সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালি ইউনিয়নের গাড়াখালিতে রাস্তার জন্য দ্বিতীয়বার জমি ছেড়ে দিতে রাজী না হওয়ায় অন্তঃস্বত্বা খুকুমনি জেয়ার্দারসহ সাতজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই গৃহবধুর গর্ভস্ত সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি ‘২৫) বিকেলে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অধিক রক্তক্ষরণের একপর্যায়ে ওই গৃহবধুর গর্ভপাত হয়। এরপরও রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় বৃহষ্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি ‘২৫) সকাল পৌনে ১১টার দিকে ওই গৃহবধুর জরায়ু থেকে অবশিষ্ঠ ফুল (প্লাসেন্টা) অপসারণ করা হয়েছে।
অন্তঃস্বত্বা গৃহবধুর নাম খুকুমনি জোয়ার্দার (২৫)। তিনি শ্যামনগর উপজেলার কৈখালি ইউনিয়নের গাড়াখালি গ্রামের কৃষ্ণপদ জোয়ার্দারের স্ত্রী।
এদিকে ১০ জনের বিরুদ্ধে হামলাকারিদের দায়ের করা মামলায় রবীন্দ্রনাথ গাইন, রণজিৎ বর্মণ. রামপদ বর্মণ, কৃষ্ণপদ জোয়ার্দ্দার ও পলাশ জোয়ার্দার বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি ‘২৫) আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ তারিকুল ইসলাম দেশ টাইমসকে জানান, গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রতিপক্ষের হামলায় জখম খুকুমনি জোয়ার্দার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বুধবার দুপুরে রক্তক্ষরণ শুরু হলে তার সিটি স্ক্যান করানো হয়। এ সময় তার গর্ভে আট সপ্তাহের ভ্রুণ ছিল মর্মে প্রতীয়মান হয়। একপর্যায়ে বিকেলে তার গর্ভপাত (গর্ভস্ত ভ্রন অপসারণ) ঘটে। এরপরও রক্ষক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় তাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে জানা যায় যে, তার জরায়ুতে ফুল (প্লাসেন্টা) রয়ে গেছে।
আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাঃ ফতেমা ইদ্রিস ইভা দেশ টাইমসকে জানান, বুধবার সকাল পৌনে ১১টায় খুকু মনির (ডিএনসি) শরীর থেকে ফুল অপসারন করা হয়েছে।
শ্যামনগর থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সজীব আহম্মেদ দেশ টাইমসকে জানান, শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারের মাধ্যমে খুকুমনির গর্ভস্ত ভ্রুন নষ্ট হওয়ার খবর পেয়ে তিনি ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসপাতালে যেয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। ডাক্তারি সনদের জন্য বুধবার হাসপাতালে আবেদন করা হয়েছে। ডাক্তারি সনদ পেলে ভ্রুন হত্যা জনিত ধারা সংযোজনের জন্য আদালতে আবেদন জানানো হবে। জামিলা খাতুনের দায়েরকৃত মামলায় পাঁচজন বুধবার আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
প্রসঙ্গত, শ্যামনগর উপজেলার কৈখালি ইউনিয়নের গাড়াখালি গ্রামের ফজলু মোড়ল, বাবলু মোড়ল, জিয়াদ মোড়ল ও নৈকাটি গ্রামের হাফিজুর মোড়লসহ কয়েকজন গাড়াখালি গ্রামের বিশ্বজিৎ জোয়ার্দার ও তান ভাইদের গাড়াখালি মৌজার জেএল-৬৮ ও হাল ২৮ দাগে তাদের ১৭ শতক জমির মধ্যে রাস্তার জন্য কিছু জমি ছেড়ে দিতে বলে। কোন প্রকার টাকা পয়সা ছাড়া তারা কিছু জমি ছেড়ে দেন বিশ্বজিৎ জোয়ার্দার। এরপরও গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার পর ফজলু মোড়ল ও তার সহযোগীরা আরো বেশি জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিম্বজিৎ জোয়ার্দারদের হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে তারা ওই জমিতে বোরো ধান লাগানোর সময় ফজলু মোড়ল, বাবলু মোড়ল, জিয়াদ মোড়ল ও নৈকাটি গ্রামের হাফিজুর মোড়ল, আশরাফুল গাজী, এন্তাজ গাজী, হযরত আলী গাজী, দাউদ আলী গাজী, হামিদ মোল্লা ও আব্দুল বারীসহ ২৫/৩০ জন বিশ্বজিৎ জোয়ার্দার, সুব্রত গায়েন, প্রফুল্ল জোয়ার্দার কৃষ্ণ জোয়ারর্দার, কৃষ্ণ জোয়ার্দরের স্ত্রী খুকু মনি, পলাশ জোয়ার্দার পথচারি নূর হোসেনসহ ১০জনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। এদের মধ্যে প্রথমাক্ত সাতজনকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সুব্রত গায়েনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বজিৎ, খুকুমনিসহ তিনজন শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অভিযোগ, রেকডীয় জমি দ্বিতীয়বার রাস্তার জন্য ছেড়ে দিতে রাজী না হওয়ায় বিশ্বজিৎ জোয়ার্দার ও তার পরিবারের সাত সদস্যের উপর হামলা চালানো হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ি হামলাকারিদের পক্ষে বারী গাজী ও আবু দাউদ গাজী নিজেদের শরীরে কেটে ছিঁড়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে মামলার খবর পেলে তারা দুইজন গ্রেপ্তার এড়াতে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। অথচ ৯ ফেব্রুয়ারি পুলিশ হামলাকারি বাবলু মোড়লের স্ত্রী ও আব্দুল বারী গাজীর মেয়ে জামিলা খাতুনের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা রেকর্ড করেছে। শুধু তাই নয়, পুলিশ তাদের মামলা রেকর্ডের তথ্য বিবরণীতে কৈখালী ইউনিয়নের স্থলে রমজাননগর ইউনিয়ন, ঘটনাস্থল গাড়াখালির পরিবর্তে নিদয়াসহ বিভিন্ন ভুল তথ্য উল্লেখ করেছে। পাল্টা মিথ্যা মামলায় তাদের (বিশ্বজিৎ) সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জখম হওয়া ৬ জনসহ ১০ জনকে আসামী শ্রেণীভুক্ত করা হয়।