছে হস্তান্তর সাতক্ষীরায় জাতীয় পর্যায়ে আন্ত: কলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন খেয়োয়াড়দের সংবর্ধনা খুলনায় তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তালায় প্রস্তুতি সভা তালায় বাল্যবিবাহে নিষেধাজ্ঞা জারি সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লাইনক্রুদের অবস্থান কর্মসূচি পালিত তালার শাহপুর স্কুলের ছোটবন্ধুরা পেলো উপহার গোবিপ্রবি’তে শিক্ষকদের গবেষণায় দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্মশালা গোপালগঞ্জে মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের ভূমিকা শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

জলবায়ু পরিবর্তন ও ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি: পথ ও প্রতিবন্ধকতা-বাহলুল আলম

✍️দেশ টাইমস নিউজ ডেস্ক ✅
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৬ মে, ২০২৫
  • ৫১ বার পড়া হয়েছে

২১শ শতাব্দীর বৈশ্বিক সংকটগুলোর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম প্রধান হুমকি। এর ভয়াবহতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, বিশেষ করে বাংলাদেশসহ নিম্নাঞ্চলীয়, উপকূলবর্তী ও জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে এর প্রভাব সরাসরি জনজীবন, কৃষি, মৎস্য, স্বাস্থ্য এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে দৃশ্যমান। সাইক্লোন, বন্যা, নদীভাঙন, খরা, লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাংলাদেশকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে কেবল নীতিগত পরিকল্পনা নয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল কার্যক্রম এখন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় একটি অপরিহার্য হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

ডিজিটাল কার্যক্রম বলতে বোঝায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT)-নির্ভর এমন সব উদ্যোগ, যা তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, পূর্বাভাস, জনসচেতনতা এবং উপযুক্ত সমাধান প্রদানে সহায়ক। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেল (IPCC) অনুসারে, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু-সংবেদনশীল দেশ, যেখানে বছরে গড়ে প্রায় দুই কোটি মানুষ জলবায়ুজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বাস্তবতায়, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি—অর্থাৎ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার ও দক্ষতা অর্জন—জলবায়ু অভিযোজনের ক্ষেত্রে কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যদি ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা যায়, তবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যেমন কৃষক, জেলে, নারী ও উপকূলীয় বাসিন্দারা মোবাইল ফোন, SMS, অ্যাপ্লিকেশন ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আবহাওয়া পূর্বাভাস, দুর্যোগ সতর্কতা, কৃষি ও মৎস্য সংক্রান্ত তথ্য এবং জলবায়ু সহনশীল প্রযুক্তির বিষয়ে সময়মতো জানতে ও প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার যৌথ উদ্যোগে ইতোমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠেছে। “Access to Information (a2i)” বাংলাদেশের সরকারের একটি ডিজিটাল উদ্ভাবনী কর্মসূচি, যার মাধ্যমে সরকারি সেবাগুলো সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সহজে ও স্বল্প ব্যয়ে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। a2i-এর অধীনে “Krishi Call Center”, “Digital Krishok Diary”, এবং ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির ডিজিটাল মডেলিং সিস্টেম উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।

UNDP-এর সহায়তায় স্থানীয় উদ্ভাবকেরা তৈরি করছে IoT-ভিত্তিক সেচ ব্যবস্থা—যেখানে Internet of Things (IoT) প্রযুক্তির মাধ্যমে জমিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেচ দেওয়া সম্ভব হয়, প্রয়োজন অনুযায়ী এবং পানির অপচয় না ঘটিয়েই। একইভাবে, BRAC-এর ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট অ্যাপস এবং প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগগুলো ইতোমধ্যেই জলবায়ু অভিযোজনের কার্যকর উদাহরণ স্থাপন করেছে। GIS প্রযুক্তির মাধ্যমে ভূ-উপগ্রহ চিত্র ও অন্যান্য ভৌগলিক তথ্য বিশ্লেষণ করে নদীভাঙন, খরা, লবণাক্ততা বৃদ্ধির ধরণ চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে। এতে করে আগাম সতর্কবার্তা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্রস্তুতি নেওয়া সহজ হচ্ছে। তবে সম্ভাবনার পাশাপাশি ডিজিটাল উদ্যোগ বাস্তবায়নে কিছু বাস্তব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

বাংলাদেশে এখনো প্রায় ৪৫% মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে না (BTRC, 2023), এবং গ্রামীণ এলাকায় মাত্র ২৫% পরিবারের স্মার্টফোন আছে। নারীদের প্রযুক্তি ব্যবহারে অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম। এছাড়াও, ডিজিটাল লিটারেসির অভাব, স্থানীয় ভাষায় কনটেন্টের ঘাটতি, এবং তথ্য নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার ঝুঁকি ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির পথে বড় বাধা। অনেক সময় প্রযুক্তিনির্ভর সেবা সাধারণ জনগণের জন্য সহজবোধ্য হয় না, ফলে সেগুলোর প্রভাব সীমিত থেকে যায়। ডিজিটাল কার্যক্রমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ই-শিক্ষা ও ডিজিটাল সচেতনতা। ভিডিও কনটেন্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন, অনলাইন কোর্স ও ই-ভলান্টিয়ার প্রোগ্রামের মাধ্যমে তরুণ সমাজ, নারী এবং সাধারণ জনগণকে জলবায়ু বিষয়ক জ্ঞান ও সচেতনতা প্রদান করা হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব জীবনধারা গড়ে তুলতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা, ডিজিটাল গল্প বলা (digital storytelling), এবং ভার্চুয়াল ক্যাম্পেইন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও যুব সংগঠনগুলো এই উদ্যোগে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। জীবাশ্ব জ্বালানি পরিহার করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে স্মার্ট গ্রিড, স্মার্ট মিটারিং ও IoT প্রযুক্তির ব্যবহারে অগ্রগতি হচ্ছে। সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ব্যবহারের উপর নজরদারি এবং অপচয় রোধে এই প্রযুক্তিগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখছে। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে রিয়েল টাইমে বিদ্যুৎ ব্যবহারের তথ্য দেখা ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে, জলবায়ু অভিযোজনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে কিছু কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি যেমন; গ্রামীণ এলাকায় টেকসই ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, নারী ও তরুণদের মধ্যে ডিজিটাল শিক্ষার প্রসান, স্থানীয় ভাষা ও প্রেক্ষাপটে কনটেন্ট তৈরি, কমিউনিটি-ভিত্তিক ডিজিটাল উদ্ভাবন উৎসাহিত করা, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার সমন্বয়। সর্বদিক বিবেজনা করে বলা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বহুমাত্রিক সংকট মোকাবেলায় প্রযুক্তিনির্ভর, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থানীয়ভাবে প্রাসঙ্গিক ডিজিটাল কার্যক্রমই আগামী দিনে টেকসই অভিযোজন নিশ্চিত করতে পারে।

লেখক পরিচিতি: জলবায়ু পরিবর্তণ জনিত প্রভাবে প্রভাবিত একজন উপকূলীয় বাসিন্দা, জলবায়ু বিশ্লেষক ও উন্নয়ন কর্মী

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের নামাজের সময়সুচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৩:৫৫ পূর্বাহ্ণ
  • ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ
  • ১৬:৩২ অপরাহ্ণ
  • ১৮:৩৭ অপরাহ্ণ
  • ২০:০০ অপরাহ্ণ
  • ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ
©2020 All rights reserved
Design by: SHAMIR IT
themesba-lates1749691102
error: Content is protected !!