
মারপিটের অভিযোগের তদন্তে যেয়ে এক ইউপি চেয়ারম্যানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর '২৪) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর কর্মকারপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ক্ষুব্ধ চেয়ারম্যান সমর্থকরা সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাঁশতলা বাজারে যেয়ে ওই হামলাকারিকে হাতুড়ি পেটা করে জখম করে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতের নাম মোঃ পলাশ। তিনি বিষ্ণুপুর গ্রামের মাষ্টার সামছুর রহমানের ছেলে।
বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য লায়লী খাতুন জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর বিষ্ণুপুর কর্মকারপাড়ায় বসবাসরত সামছুর মাষ্টারের ছেলে বিএনপি কর্মী পলাশ ও তার স্ত্রী শারমিন সুলতানা আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাদের বাড়িতে ইট পাটকেল ছোঁড়ার অভিযোগ এনে প্রতিবেশী তপন কর্মকারের স্ত্রী শেফালী, উত্তম কর্মকার ও মানিক কর্মকারের স্ত্রীকে মারধর করে। মারধরের প্রতিবাদ করায় একই পাড়ার ভূপেন কর্মকারের ছেলে সদানন্দ ওরফে পঁচা কর্মকারকে হুমকি দেয় তারা। বিষয়টি নিয়ে তিনি কয়েকবার শালিসী বৈঠক করেন। এরপরও ওই পরিবারগুলোর উপর নানাভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিলো পলাশ ও তার স্ত্রী শারমিন সুলতানা। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (৩০ ডিসেম্বর '২৪) রাত ৯টার দিকে বাড়িতে যেয়ে সদানন্দ কর্মকারকে মারপিট করে পলাশ দম্পতি। বিষয়টি তাৎক্ষনিক বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপি’র একাংশের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম ও ফতেপুর গ্রামের জামায়াত নেতা মোমিনুর রহমানকে অবহিত করেন সদানন্দ কর্মকার। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর '২৪) সকাল ৯টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম তাকেসহ ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান, গ্রাম পুলিশ আব্দুল্লাহ, নীলকণ্ঠপুর গ্রামের সমছের সরদারের ছেলে ইদ্রিস আলী, কাশেম মোড়লের ছেলে মিলনকে নিয়ে কর্মকারপাড়া তেঁতুলতলায় আসেন। এ সময় চেয়ারম্যান গ্রামপুলিশ আব্দুল্লাহ এর মাধ্যমে পলাশকে ডেকে আনেন। পলাশ সেখানে চলে আসার পর চেয়ারম্যান ও তাকে উদ্দেশ্য করে আপত্তিকর কথা বলতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করার একপর্যায়ে রাস্তার পাশের ঘেরার বাঁশের চটা ভেঙে ইদ্রিসকে মারতে যায়। ইদ্রিসকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে চটার আঘাতটি চেয়ারম্যানের ডান হাতে লেগে ফোলা জখম হয়। রাস্তার পাশের জিওলি গাছের ডাল ভেঙে পলাশ আবারো ইদ্রিসকে মারতে গেলে তার খলিলুর মেম্বরের পিঠে লাগে। একপর্যায়ে পলাশ সেখান থেকে চলে যায়। চেয়ারম্যানসহ তারা ইউনিয়ন পরিষদে ফিরে যান। চেয়ারম্যানের উপর হামলার বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান সমর্থকরা সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জামাত নেতা ওমর ফারুকের দোকানের সামনে বসে মামা বন্দকাটি গ্রামের মাহাবুবর রহমান মুকুলের সঙ্গে ভাগ্নে পলাশকে কথা বলার সময় পলাশকে মারপিট করা হয় মর্মে তারা জানতে পারেন। পরে সবুরের বাড়িতে পলাশ অবস্থানকরাকালিন চেয়ারম্যানের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শী বাঁশতলা বাজারের মোশারফ হোসেন, আব্দুর রহমানসহ কয়েকজন জানান, চেয়ারম্যান সমর্থকরা মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জামায়াত নেতা ওমর ফারুখের দোকানের সামনে পলাশকে হাতুড়িপেটা করে ইদ্রিস ও মিলন। তাকে বাঁচাতে যেয়ে আহত হন ওমর ফারুক। এ সময় ওমর ফারুকের ভাই হাফিজুর রহমান মারপিটের ছবি ভিডিও করতে গেলে তাকেও হুমকি দেয় চেয়ারম্যান সমর্থকরা। একপর্যায়ে ওমর ফারুক পলাশকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। দুপুর একটার দিকে বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও তার পরিষদের কয়েকজন সদস্য বাঁশতলা বাজারে এসে সকলতে শান্ত থাকতে বলে পলাশকে পুলিশে সোপর্দ করার কথা বলে পার্শ্ববর্তী বিএনপি’র আঞ্চলিক অফিসে এসে বসেন। পরে পুলিশ আসার পর চেয়ারম্যান আরেক দফায় সকলকে শান্ত থাকার কথা বলেন। তবে পলাশকে পথিমধ্যে কেড়ে নিয়ে নতুন করে হামলার ভয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার না করেই হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে তিনদিনব্যাপি ব্যাটমিন্টন প্রতিযোগিতার চুড়ান্ত প্রতিযোগিতা উপলক্ষে কালেশনে থাকা ব্যবসায়িরা সংগঠিত হয়ে বিষ্ণুপুরের ঘটনা বাঁশতলায় ঘটানো যাবে না বলে সোচ্চার হওয়ায় চেয়ারম্যান সমর্থকরা চলে যাওয়ার পর পলাশকে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এ ব্যাপারে সদানন্দ কর্মকারের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে চাইলে এক নারী নিজেকে তার স্ত্রী দাবি করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান দেখছেন।
বাঁশতলা বাজার ব্যবসায়ি সমিতির সাধারণ সম্পাদক রজব আলী বাবু জানান, ওমর ফারুখের দোকানে পলাশকে মারপিট করা হয়েছে খবর পেয়ে তিনিসহ কয়েকজন ব্যবসায়ি সেখানে যান। এরপর চেয়ারম্যান সমর্থকরা চলে যায় দুপুর দুটোর দিকে।
কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন শ্যামনগর প্রমিজ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের ম্যানেজার ও বিষ্ণুপুর কর্মকারপাড়ার মোঃ পলাশের ০১৭০৭-৫২৮৮৯১ নং মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
বিষ্ণুপুর ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা খলিলুর রহমান বলেন, তার উপস্থিতিতে চেয়ারম্যানের উপর হামলা করেছে সংখ্যালঘু নির্যাতনকারি পলাশ।
দক্ষিণশ্রীপুর ইউনিয়নের জামায়াত নেতা ওমর ফারুকের সঙ্গে তার ০১৭৮৮৭৩৪৯৩১ নং মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, পলাশ ও তার স্ত্রী স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর বারবার মারধর করে থাকেন। ঘটনা জানতে গেলে তার উপর হামলা করেছে পলাশ। তবে এলাকাবাসী খবর পয়ে বাঁশতলা বাজারে পলাশকে মারপিট করেছে জানতে পেরে তিনি বাজারে যেয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে দেন।
কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হাফিজুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, কোন পক্ষই এ নিয়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ করেনি।