সাতক্ষীরার আমের সুনাম ধ্বংস করতে কাজ করছে একটি চক্র! অসাধু ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে মহাপরিকল্পনা
একটি আম গাছে বছরে মাত্র একবার ফল হয়। কিছু মানুষ সারা বছর পরিশ্রম করে গাছ পরিচর্যা করে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এই সময় লাখ লাখ টাকা এই খাতে বিনিয়োগ করে।
যারা বলছেন, কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আম! ফরমালিন দেয়া! সেই আম পাকাতে কী কেমিক্যাল ব্যবহার হচ্ছে? কত জন এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছেন?
আচ্ছা ফরমালিন কী কাজে ব্যবহার হয় সেটি কী ফলে সরাসরি দেয়া যায়?
আমার মনে অনেক প্রশ্ন থাকলেও কোনো উত্তর পাচ্ছি না।
এসব আমে কোন ধরনের রাসায়নিক পাওয়া গেছে? এই আম খেলে মানবদেহে কী ক্ষতি হবে? ধ্বংস করার আগে কোন ল্যাবে এসব আম পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়? এতগুলো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কত সময় লাগে? ধরলাম, বললাম রাসায়নিক মিশ্রিত আম, আর ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ধ্বংস করে দিলাম! কত সহজে হচ্ছে সবকিছু!
আচ্ছা মানুষ কলা বেশি খায় না আম? হাসপাতালের রোগীরা সরকারি অর্থে প্রতিদিন কলা খাচ্ছে। বাগান থেকে কাটা ফুলো কলা কীভাবে এক রাতে পেকে যাচ্ছে? সেই কলা নিয়ে কতবার অভিযান হয়েছে? প্রতিদিন কত হাজার টন কাঁচা কলা রাসায়নিক মিশিয়ে পাকানোর হয় সেই খবর কী কেউ রাখেন? সেখানে কোন অভিযান হয়েছে? এভাবে নস্ট করা হয়েছে?
কৃষি বিভাগ আর প্রশাসন আমাদের সামনে এই রাসায়নিকের মূলা ঝুয়িয়ে দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার টন আম ধ্বংস করছে। এর পেছনে রয়ে বড় আর্থিক বিনিয়োগ, জেলার বাইরের অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি মহা পরিকল্পনায় বাস্তবায়ন হচ্ছে অনেক কিছু। জেলার কিছু অসাধু ব্যবসায়িরাও এর সাথে জড়িত। এসব যারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে তারা বাইরের ব্যপারি। চাষিদের কাছ থেকে কাঁচা আম কিনে তাতে ইথোফিন স্প্রে করে আম পাকাচ্ছে। তারাই এই আম বিভিন্ন জায়গায় টাকা দিয়ে গোপনে জেলার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। যে সব আম ধরা পড়ছে তার অধিকাংশ আম কালিগঞ্জ, শ্যমনগর, আশাশুনি ও দেবহাটা থেকে আসা আম। যে গুলো শহরের উপর দিয়ে যাওয়ার সমায় কিছু জায়গায় মোটা অংকের টাকা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। টাকা না দিলে প্রশসনের কাছে ধরিয়ে দেয়া হয় এসব আম। খোঁজ নিয়ে দেখেন ঢাকা চট্রগ্রামসহ বড় বড় শহরে সাতক্ষীরার পাকা আম বিক্রি হচ্ছে। এসব আম এই প্রক্রিয়ায় চলে যাচ্ছে। আচ্ছা আর একটা বিষয় জেলা প্রশাসন থেকে যে তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে সেই তারিখের পর আম পাড়লে সেই আম কী দিয়ে পাকানো হয়? সেই খোঁজ নিয়েছেন কেউ?
এভাবে চলতে থাকলে আর কয়েক বছর পর সাতক্ষীরার অনেক মানুষ আম চাষ ছেড়ে দেবে। এই যে বছরে কিছু মানুষ আম বিক্রি করে কিছু টাকা আয় করে। কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হয় এটা আপনাদের ভালো লাগে না। আগামীতে আমরা সাতক্ষীরার মানুষ শুধু রাজশাহীর আম কিনে খাবো। যদিও এখনই সেটা খেতে হয়। কারণ সেখানে এত অভিযান করার সাহস নেই। সেখানে প্রতি বছরই বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। আর সাতক্ষীরার আমের সুনাম ধ্বংস করতে বাস্তবায়ন হচ্ছে মহাপরিকল্পনা। না বুঝে সেই ফাঁদে যুক্ত হচ্ছি আমরা সাংবাদিকরাও। আমরা কেউ নিজের জেলার সুনাম ধরে রাখতে চাই না।
লেখক: আহসান রাজীব, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি, এখন টেলিভিশন