বাবাকে নিয়ে সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার মফস্বল বার্তা সম্পাদক মেহেদী আলী সুজয় তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে আবেগময় ষ্ট্যাটাস “দেশ টাইমস” deshtimes24 এর পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
বাবা! তুমিও বাবা, আমিও বাবা। তবে আমি কেমন বাবা? সেটা আমি এখন অনুভব করছি৷ বাবা হিসেবে তোমার কোন তুলনা নেই৷ তোমার ধারে কাছে আমি কিছুই নই। আমার বোধদয়ের এই মাত্রটাই আসল। আমি তোমার সন্তান ও নিজের সন্তানের বাবা হিসেবে এই পরিবার, সমাজ ও পৃথিবীটাকে বোঝার চেষ্টা করি৷
বিশ্ব বাবা দিবস চলে গেল বেশ কিছুদিন হল। তোমাকে অনুভব করতে, তোমাকে স্মরণ করতে মাঝে মধ্যেই ভুলে যাই। মাঝে মাঝে তোমার কথা খুব মনে পড়ে৷ এই দিবসের কল্যাণে ক্ষণিকের জন্য হলেও একটু লেখার মাধ্যমে তোমার জন্য বিশেষ কিছু সময় ব্যয় করতে পেরে ভালোই লাগছে৷ তুমি তো অনন্তকালের আমাদের ছেড়ে অনেক দূরে পাড়ি জমিয়েছো৷ হঠাৎ তোমার কথা মনে হল তাই ভাবছি৷ অনেকদিন হলো তোমার স্নেহের ছোঁয়া নেই। দিবা-রাত্রি তোমার স্নেহমাখা কন্ঠের ডাকাডাকি নেই। সন্তানের মঙ্গলের জন্য বাবার আদর মাখা ধমকটিও আজ অধরা। তোমাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতে পারি না। তোমাকে বিরক্ত করা হয় না। তোমার কাছে বসে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনৈতিক গল্প শোনাও হয় না। তোমার শরীরের উঞ্চতাও অনুভব করতে পারি না। ভাবতেই পারি না। কিসের এতো দূরত্ব? বুঝিনা! জীবন ও জীবিকার তাড়নায় পারিবারিক বন্ধন আজ সময়ের কাঁটাতারে বাধা। ডিজিটাল বন্ধনে সেই রূপ দেওয়ার চেষ্টা করলেও আসলে তা শুধু কল্পনার জগতেই বসবাস।
অদ্যাবধিও তোমার আদর, তোমার ভালোবাসা, তোমার চিন্তা, তোমার হাসি, তোমার কান্না, তোমার আনন্দ, তোমার কষ্ট দেখতে পাই। তোমার পরশেই আজ আমার এই অস্তস্তি। তোমার পরিচয়েই আজ আমার পরিচয়। তোমার পরার্মশেই আজ আমার পথচলা। তোমার সাহসেই আমার সাহস। তোমার সততাই আমার সততা৷ তোমার প্রেরণাই আমার ভবিষ্যত। আমার জীবনের সকল পরীক্ষাতেই আমাকে সাহস জুগিয়েছ। সকল বিপদে-আপদে তোমার ছায়া সবসময়ই আমি পাই। আমার সফলতায় তোমার চোখে আনন্দাশ্রু দেখেছি৷
বাবা, আমার এই ছোট্ট জীবনে তোমাকে অনেক চ্যালেঞ্জ নিতে দেখেছি৷ তোমার সন্তান হওয়ায় এই সৌভাগ্যটা আমার হয়েছে৷ কিন্তু তোমার সেই চ্যালেঞ্জে আমি ব্যর্থ হয়েছি৷ এর দায় আমারই৷ এই চ্যালেঞ্জ দেখার মাধ্যমে নিজের সামনের পথ চলাও আজ সহজ হয়েছে৷ তোমার স্কুল, কলেজ, পেশাগত, সাংসারিক ও রাজনৈতিক জীবনের গল্পগুলো আজো আমাকে সাহস জোগায়। তুমি তোমার জীবনের কতো ঝড়, কত ঝঞ্ঝাটের মধ্যেও কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ় মনোবলের মাধ্যমেই এগিয়েছ। বাবা নামক প্রতিনিয়ত ধৈর্য্য তোমার মাঝে দেখেছি৷ আমি দেখেছি তোমার জীবনের সব ধৈর্য্য৷ আমি দেখেছি নির্লভী এক বাবাকে৷ আমি যে বাবা কোনদিন তার সততাকে বিষর্জন না দিয়ে কিভাবে জীবন যুদ্ধ করে মাথা উচুঁ করে বেঁচে থাকতে হয়৷ তুমিই তো শিখিয়েছ৷ সেটা যেন একটি রূপকথার গল্প। তুমি যেভাবে রাজনীতির মাঠে ও অসহায় মানুষের কল্যানে ছুটে চলতে তা এখনও আমার মনে পড়ে৷ এ যেন আমার দেখা পৃথিবীর সবচয়েে বড় বটগাছ, সাহসের বাতিঘর। সততার পাহাড়৷
বাবা! তোমার তুলনা তুমিই৷ বাবা, দূর হতে তোমার জন্য শুধু আল্লাহর দরবারে দু’হাত তুলে দু’চোখের অশ্রু সংবরণ করে দোয়া করা ছাড়া আর কিছুই আমার কাছে নেই৷ আমি জানি বাবা’রা ক্ষমা করতে পারে৷ তুমি তোমার এ ছেলেকে ক্ষমা করে দিও। তুমিও আমার বাবা, আমিও তোমার বাবা! এটাই আমার শান্তি, এটাই আমার প্রাপ্তি৷ যতদিন আল্লাহ্ তোমাকে এই পৃথিবীতে হায়াত রেখেছিলেন ততদনি আমাদের মাঝে হাসি ও আনন্দেই কেটেছে। আজ তুমি আমাদের মাঝে নেই৷ তাই বাবার আদর ভালবাসা থেকে আমরা সকলে বঞ্চিত৷ যার বাবা নেই সেই বোঝে বাবা হারানোর যন্ত্রণা৷ বাবা তুমি ভাল থেক৷ আমিন!!